হাওর রক্ষায় পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৫০

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাওরে বাঁধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা ও নীতিমালা প্রণয়নসহ চারটি প্রধান মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউর) শফিকুল কবির মিলনায়তনে হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, হাওর মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। মহাপরিকল্পনাটা হালনাগাদ করা হয়েছে। “হাওর এলাকার মানুষের মতামতটা এখানে প্রতিফলিত হবে এবং হাওরগুলোর সীমানা চিহ্নিত করার একটা বিধান রাখা হবে। হাওরে কখন বাঁধ নির্মাণ করা হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারভোগী নির্ধারণ করা হবে, আর কাদেরকে বাঁধ নির্মাণের কাজে যোগ করানো হবে- সে সংক্রান্ত নির্দেশিকাও সংশোধন করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা। সেখানে আমরা বলে দেব, পর্যটকরা কী করতে পারবেন, কী পারবেন না। এগুলোর ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্ক হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটিকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা হাওর অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে ‘ভাসমান হাসপাতাল’ চালুর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। পাশাপাশি হাওরের মাছের উৎপাদন ও আহরণের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেন। এছাড়াও কালনার হাওর, খরচার হাওর ও কালিয়াকোটা হাওরসহ পাঁচ হাওরে গাছ লাগানোর পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় হাওড় অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

‘হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে ঢাকাস্থ নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম এ সেমিনার আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের অর্থ সম্পাদক, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মুহাম্মদ মোফাজ্জল। সেমিনাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী খান।

সংগঠনের সভাপতি রফিক মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের সাবেক পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার মোশতাক আহমেদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মাহবুব হাসান শাহীন, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা খানম, বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসাইন প্রমুখ।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, আগাম বন্যা বা অন্যান্য কারণে হাওরের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হলে তার তীব্র নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ে। তাই জাতীয় সম্পদ হাওরকে রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

তারা বলেন, বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হাওরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। তার প্রভাব চালের বাজারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পড়ে। তাই যে জনগোষ্ঠী আমাদের নাগরিক জীবন ও অর্থনীতিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা তাদের জীবনের নাজুক অবস্থা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় প্রতি বছর তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ মোফাজ্জল বলেন, হাওর এলাকার জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপুষ্টিতে ভোগে। রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সেবা তাদের জন্য দুর্গত। জল যার জলা হবে ভার বলা হলেও সম্পদ এখনও ক্ষমতা ও বৃত্তবন্দি। অন্যদিকে হাওরের জীববৈচিত্র সংকটাপন্ন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জীববৈচিত্র রক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যতটা প্রয়োজন তা পরিলক্ষিত হয়নি।

জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব ও অন্যান্য সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ব্যর্থ হলে তা হাওর অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে সংকটপূর্ণ করার পাশাপাশি আমাদের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত