রাওয়া বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান

ফ্যাসিবাদী সরকার জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক দরিদ্র করার চেষ্টা চালিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩১

ফ্যাসিবাদী সরকার এই জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক দরিদ্র করার চেষ্টা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ‘আমার দেশ’ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

শনিবার রাতে রাজধানীর মহাখালী রাওয়া ভবনে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘রাওয়া বইমেলা ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

মাহমুদুর রহমান বলেন, ইন্টেলেকচুয়াল এবিলিটির (বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা) আলোচনা করতে গেলে একটু বলা প্রয়োজন যে, ফ্যাসিস্ট গভর্নমেন্ট কিভাবে আমাদেরকে ইন্টেলেকচুয়ালিও দরিদ্র করার চেষ্টা করেছিল। এরজন্য শিক্ষা কারিকুলাম ধ্বংস করেছিল। তারা এমন কারিকুলাম নিয়ে এসেছিল যেখানে পার্শ্ববর্তী হেজেমনিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তরুণরা ভারতীয় ওই ন্যারেটিভে পড়ে যেন বড় হয় এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম যেন জাগ্রত না হয় -এই ধরনের কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, শিক্ষকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হতো যে, কাউকে ফেল করানো যাবে না। এর মাধ্যমেই ৯০-৯৫ শতাংশ পাস দেখাতো। আমি নিজে একজন শিক্ষকের সন্তান। আমার মা টিচার ছিলেন। আমি তো মাকে দেখেছি কিভাবে খাতা দেখতেন সেই সময়। এই ১৫ বছরে সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়া হতো, প্রত্যেকটা স্কুলে প্রত্যেকটা টিচারকে বলে দেওয়া হতো কাউকে ফেল করানো যাবে না। অর্থাৎ ইন্টেলেকচুয়ালি পুরো জাতিকে দরিদ্র করে দেওয়ার জন্যই এই ষড়যন্ত্র ছিল। যে কারণে সেনাবাহিনীকেও দুর্বল করা হয়েছে।

ঈমানি জোর ছাড়া সেনাবাহিনী শক্তিশালী হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ঈমানের বলটাকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর ইন্টেলেকচুয়ালি এক ধরনের দারিদ্র্যের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তরুণ প্রজন্মকে দেখে অনুপ্রাণিত বোধ করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা এই ফ্যাসিস্ট শাসককে উৎখাত করতে পেরেছি এবং তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি তার প্রভুর দেশে -এটা সম্ভব হয়েছিল আমাদের এই তরুণ প্রজন্মের ত্যাগ ও সাহসিকতার মাধ্যমে। শত শত ছেলে মেয়ের জীবনের বিনিময়ে আমরা আবার আমাদের দেশটাকে ফিরে পেয়েছি। এখন এই দেশটাকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। এরজন্য আমাদেরকে ইন্টেলেকচুয়ালি ইকুইপড হতে হবে। কারণ ইন্টেলেকচুয়াল না হলে সাহস আসবে না।

সম্প্রতি ভারত সফর করে আসা সাংবাদিকদের নির্বুদ্ধিতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫–২৬ জন সাংবাদিককে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখানো, কিংবা বলা যায়, তাদের একটি নির্দিষ্ট ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেওয়া -এক ধরনের মগজ ধোলাই (ব্রেইন ওয়াশ) করার চেষ্টা। সেই আমন্ত্রণে আমার দেশের একজন সাংবাদিককেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেই দাওয়াত গ্রহণ করেননি। বাকি সব সাংবাদিক সেই দাওয়াত নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন।

ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি, সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কথোপকথনের এক পর্যায়ে বলেন, “বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, সেটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাগবে।” অর্থাৎ, তিনি বোঝাতে চাচ্ছিলেন যে সেই নির্বাচনের জন্য ভারতের স্বীকৃতি প্রয়োজন। -এই কথা শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। কারণ, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের একজনও সাহস করে তাকে জিজ্ঞাসা করেননি, “মিশ্রি সাহেব, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা যখন নির্বাচনের নামে তামাশা মঞ্চস্থ করেছেন, তখন তো আপনি একবারও বলেননি যে এই নির্বাচনগুলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন!” কেউ প্রশ্ন করেনি।

আমি মনে করি, সেই সাংবাদিকদের এই সাহস না থাকার মূল কারণ হলো -মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা। তাই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরি। এর জন্য অবশ্যই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ প্রয়োজন। তবুও আমাদের নিজেদের চেষ্টাও থাকতে হবে। আর সেই চেষ্টার অন্যতম উপায় হলো -বই পড়া।

জনগণ ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক দৃঢ় করতে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, জনগণ এবং সেনাবাহিনী যদি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে, তাহলেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকবে। একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

বই মেলা আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, রাওয়া কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানাই চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। আর বিশেষ করে এই যে ছাত্র-ছাত্রীরা এসেছে, কিশোর-কিশোরীরা, তরুণেরা -এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ওরা অনেক এগিয়ে গেছে আমাদের তুলনায়।

পরে রাওয়ার চেয়ারম্যান কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক বই মেলাটি সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এসময় লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মাঝে বেশকিছু ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত