তিনঘণ্টা পর শাহবাগের রাস্তা ছাড়লেও যমুনা অভিমুখে লংমার্চ কাল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৩২

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে প্রায় তিন ঘণ্টা ব্লকেড করে রাখার পর রাজধানীর শাহবাগের রাস্তা ছেড়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেই সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার যমুনা অভিমুখে লংমার্চ নতুন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চতুর্থ দিনের মত অবস্থান কর্মসূচি পালন করার এক পর্যায়ে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা বুধবার দুপুর ২টা দিকে শাহবাগ মোড় ব্লকেড দেন। বিকাল ৫টায় তারা শাহবাগ থেকে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন।

শাহাবাগের ব্লকেডে ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ তথা ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

পরে বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে মিছিল নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যান। এর আগে ২টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় চারদিকের রান্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় চারপাশের রাস্তায় গন্তব্যে যেতে না পেরে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন। আবার অনেককেই বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটেই গন্তব্য যেতে দেখা যায়।

বিকাল ৪টার দিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি শাহাবাগে শিক্ষকদের ব্লকেড সমাবেশে গিয়ে সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে সমাঝেতার লক্ষ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিলে সমবেত শিক্ষকরা ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন । এতে অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে যান জোনায়েদ সাকি।

এর কিছুক্ষণ পরেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু. মু’তাসিম বিল্লাহ শাহেদী শাহাবাগে শিক্ষকদের সমাবেশে তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

এর আগে চতুর্থদিনের মতো বুধবার সকাল ১০টা থেকে আবারও শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। দুপুর দেড়টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশ ঘটে। পরে বেলা পৌনে ২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বড় মিছিল নিয়ে শিক্ষক–কর্মচারীরা শাহবাগ মোড়ের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে শাহবাগের প্রবেশমুখে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। তবে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে সেই প্রতিবন্ধক ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা।

শাহবাগ মোড় ছাড়ার সময় তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার থেকে বাড়িভাড়া ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তারা এতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। ওইদিন সেখানে লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ওইদিন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন করছেন তারা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের অভিমুখে মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। হাইকোর্টের মাজারসংলগ্ন গেটে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখানেই রাত পর্যন্ত শিক্ষকদের অবস্থান করেন।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবি মেনে নিতে সরকারকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সময় পার হয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর পূর্বঘোষিত 'শাহবাগ ব্লকেড' কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

প্রসঙ্গত, শতাংশের হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ অক্টোবর বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়ে অর্থ বিভাগকে দ্বিতীয়-দফা অনুরোধপত্র পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে সরকারের ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত