পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত ৮টি কুকুরছানা বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনা সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের আর্তনাদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টার কমপ্লেক্সের সামনে। সপ্তাহখানেক আগে জন্ম নেওয়া ছানাগুলোর নিখোঁজের পর দুই দিন ধরে মা কুকুরটিকে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, তদন্তে জানা যায়—এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী নিজের ছেলেকে দিয়ে কুকুরছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পাশের পুকুরে ফেলে দেন। পরে পুকুর থেকে মৃত ছানাগুলো উদ্ধার করা হয়। কর্মকর্তার কোয়ার্টারের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে এবং দুগ্ধবতী মা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ঢাকার ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’ সংগঠনের সদস্যরা ঈশ্বরদীর পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বগুড়ায় একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে। গত বছর ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটিতে বিষ প্রয়োগে কয়েকটি কুকুর–বিড়াল হত্যার অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে শতাধিক কুকুরকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ ছিল।
আইনি ব্যবস্থায় বাধা কোথায়?
বগুড়ার ঘটনার পর বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন একটি সাধারণ ডায়েরি করলেও, আইনগত প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়। সংগঠনের সদস্য মো. এমরান হোসেন জানান—প্রাণি কল্যাণ আইন দুর্বল এবং পুলিশের দৃষ্টিতে এটি ‘ধর্তব্যের বাইরে অপরাধ’ হিসেবে দেখা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনের অধীনে কোনো মামলা গ্রহণ করতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ প্রয়োজন। সাধারণ ব্যক্তি সরাসরি মামলা করতে পারেন না। ফলে নাগরিকদের পক্ষে পথকুকুর বা বিড়ালের হত্যার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই সীমাবদ্ধতার কারণেই অনেক ক্ষেত্রে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪২৯ ধারায় মামলা করা হয়, যেখানে ৫০ টাকা বা তার বেশি মূল্যের প্রাণি হত্যা বা ক্ষতিসাধনের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে পথকুকুর বা বিড়ালের ‘মূল্য’ নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় এই ধারা প্রমাণ করাও কঠিন।
প্রাণি কল্যাণ আইন ২০১৯ কী বলে?
আইনজীবীরা বলছেন, এই আইনের অধীনে অপরাধ নন-কগনিজেবল ও জামিনযোগ্য। পোষ্য বা পথকুকুর–বিড়ালসহ মালিকবিহীন প্রাণি হত্যা নিষিদ্ধ। অঙ্গহানি, নির্যাতন বা বিষ প্রয়োগে হত্যা—সবই অপরাধ। সংকটাপন্ন বা অনিরাময়যোগ্য প্রাণির ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যায়।
আইন ভঙ্গ করলে প্রথমবার ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা জরিমানা, পুনরাবৃত্তিতে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা। ভ্রাম্যমাণ বা মোবাইল কোর্টও এই অপরাধের বিচার করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মতে, প্রাণি হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি এই আইনে দুই বছর। তবে প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা থাকায় এসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাস্তির আওতায় আনা যায় না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা


মুসলিম যুবককে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর অভিযোগ
ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন পান্না