ব্যবসায়িক দ্বন্ধে খুন হন সোহাগ, পুলিশের ব্রিফিং

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০৫
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৮: ০৮

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) খুন হয়েছেন দোকানে কারা ব্যবসা করবে এবং ভাঙ্গারি ব্যবসার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে। হত্যার শিকার সোহাগ ও হত্যাকারীরাদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। মূল পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হাসান মহিনের সাথে নিহত সোহাগের পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো। হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাঁদাবাজির তথ্য এখন পর্যন্ত পায়নি পুলিশ।

শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

লালবাগ ডিসি বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করে এ পর্যন্ত এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আসামীরা এবং নিহত ব্যবসায়ী সোহাগ একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন। যখন ব্যবসার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তখনই তারা বিবাদে লিপ্ত হন। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি (লালবাগ) বলেন, ঘটনা ঘটার দশ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। ঘটনার পর থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কোতয়ালী থানায় আমি উপস্থিত ছিলাম। ব্যবসায়ী সোহাগের নিকট আত্মীয় খুজে পেতে এবং বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, প্রথমে নিহত সোহাগের স্ত্রী পরিচয়ে একজন মামলা করতে চাইলেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেলে ওই নারীর সাথে সোহাগের ডিভোর্স হয়েছে। সোহাগের বাবা-মায়ের খোজ নিয়ে জানা গেলো, তারা কেউ বেঁচে নেই। সোহাগের সৎ ভাই রয়েছেন। কিন্তু আপন ভাই না থাকায় আমরা সৎ ভাইকে বাদী করতে চাইনি।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর আগে পাশের এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় নিহতের সৎ ভাই মামলা করেন। এক পর্যায়ে নিহতের সৎ ভাই আসামীদের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা করে, মামলা বিক্রি করার মতো অবস্থা। সর্বশেষ আমরা নিহত সোহাগের বোনকে খুজে বের করে তাকে মামলার বাদী হতে অনুরোধ করি।

ঘটনার বিববরণ দিয়ে ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, গত ৯ জুলাই বুধবার বিকেল অনুমান ৬ টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে ১০ জুলাই উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

গত ১১ জুলাই শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভূক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন(২২) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেফতারকৃত আসামি তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে দুজনকে। এরা হলো- আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫)। শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২.৩০ টায় সোহাগ হত্যার ঘটনায় মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভূক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।

জানা যায়, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উৎঘাটন, সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধী গ্রেপ্তার এবং ভিকটিম কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উৎঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয়। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত