প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জনগণের বিপুল সমর্থনের ভিত্তিতে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ-এর রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার আরো সুদৃঢ় করেছি, যেখানে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
‘মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রায় দেড় বছর পর আমরা এবারের মানবাধিকার দিবস উদ্যাপন করছি। চব্বিশের জুলাইয়ে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ নিপীড়ন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করে, নিশ্চিত হয় জনগণের অধিকার ও মর্যাদা।
তিনি বলেন, অশান্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ আত্মপ্রকাশ করে। আমরা এখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে একটি গণতান্ত্রিক, অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যাতে ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গঠন এবং আমাদের গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার পথ নির্ধারণ করা যায়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা আমাদের জাতীয় মানবাধিকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং জাতিসংঘের সাথে দৃঢ়ভাবে কাজ করার এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সকল আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।
তিনি বলেন, মানবাধিকারকে বিশ্বাসের একটি অংশ হিসেবে প্রচার করা উচিত, যাতে প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য মর্যাদার সাথে এবং কোনো বৈষম্য ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র ও জাতিসংঘ সনদে সন্নিবেশিত সকল মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা গর্বের সঙ্গে এমন একটি জাতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি যারা মানবাধিকারসংক্রান্ত জাতিসংঘের নয়টি মূল আন্তর্জাতিক চুক্তির সবগুলোতে যোগ দিয়েছে, যার সর্বশেষটি হলো গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসেপিয়ারেন্স’। আমরা একইসঙ্গে নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সব মূল কনভেনশনেও সই করেছি, যা আমাদের শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সমুন্নত রাখতেও আমরা সক্রিয় অবদান রেখে যাচ্ছি। সংঘাত, মানবিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মতো ঘটনা যা মানবাধিকার সুরক্ষার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এসব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে আমরা একযোগে কাজ করছি।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আট বছর পরও মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। দ্রুততম সময়ে নিরাপদ প্রত্যাবাসন কার্যকর করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনেও আমি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের এই অবস্থান জানিয়েছি। একইভাবে, গাজাসহ বিশ্বের যেকোনো স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার রয়েছি এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রেখেছি, স্বাধীনতার জন্য ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য সংগ্রামে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছি।
এ বছর ‘মানবাধিকার, আমাদের নিত্যদিনের অপরিহার্য’-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।

