Ad T1

সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ১১

আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় নারী, শিশু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে এমন একটি খসড়া তৈরি করা জরুরি যা সবার জন্য উপযোগী হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

রোববার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি), সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন এবং সেফটি নেট যৌথ উদ্যোগে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা প্রায়ই মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের শিকার হয়। দৃষ্টি ও বাকপ্রতিবন্ধী নারীরা আদালতে বৈষম্যের সম্মুখীন হন। এই আইন নারী সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। তৃণমূল পর্যায়ে আলোচনা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মেজবাহ বলেন, ‘সাইবার স্পেস সাধারণত তিনটি আইন দ্বারা পরিচালিত হয়- তথ্যপ্রযুক্তি আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং উপাত্ত সুরক্ষা আইন। ‘প্রথমত, এই আইনটির নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন হওয়া উচিত, সাইবার সুরক্ষা আইন নয়। অধ্যাদেশে প্রযুক্তি আইনের তিনটি দিক একত্রিত করায় এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। আইনটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় কতটা উপযুক্ত, তা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। আইনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে একজন প্রাকৃতিক ব্যক্তির সমতুল্য বিবেচনা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাইবার অপরাধ মোকাবিলার জন্য সাইবার পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আইনের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’

ব্লাস্ট-এর লিগ্যাল স্পেশালিস্ট আয়শা আক্তার বলেন, ‘এই আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় জনমতের প্রতি কোনোরকম তোয়াক্কা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছ থেকে কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি। নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রায়ই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন থাকে, যা এই অধ্যাদেশেও প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতি থেকে মুক্ত একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এই আইন প্রণয়ন করা উচিত। সাইবার অপরাধীদের ধরার জন্য প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ক্ষমতা দেওয়ার আগে তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার পরীক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।’

অগ্নি ফাউন্ডেশনের তৃষিয়া নাশতারান বলেন, যদিও সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সুবিধার অধিকারের কথা খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বিনা জবাবদিহিতায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে; যা একটি স্পষ্ট পরস্পরবিরোধী অবস্থান তৈরি করে। এই অধ্যাদেশে নাগরিকদের প্রতি শাস্তিমূলক মনোভাব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি অবহেলা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা আইনটিকে আরও অবদমনমুখী করেছে। অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের সঙ্গে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ও ডিজিটাল ফরেনসিকের সীমারেখা সুস্পষ্ট করা, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে আইনটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা অত্যন্ত জরুরি। সর্বস্তরের অংশীজনদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়া স্থগিত রাখা উচিত।

আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক ম্যা মো খাইং বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যবহার এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আলাদা রাখার মাধ্যমে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট সেবা থেকে দূরে রাখা হয়। তাদের উপর বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা আরোপ করার মাধ্যমে তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। নতুন আইন প্রণয়নের আগে জনমতের সমর্থন এবং জরিপ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Ad
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত