পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি কেবল একটি রাজনৈতিক সমঝোতা নয় উল্লেখ করে বলেন, এটি দেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রেখে শান্তি, সহাবস্থান এবং ন্যায্যতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত একটি মহৎ অঙ্গীকার।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বছর পূর্তি উপলক্ষে পাহাড়ি অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে `পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: সম্প্রীতিকে সমৃদ্ধিতে রূপান্তরিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসী ও সরকারের মধ্যে একটি বোঝাপড়া হিসেবে উল্লেখ করেন, যা সকলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতময় সমস্যার সমাধান করাই এই চুক্তির প্রক্রিয়া।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যানদের নির্বাচনের পরিবর্তে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান দরকার। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হন। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদগুলোতে যেসকল বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও প্রবিধান তৈরি করা জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিধি-বিধান সহজীকরণের চেষ্টা চলছে।
উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক ই-লার্নিং সুবিধা পৌঁছানো এবং সমতাভিত্তিক জীবনমান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে এবং আরও বিতরণের প্রয়োজন রয়েছে। রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা 'সোশাল পুলিসিং' বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নেগোসিয়েশন নিয়ে আলোচনা না হওয়ায় খেদ প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি দ্রুত ভোটের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম তিন জেলা পরিষদে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকে এগোনোর কথা জানান। তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি এবং এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির চিন্তা করছে সরকার। সচিব শান্তি বজায় রাখতে বিতর্কের পরিবর্তে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলাম, যিনি প্রজেক্টরের মাধ্যমে চুক্তির পর থেকে সরকারের ১ হাজার ৮০ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধিসহ সকল সাফল্যের চিত্র ধারাবাহিকভাবে সুন্দরভাবে তুলে ধরেন।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রাশিদা ফেরদৌস এনডিসি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম কুমার চাকমা সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।

