মহেশখালী-মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর

সিঙ্গাপুর-সাংহাইয়ের আদলে মহেশখালী-মাতারবাড়িতে শহরের মাস্টারপ্ল্যান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৫

মহেশখালী ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় সাংহাই ও সিঙ্গাপুরের আদলে বাণিজ্যিক শহর বানানোর মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ৩০ বছরের ব্যবধানে এ বাণিজ্যিক শহরে ২৫ থেকে ৩০ লাখের কর্মসংস্থানের চিন্তা রয়েছে সরকারের। তবে সেটি নির্ভর করছে আগামী যেকোনো সরকারের সদচ্ছিার ওপর।

বিজ্ঞাপন

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (বিডা) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম।

এ লক্ষ্যে মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগটি (মিডা) বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি সরবরাহ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, উৎপাদন ও মৎস্য শিল্পকে এক স্থানে নিয়ে আসবে। সহজ কথায়, ধারণাটি হল গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধাগুলোকে জ্বালানী টার্মিনাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে একত্রিত করা। এর ফলে শিল্পগুলো তাদের জ্বালানির উৎসের কাছাকাছি এবং সরবরাহ সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এ মহাপরিকল্পনাটি হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ প্রকল্পের অধীনে অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ করার কথা। মহেশখালী এখন মরুভূমীর মতো। কিন্তু কেউ যদি ৩০ বছর পর অর্থাৎ ২০৫৫ সালে সেটিকে কল্পনায় নিয়ে ভাবে- আমরা সেটিকে সিঙ্গাপুর কিংবা সাংহাই শহরের আদলে তৈরী করবো।

সেখানে বিনিয়োগের করলে জিডিপিতে সঠিক কত রিটার্ন আসবে এমন ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, এ বাণিজ্যিক শহরে মোট জিডিপি আয় হবে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের। এই পরিমাণের মধ্যে, সরাসরি জিডিপি প্রভাব হবে ৭০-৭৫ বিলিয়ন ডলার।

দীর্ঘমেয়াদে প্রায় দেড় লাখ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরী হবে, পাশাপাশি পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে ২৫ লাখের বেশি। অধিকন্তু, এই অঞ্চলটি কক্সবাজারের আঞ্চলিক অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী টেকসইতার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠবে, যার ফলে এই অঞ্চলে বর্তমান পর্যটক আগমনের সংখ্যা ১.৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চারটি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪টি প্রধান স্তম্ভ রয়েছে: বন্দর এবং সরবরাহ, উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, মৎস্য চাষ। ভৌগোলিক সুবিধাকে অর্থপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্য এই স্তম্ভগুলির পোর্টফোলিও মিশ্রণ সম্পর্কে চলমান পর্যালোচনা এবং পরামর্শ চলছে। মাতারবাড়িতে একটি পর্যটন অঞ্চলসহ ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরী করেও ৪টি স্তম্ভ টিকে থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি কথা বলি না। শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমানার মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরী করা হয়। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেও বিশাল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় খুবই অল্প। সেজন্য আমরা ১২০ দিনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক কাজ শেষ করা হবে। দ্বিতীয়ত- মাস্টারপ্ল্যান লকডাউন করতে হবে যাতে সে এলাকাকে এমন শহর হিসাবে চিন্তা করা যায় যেটা বাণিজ্যিক হাব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। জাইকার একটি গবেষণায় আগামী ২০-৩০ বছরে ৬০-৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের আনুমানিক পরিমাণ ৪৭-৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ১০% (৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) লক্ষ্যমাত্রায় এফডিআই বিনিয়োগ।

এই উদ্যোগের প্রথম স্তম্ভ হল গভীর সমুদ্র বন্দর এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত লজিস্টিক সিস্টেম। প্রকল্পের এই অংশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে বাংলাদেশের বর্তমান বন্দরগুলি বাল্ক কার্গো এবং কন্টেইনার উভয়ই পরিচালনা করতে পারে না। মাতারবাড়ি বন্দরটি প্রায় ১৮.৫ মিটার প্রাকৃতিক গভীরতায় নির্মিত, যা বড় জাহাজগুলিকে সরাসরি নোঙ্গর করতে দেয়। এটি চট্টগ্রামের তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যেখানে ছোট জাহাজের প্রয়োজন হয় এবং পণ্য পরিবহনের জন্য বেশ কয়েকটি ধাপে পদক্ষেপ নিতে হয়। এই পরিবর্তনগুলো আগামী ৩০ বছরে বন্দরের ক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করবে। প্রাকৃতিক গভীরতার সুবিধার সাথে, অনুমান করা হচ্ছে যে মাতারবাড়ি দেশের বাল্ক ট্র্যাফিকের প্রায় ২৫% এবং কন্টেইনার ট্র্যাফিকের ৪৫% পূরণ করবে। এখানে সঞ্চয়ের ফলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের উপর প্রভাব পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, শিপিং খরচ হ্রাসের ফলে বাংলাদেশে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় ৫০ টাকা কমতে পারে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত