মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান

ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বীরোচিত ভূমিকা ছিল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫১
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৪

এদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম হয়েছে তাতে আমাদের আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বীরোচিত ও মহান ভূমিকা পালন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

জুলাই ও শাপলা চত্বরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, এই লড়াই শুধু চব্বিশের লড়াই ছিল না। যে সাংস্কৃতিক বয়ানের মাধ্যমে দেশের আলেম ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, ২০২৪ সালে সফল বিপ্লবে তাদের সেই বয়ান বিজয়ী হয়েছে। তারাই সর্বপ্রথম ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালাল হাসিনার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এবং জীবন দিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক যাত্রাবাড়ীর জামিয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসায় ‘মাদরাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’ নামে বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমরা আশা করবো এ ধরনের ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবেলা করবেন। কেননা, এদেশে দীর্ঘসময় ধরে ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রেখেছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ। তাই আমাদের ভারতীয় আধিপত্যবাদ সম্পর্কে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিপ্লবের এক বছর পর আমরা যখন দেখি সহযোদ্ধাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে, তখন আমরা খুব কষ্ট পাই। আমাদের মনে হয়- এই অনৈক্যের মাধ্যমে আবারো ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রত্যাবর্তনের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই প্রবীণ নাগরিক হিসেবে সব’কটি রাজনৈতিকদলসহ সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা প্রতিযোগিতা করুন কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জনগণের অধিকার ও এদেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগণের অধিকারের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এ বিষয়ে যেন আপনাদের মধ্যে কোনো অনৈক্যের সৃষ্টি না হয়।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনতি বিলম্বের আপনারা শহীদ পরিবারের দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে তাদের স্বজনদের হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করুন। তাদের বিচার নিয়ে যেন কোনো টালবাহানা না হয়।

যুগের যুগে আলেম সমাজের অবদানের কথা তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, দেশ ও জাতি গঠনে আমাদের এদেশের আলেম-ওলামারা যুগে যুগে অনেক অবদান ও আত্মত্যাগ করে গেলেও এদেশের এলিট শ্রেণি মিডিয়া তাদের কথা স্বীকার করে না। তাদের অবদানের কথা মিডিয়ায় স্থান পায় না। এক্ষেত্রে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের পর থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আলেম-ওলামাদের অবদান ও ত্যাগ এবং জুলাই বিপ্লবে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে জুলাই বিপ্লব সফল হয়েছে। আগামী দিনের তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জুলাই বিপ্লবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই বিপ্লবে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল অনন্য। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ সবার অবদানে একটি সফল বিপ্লব হয়েছে।

অনুষ্ঠানে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, চব্বিশের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজের বীরত্বপূর্ণ অবদানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগেরসচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন জুলাই শহীদ মাওলানা খুবাইরের বড় ভাই মুফতি সোহাইল ও শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর পিতা ডা. আব্দুর রহমান মিয়া। এতে বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, শহীদ পরিবারের সদস্য, আলেম-ওলামা ও শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।

মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজারো জনতার ঢল নামে। বিকাল ৩টার দিকে অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই অনুষ্ঠানস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। চারদিক থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে হামদ, নাত, নাশিদ, কবিতা আবৃত্তি, প্রতিবাদী গান এবং তথ্যচিত্র ‘ছত্রিশে জুলাই’ ও ‘সাদা জোব্বা, লাল রক্ত’ প্রদর্শনসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশন করা হয় ।

এর আগে শহীদ খুবাইবের ভাই মুফতি সোহাইল ও শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা ডা. আব্দুর রহমান মিয়া অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানটি রাত ১১টা পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে সন্ধ্যার আগেই শেষ করা। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের জন্য দোয়া মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত