আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সাহায্য করেছিল বলে দাবি করে, সেই ভারত বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ বার বার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে আর কেউ কোনো দিন পদানত করতে পারবে না।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বারাকা ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পঁচাত্তরে জয়ী হয়েছে, নব্বই এবং চব্বিশে জয়ী হয়েছি আমরা। ভারত যত বড় দেশই হোক না কেন, তাদের বুঝা উচিত বাংলাদেশের ১৮ কোটি লড়াকু জনগোষ্ঠীকে তারা পরাজিত করতে পারবে না।
ইনসাফ বারাকা হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম ফখরুল ইসলাম।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বীর ছিলেন, দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছেন। শুধু বিজয় দিবস নয়, আমাদের জাতির জীবনে যে দিবসগুলো গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো আমাদের স্মরণ রাখা উচিত। এ অঞ্চলের বাঙালি মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১৯৪৭ সাল, কারণ সেই সময়ই প্রথম বাঙালি মুসলমানের জন্য স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম আমরা। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের ছাব্বিশ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস গুরুত্বপূর্ণ দিন। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে চব্বিশের জুলাই বিপ্লব। এই দিনগুলো একটা জাতির জন্য গর্বের দিন, স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার দিন।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শান্তর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শান্তর বাবা একজন মুদি দোকানদার। এই ছেলেগুলোকে দেখলে আমার মনটা ভাল হয়ে যায়। এরাই আমাদের শক্তি। ভৌগলিকভাবে আমরা একটা ক্ষুদ্র দেশ, কিন্তু আমাদের শক্তি ১৮ কোটি মানুষ। এর মধ্যে শান্তর মতো ছেলেরা আগামীর ভবিষ্যত নির্মাণ করবে। মাঝেমধ্যে দেখি আমাদের রাজনীতিবিদরা, যারা তথাকথিত এলিট সমাজ হিসেবে পরিচিত, তারা মানুষের অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেন। গরিবের সন্তান হলে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। তারা নিজেদের অতীত ভুলে যান। কিন্তু যারা বলেন, তাদের অধিকাংশই লুটপাট করে বিত্তবান হয়েছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বোঝা এই দুর্নীতিপরায়ণ, লুটপাট করা বিত্তবান শ্রেণি।
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, জুলাই বিপ্লবে ক্লাস টেনে পড়া কিশোর শহীদ আনাস নতুন করে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে বলে মায়ের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এরা যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের কেউ কোনোদিন ক্ষতি করতে পারবে না। হাদি আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে। হাদি যদি নাও থাকে তার স্মৃতি বাংলাদেশের জন্য এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। হাদি যে অবস্থানে পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার পক্ষে তা সম্ভব কিনা জানি না। কারণ, হাদির জন্য প্রতিটি পিতা, ভাই, বোন, হৃদয় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছেন, যে এরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আমি আনন্দিত যে, ইনসাফ বারাকা হাসপাতাল বিজয়ের দিনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছ। এটা অসাধারণ কাজ। আমি আশা করব, তাদের এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, আমাদেরকে মানবসম্পদ গড়তে হবে। যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যতীত সম্ভব নয়। কাজেই আমাদের এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়তে হবে, যাতে হাদিদের দেশের বাইরে পাঠাতে না হয়। মানুষের এমন চাওয়া যেন না হয়, যেমনটা হাদির পরিবারের মনে হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনো এমন অবস্থায় যায়নি, যেটার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারে রোগীদের বিদেশে পাঠানোর দরকার নাই। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।
বৃত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের বৃত্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা পাবে তাদের মধ্য থেকেই একেকজন শান্ত তৈরি হবে। এগুলো আমাদের অনুপ্রাণিত করে, এগুলোই আমাদের শক্তি। যেদিন আমরা এগুলো অর্জন করতে পারব, একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে পারব, যে বাংলাদেশে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস করবে না, সেদিনই মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আবু সাঈদ, আনাসরা জীবন দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব এগুলো বহন করা।
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে মতিউর রহমান বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস অন্যবারের চেয়ে আলাদা। মুক্তিযুদ্ধের যে চাওয়া ছিল সেটিকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের চেতনা বুকে নিয়ে দেশ গঠনে সবাইতে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় অন্যান্যেরর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বারাকা ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আফজালুল করিম, এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলতাফ হোসেন, ডা. নাজনীন কবীর প্রমুখ।

