আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

খালেদা জিয়ার জানাজার ময়দানে হাসিনার বিচারের দাবি জনতার

বিশেষ প্রতিনিধি

খালেদা জিয়ার জানাজার ময়দানে হাসিনার বিচারের দাবি জনতার

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জঘন্যতম মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি রেখে শেখ হাসিনা তিলেতিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে তাকে সব ধরনের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় খালেদা জিয়া সিক্ত। অপরদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালানোর আগে রান্না করা খাবারও খেয়ে যেতে পারেননি। এখন মৃত্যুপরোয়ানা তার মাথার ওপরে ঝুলছে।’

লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বুধবার বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ময়দান এক মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও আশেপাশের এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। জানাজার আগে সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিজ্ঞাপন

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যায় ও অবিচারের ঘটনা তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে জনতার ভেতর থেকে গগনবিদারী স্লোগান ওঠে। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা ময়দান।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে আবদ্ধ ছিলেন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দেশনেত্রী। সমগ্র দেশবাসী সাক্ষী যে, হেঁটে তিনি কারাগারে প্রবেশ করেছিলেন, কিন্তু নির্জন কারাগার থেকে তিনি বের হলেন চরম অসুস্থতা নিয়ে।’

দলের পক্ষ থেকে পাঠ করা এ জীবন বৃত্তান্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, ‘দেশ-বিদেশের চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় চার বছরে তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা না দেওয়ায় তার অসুস্থতা ক্রমে বেড়েছে। ফলে এভাবে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো এ অপরাজেয় নেত্রীকে। তাই এ মৃত্যুর দায় থেকে ফ্যাসিবাদী হাসিনা কখনো মুক্তি পাবেন না।’

নজরুল ইসলাম খান বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম, বেড়ে ওঠা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, রাজনীতিতে আগমন, দেশগঠনে ভূমিকা রাখা ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিবরণ তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে তিনি এরশাদ সরকার, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকার ও জঘন্যতম মিথ্যা মামলায় শেখ হাসিনার স্বৈরাচার সরকারের হাতে নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনাগুলোও তুলে ধরেন।

খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়াতে আরাফাত রহমান কোকো বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তার লাশ যখন দেশে আনা হয় তখনো বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে গৃহবন্দী করে রাখে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার।

বেগম খালেদা জিয়ার আপসহীন চরিত্র তুলে ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠ করা এ পত্রে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন দেশে ও দেশের জনগণের স্বার্থে আপসহীন এক লড়াকু সৈনিক। তিনি কখনোই আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তির কাছে মাথানত করেননি। কোনো হুমকি, ভয় ও প্রলোভন তাকে দুর্বল করতে পারিনি। আপসহীন বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি দেশবাসীর হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনের অনন্ত এক অনুপ্রেরণা। অপরদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। আজ তিনি সব অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তকালের পথে চলে গেছেন। নজরুল ইসলাম খান এ বক্তব্য দেওয়ার সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।

পালানোর আগে রান্না করা খাবারও খেয়ে যেতে পারেনি হাসিনা

শেখ হাসিনার অপকর্ম, জনঘৃণা ও ভারতে পলায়নের বর্ণনা দিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে রয়েছে দেশের কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। অপরদিকে যারা তাকে গৃহহীন করেছে, পুত্রহারা করেছে ও তিলেতিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর আগে তার রান্না করা খাবারও খেয়ে যেতে পারেননি। মৃত্যু পরোয়ানা এখন তার মাথার ওপর ঝুলছে। খালেদা জিয়ার কাছে এ দেশের মাটি ও মানুষ ছিলো সবকিছু। তিনি এ দেশেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান নজরুল ইসলাম খান।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন