নতুন নির্মিত সেতুর পাশাপাশি পুরোনো সেতু ও কালভার্টেও ‘এক্সট্রা ডিসটেন্স অব পন্টেজ চার্জ’ বা অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগ নিয়ে গঠিত রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সব যাত্রীবাহী ট্রেনের ভাড়া ২০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে।
নতুন হার অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়বে। সরাসরি টিকিটের দাম না বাড়িয়ে পন্টেজ চার্জ বা মাশুল আরোপ করে দীর্ঘ ৯ বছর পর ভাড়া বৃদ্ধি করা হলো।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পূর্বাঞ্চল রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ সোমবার নতুন ভাড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। গত ২৫ নভেম্বর পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে নতুন ভাড়া ২০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
সোমবার এ চিঠি কার্যকর ও জনস্বার্থে প্রচারের জন্য অনুমোদন করেন সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ভাড়া সমন্বয় না হওয়ায় পরিচালন ব্যয় ও অবকাঠামো নির্মাণ–রক্ষণাবেক্ষণের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সামাল দিতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করা হয়েছে। এর আগে পদ্মা সেতুসহ পশ্চিমাঞ্চলের বড় সেতুগুলোর ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা চালু ছিল।
এবার পূর্বাঞ্চলের ১১টি সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ করে ভাড়া সমন্বয় করা হলো। নতুন ভাড়ার তথ্য টিকিট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘সহজ (জেভি)’কে পাঠানো হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে যাত্রীদের অগ্রিম টিকিটে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, ২০১৬ সালে সর্বশেষ ভাড়া বাড়ানো হয়। পশ্চিমাঞ্চলে পন্টেজ চার্জ চালু থাকলেও পূর্বাঞ্চলে হয়নি। এবার মাত্র ১১টি সেতুর জন্য চার্জ যুক্ত করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের ভাড়া খুব বেশি বাড়ানো হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আয় বৃদ্ধিতে ১০০ মিটার বা তদূর্ধ্ব সেতু–কালভার্টে পন্টেজ চার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে প্রতি কিলোমিটার সেতুকে ১৭ কিলোমিটার হিসেবে গণনা করা হলেও এখন ২৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। গত ২৫ নভেম্বর মার্কেটিং বিভাগের উপপরিচালক শাহ আলম নতুন ভাড়া কার্যকরের নির্দেশনা দেন এবং ৮ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক বিভাগ জনস্বার্থে প্রচারের অনুমোদন দেয়।
এই নতুন হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৩৮১ কিলোমিটার হবে। এতে মেইল ট্রেনে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা, কমিউটার ২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৫ টাকা, প্রথম সিট ৬৪ টাকা, স্নিগ্ধা ৮০ টাকা এবং এসি বার্থে ১৪৩ টাকা ভাড়া বাড়বে। বিরতিহীন ট্রেনগুলোতেও অনুরূপ ভাড়া বৃদ্ধি হবে।
ঢাকা–কক্সবাজার রুটে দূরত্ব ৫৩৫ থেকে ৫৮৬ কিলোমিটার হওয়ায় শোভন চেয়ার ৬০ টাকা, স্নিগ্ধা ১১৫ টাকা এবং এসি বার্থে সর্বোচ্চ ২০৭ টাকা ভাড়া বাড়বে। ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রুটসহ অন্যান্য রুটেও বিভিন্ন শ্রেণিতে ৫ থেকে ১২৬ টাকার মতো ভাড়া বাড়বে।
রেলওয়ের আয় বাড়াতে চলতি বছরের মে মাসে পন্টেজ চার্জ বা মাশুল আরোপের মাধ্যমে ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো ডিসেম্বরে। সাধারণ ট্রেন ও বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেনের জন্য আলাদা করে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। এর আগে রেলওয়ে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল।

