বন্দরের সাথে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত এক মতবিনিময় ও পরামর্শ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, সরকারের মাত্র আড়াই মাসের মেয়াদ বাকি থাকলেও তারা কেন এত তাড়াহুড়ো করে গোপনীয়তার মধ্যে দুটি চুক্তি করল—এটি বড় প্রশ্ন। বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে সরকারের ওপর অন্য কোনো চাপ, স্বার্থ বা এজেন্ডা কাজ করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বড় কোনো রাষ্ট্রীয় চুক্তির ক্ষেত্রে অংশীজনদের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও এবার তা মানা হয়নি। চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার সরকারের আগের উদ্যোগ ইতোমধ্যে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে হাইকোর্ট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন হিসেবে বন্দরগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে সাইফুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশ নিজস্ব সক্ষমতায় লাভজনকভাবে বন্দর পরিচালনা করছে। প্রয়োজন হলে বিদেশি প্রযুক্তি বা পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, তবে তার অর্থ এই নয় যে বন্দর ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হবে। এতে রাষ্ট্রের অর্জনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, জনগণের কোনো অংশ, রাজনৈতিক দল কিংবা সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার কেউই বলেনি যে আমরা বন্দর পরিচালনায় অক্ষম। তাহলে হঠাৎ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়ার প্রয়োজন কেন? তার দাবি, সরকারের এ সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি ও অস্বচ্ছ, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সাইফুল হক জোর দিয়ে বলেন, বন্দরের সাথে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটাও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। তাই আপনাদের কাজ হবে অনতিবিলম্বে এই চুক্তির সকল কার্যক্রম বন্ধ করা এবং স্থগিত ঘোষণা করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আমি আশা করি আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আমাদের দেশ, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা–বিরোধী যে অতি গোপনীয় চুক্তি হয়েছে, সেটির দৃঢ় প্রতিবাদ জানাবে। সরকার যদি সঠিক পথে না হাঁটে, তাহলে সামনে বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে। সরকার যদি তাদের চুক্তি থেকে সরে না আসে, বাম জোট যমুনা অভিমুখে যে কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা যদি বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণে মরিয়া থাকেন, তাহলে আপনাদের অধীনে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করতে চাইবে কি না—এই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। আমি আশা করি আপনারা সোজা পথে হাঁটবেন।”
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান প্রমুখ।
এসআর

