আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা-ছুরির বাজারে বেড়েছে ভিড়

  • কামারপল্লিতে ঈদের আগেই ঈদ
  • হাতুড়ি পেটানোর টুংটুং শব্দে মুখর কামারপল্লিগুলো
  • সরঞ্জামাদির দাম গত বছরের তুলনায় বেশি
সরদার আনিছ
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা-ছুরির বাজারে বেড়েছে ভিড়

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দা-বঁটি এবং ছুরি-চাপাতির বাজার জমে উঠেছে। কামারের দোকানে ব্যস্ততা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বেচাকেনাও। বিক্রেতারা বলছেন, সারা বছরের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে, সামনে বিক্রি আরো বাড়বে। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষের দাবি, গত বছরের তুলনায় এবার এই সরঞ্জামাদির দাম একটু বেশি।

বিজ্ঞাপন

আনোয়ার, সেলিম ও আল-আমিন কর্মকারসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় এসব উপকরণ। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, তবে দাম বেশি। কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম কিছুটা কম। এ ছাড়া অ্যাঙ্গেল, ব্ল্যাকবার, রড, স্টিং, রেললাইনের লোহা, গাড়ির পাত— এগুলো দিয়েও দা, ছুরি ও বঁটি তৈরি করা হয়।

মানভেদে পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, দা সাড়ে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বঁটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অন্তত ২৫টির মতো কামারের দোকান রয়েছে। সরেজমিন দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু জবাই ও গোস্ত কাটাকুটির কাজে ব্যবহৃত ছোট-বড় আকারের চাপাতি, ছুরি, দা ও বঁটির পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। দোকানগুলোয় বেশ ভিড়ও দেখা গেছে।

৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সেলিম। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে কোরবানির পশু ও এসব আনুষঙ্গিক জিনিস সাধারণত ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকে শুরু হয়। ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। তবে সামনে বিক্রি আরো বাড়বে। সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি।

আল-আমিন নামে এক দোকানি বলেন, সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে বিক্রি বেড়েছে। সামনে আরো বাড়বে। তার মতে, মানভেদে এ পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, বর্তমানে এ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বেড়েছে। অনেকেই এ ব্যবসায় আসছেন, যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তারা বাজারকে কিছুটা কলুষিত করে তুলেছেন। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।

কোরবানি বা ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এই ঈদে কম-বেশি অনেকেই পশু কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানির পর গোস্ত কাটাকুটির জন্য প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরির। অনেকেই এই অতিরিক্ত দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরি যত্ন করে রেখে দেন। কোরবানি এলেই সেগুলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে থাকেন।

অনেকদিন রেখে দেওয়ার কারণে মরিচা পড়ে সেগুলোর ধার কমে যায়। তাই এগুলোকে ধার দেওয়ার জন্য অনেকেই কাছাকাছি কামারের দোকানে ভিড় করছেন। এ সময় ফেরি করে অনেক ফেরিওয়ালা দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরি ধার দিয়ে থাকেন। পাড়া-মহল্লায় ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক শুনে তাদের কাছ থেকেও ধার দিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এগুলো ধার দেওয়ার জন্য টাকার পরিমাণও বাড়ছে।

মুসলমানদের আত্মত্যাগের অনন্য এক ইবাদত পবিত্র ঈদুল আজহা। এ সময় পশুর পাশাপাশি চাহিদা থাকে দা, ছুরি, বঁটি, চাকু, চাপাতি, কুড়ালসহ কোরবানির পশুর গোস্ত কাটার লোহার তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জামের। এ বছরও এসব সরঞ্জামের চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে পুরান ঢাকার চকবাজার, মিটফোর্ড, কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এবং কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কামারপল্লিতে। দম ফেলার যেন সময় নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের।

কারওয়ান বাজারের কামারশালাগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, হাপরের টানে কয়লার চুলায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। জ্বলে ওঠা আগুনের ফুলকিতে লোহাও যেন ধারণ করছে সূর্যবর্ণ। দগদগে গরম লোহায় দিনরাত হাতুড়ি পেটানোর টুংটুং শব্দে মুখর কামারপল্লিগুলো। শহর থেকে শুরু করে গ্রামপর্যায়ে কামারপল্লি এখন এই টুংটুং শব্দে মুখর।

রাজশাহীর বছিরাবাদ আলিম মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা ইয়াহহিয়া বলেন, কোরবানির পশু জবাই ও গোস্ত প্রক্রিয়াজাত করতে লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। এজন্যই ঈদুল আজহায় কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টিসিবির মাধ্যমে চিনি বিক্রি চলমান থাকবে: শিল্প উপদেষ্টা

স্বৈরাচার দেশে জুলুমতন্ত্র কায়েম করে সবকিছু লুটেপুটে নিয়েছে: জাহিদুল ইসলাম

৩০০ কোটি টাকা বাজেটে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন ভারতে

তালাকের পর আবার বিয়ে, যে ব্যাখ্যা দিলেন আবু ত্বহার স্ত্রী সাবিকুন নাহার

আমিরুলের হ্যাটট্রিকে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাল বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন