সমাজ-স্বাস্থ্য-পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি কমাতে হবে

মানসম্মত গণপরিবহনের অভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। মধ্যম আয়ের মানুষও গাড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ‘কার ফ্রি ডে’ অনেক বছর ধরে উদযাপন করা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নীতি নির্ধারণী মহলে উপলব্ধি ও আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহনবান্ধব সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।

সোমবার আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’ উপলক্ষ্যে ‘সমাজ, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নই অন্তবর্তী সরকারের প্রয়াস।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার সড়কে ব্যক্তিগত গাড়িকে রাস্তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে অযান্ত্রিক বাহনগুলোর যাতায়াত অনেক ক্ষেত্রে সীমিত করে ফেলা হয়েছে।

নীতিনির্ধারকদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যক্তিগত গাড়ি-কেন্দ্রিক হবার ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উন্নতির প্রতি তাদের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। ঢাকা শহরে গাড়ি বহন ক্ষমতা নির্ধারণ করে গাড়িমুক্ত জোন ঘোষণা করা প্রয়োজন। সেই সাথে গাড়ি নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা এবং একক পরিবারের জন্য দ্বৈত নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

গাড়ি ক্রয় এবং সহজ গাড়ি ঋণের জন্য প্রণোদনা সীমিত করা আবশ্যক। পাশাপাশি পথচারীবান্ধব নগর গড়বার জন্য ফুটপাত নির্মাণ ও হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিখিল কুমার দাস বলেন, আমাদের নগর যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের শহরে অনেক প্রকল্প গৃহীত হয়, কিন্তু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না থাকায় জনগণ এর সুবিধাভোগী হতে পারে না।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সুফিয়ান আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যাতায়াতের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আসেনি। এ লক্ষ্যে সরকার কাউন্টারভিত্তিক টিকেটিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হয়েছে। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠা-নামা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সভায় বলা হয়, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ট্রিপ সংঘটিত হয় এবং মোট যাত্রী পরিবহনের একটি বড় অংশ গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। গণপরিবহন কর্তৃক অধিকৃত সড়কের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম এবং সুবিধা বহুবিধ।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) উদ্যোগে এ সভায় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ, ডিটিসিএ’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ।