ট্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ডে কাদের গনি চৌধুরী

কোন দেশে একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে অপসারণ করা কঠিন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ০২: ২০
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ০২: ২২

কোন জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সন্ধ্যায় টেলিভিশন রিপোর্টাস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ট্যাব) আয়োজিত ট্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, কোনো সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি হচ্ছ সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের শুভবোধ ও শুচিন্তার বিকাশের জন্য। যেনতেন প্রকারে আনন্দ বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ ফুর্তিকে তাই সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে আমরা বলবো অপসংস্কৃতি। ভোগবাদী উচ্ছৃঙ্খল জীবনের যে আনন্দ, তা সংস্কৃতি নয়।

মনে রাখবেন, জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয় তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মূলত মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।

333

ম্যাথিউ আর নল্ডের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া।’মোতাহের হোসেন চৌধুরি বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা।’ আর ড. আহমদ শরীফ সংস্কৃতির সংজ্ঞার্থ দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পরিশীলিত ও পরিশ্রুতি জীবনচেতনাই সংস্কৃতি।’ আমিও এই ধারণা পোষণ করি।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি।এটা ঠিক নয়।যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক।কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী। চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন নির্বাহের যাবতীয় রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতন ঘটছে। কুরুচিপূর্ণ রচনা সাহিত্য অঙ্গনকে গ্রাস করছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতি আসন দখল করে নিয়েছে।আজকাল অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বাল বা পিতলের কড়া এবং এক কানে দুল পড়তে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেক সময় ছেলেদের মত শার্ট, টাইট জিন্স-প্যান্ট, চুলের বয়কাট। ছেলেরা ফ্যাশন করে ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে।এসব আনন্দ হলেও এটা কিন্তু অপসংস্কৃতির নামান্তর। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবন-যাবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এখন বিত্তবান ক্ষমতাশালীরা নিজেদের চিত্তবিনোদনের পথ পাল্টে ফেলেছেন। রুচিবিকৃতি নেমে গেছে চরম পর্যায়ে, যা থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অনুসরণ করার মতো কিছুই দিয়ে যেতে পারছি না।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে। আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে যে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করে আছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অথচ আমাদের এই নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আজ বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভেতর দিয়ে একটা দেশের নিজস্ব ইতিহাস, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ধরন উল্টাপাল্টা করে দেওয়া হয়। অস্পষ্ট করে তোলা হয় তার আত্মপরিচয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত