ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

বশীর আহমেদ
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০: ২১

বিনিয়োগ, বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন এক উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে যাত্রা করেন গ্রেট ওয়ালের দেশে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের এক নতুন যাত্রা শুরু হলো।

বিজ্ঞাপন

গতকাল শুক্রবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এবং সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেন, যা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী অর্থনৈতিক সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। দু’দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য চীনকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে ড. ইউনূসের আহবানে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি।

বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দু’দেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ এবং চীনের আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এম শহীদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেছেন, আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ড. ইউনূস তার কূটনৈতিক সক্ষমতা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক। এদিকে চীনের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের এই ফলাফল ছিল প্রত্যাশিত। কারণ দু’দেশই এক ঐতিহ্যগত সম্পর্ক লালন করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফর নিয়ে ভারতের নেতিবাচক প্রচারণা এবং উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করে এটাকে ভারতের সংকীর্ণ এবং একপক্ষীয় চিন্তা বলে মন্তব্য করেছেন চীনা বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের পাঠানো বিশেষ বিমানে চেপে গত ২৬ মার্চ চার দিনের সফরে চীনে যান প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টাকে বরণ করা হয় লালগালিচায়। সর্বোচ্চ সম্মান ও আতিথেয়তা দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। ড. ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়া ছিল কৌশলগত এক সিদ্ধান্ত। চীনের পক্ষ থেকেও এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে করণীয় সবই করা হয়েছে।

চার দিনের চীন সফরে প্রথমেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার হাইনানের উপকূলীয় শহরে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার আহবান জানান। রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের ওপর বিশেষ জোর দেন তিনি। সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস কথা বলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু উত্তরণের জন্য বান কি মুনের সমর্থন ও পরামর্শ চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। এক্ষেত্রে আপনার সমর্থন ও পরামর্শ আমাদের প্রয়োজন। আমাদের সামনে দুর্দান্ত এক সুযোগ যা আমরা কাজে লাগাতে চাই।

বোয়াও ফোরামের সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ডিং শুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে। চীনা উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওই বৈঠককে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতি বৈঠক হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। বৈঠকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয় ইউনূস-শি বৈঠকে ঠিক কী হতে যাচ্ছে। বৈঠকে উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছেন। চীন আশা করে, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওয়ান-চায়না নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দেওয়া প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে ঢাকা গর্ব অনুভব করে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনের তৈরি পোশাক কারখানা, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস, চিপ উৎপাদন এবং সৌর প্যানেল শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর সহজ করতে বেইজিংয়ের সহায়তা চান।

উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং জানান, ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে যা বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের দুই বছর পর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

তিনি আরো জানান, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী। উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে অর্থায়ন করবে।

চীনা উপপ্রধানমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে সংলাপ করবে।

প্রফেসর ইউনূস চীনের নেতৃত্বের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই বৈঠক ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বের আরেকটি মাইলফলক চিহ্নিত করল। আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করি যাতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয় এবং বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক অংশীদারত্বের একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার দিনের প্রথম এবং সফরের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ইউনূস-শি বৈঠকটি অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সরকারের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার। দুই নেতার বৈঠকে তিস্তাসহ বিভিন্ন কৌশলগত ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও একচীন নীতির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না ঢাকা।

প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগসহ ৯টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু এবং মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণসহ বেশকিছু বিষয়ে সহযোগিতার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের পক্ষ থেকে করণীয় সবকিছু করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই দেশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে লালন করবে বলে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বহুল আলোচিত এই চীন সফরের মাধ্যমে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এম শহীদুজ্জামান ড. ইউনূস-শি জিন পিং বৈঠক শেষে তার প্রতিক্রিয়ায় আমার দেশকে বলেন, আমরা এই সফরে যা কিছু প্রত্যাশা করেছিলাম ঠিক তা-ই পেয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চীন যেভাবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জানিয়েছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে কূটনীতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে দক্ষতা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই অসাধারণ। তিনি বলেন, আমি ধারণা করি ইউনূস-শি বৈঠকে সামরিক এবং স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রে অনেক কিছু হয়েছে যা হয়তো কখনো প্রকাশ্যে আসবে না। ভারতের মতো বৈরী প্রতিবেশীকে মোকাবিলার জন্য অর্থনীতি থেকে শুরু করে কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশে চীনের অবস্থান আরো বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।

এদিকে চীনা বিশ্লেষকরা বলছেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে যে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে তা আরো এগিয়ে যাবে। এই সফর নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে যে ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে তা সংকীর্ণ এবং একপক্ষীয় চিন্তাধারা বলে মন্তব্য চীনা বিশ্লেষকদের। সিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগের পরিচালক কিয়ান জেং গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, গত বছর আগস্ট মাস থেকে এখন পর্যন্ত বেইজিং ও ঢাকার মধ্যে বহুমাত্রিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি এগিয়ে নিচ্ছে তা তাদের প্রজ্ঞারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক আগামী দিনে শক্ত এক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।

সাংহাই ইনস্টিটিউশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজ-এর পরিচালক লিউ ঝংই বলেছেন, এই সফরের মাধ্যমে ঢাকা-বেইজিং কৌশলগত অংশীদারত্ব পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে আরো শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, এই সফরে তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের মতো কৌশলগত বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের সবকিছুকে ভারত তার স্বার্থের বিরুদ্ধে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে চায়। এটা তাদের সংকীর্ণতা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোসহ বেশকিছু চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ জানিয়েছে। ভারত সেই অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অথচ ভারতীয় মিডিয়া প্রতিনিয়ত নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই চীন সফরের মাধ্যমে যা কিছু অর্জিত হলো তা অসামান্য। চীনের সমর্থন ড. ইউনূস তথা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কৌশলগত এক বড় অর্জন। বহুল আলোচিত এ সফরের আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, এই সফরের মাধ্যমে আমরা একটি ফাউন্ডেশন গড়ে যেতে চাই, যার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনে পথ চলবে দুই দেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সেই প্রত্যাশা আজ বাস্তব। প্রধান উপদেষ্টার সফল এই সফরের মাধ্যমে সেই পথচলাই শুরু হলো।

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

দেশে মুক্তি পাচ্ছে জাপানি অ্যানিমে সিরিজ, শিশুদের দেখা নিষেধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত