মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

খামারি-কৃষকদের বিদ্যুৎ বিলের বৈষম্য দূর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৯

দেশের প্রান্তিক খামারি ও মৎস্যচাষিদের বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, কৃষকেরা যে রেটে ভর্তুকিপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ পান, খামারিরা তা পান না; বরং তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা কমার্শিয়াল রেটে বিল দিতে হয়। এটি এক ধরনের অর্থনৈতিক অন্যায়। সরকার এ বৈষম্য দূর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে মৎস্য চাষীরাও কৃষকের মতো ভর্তুকিপ্রাপ্ত রেটে বিদ্যুৎ সুবিধা পান। এজন্য বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে, কিন্তু এ উদ্যোগ ছোট খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর চৌধুরী মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ক্যাব যুব সংসদ–২০২৫’-এর সপ্তম সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নগর-গ্রামের বৈষম্যও স্পষ্ট। ঢাকায় অকারণে যত বিদ্যুৎ অপচয় হয়, গ্রামের মানুষ সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখে থাকে। রাঙামাটির মতো অঞ্চলে দিনে পাঁচ-ছয়বার লোডশেডিং হয়, অথচ সেই জেলার পাশের পাওয়ার স্টেশন থেকেই শত শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। অন্তত বিদ্যুতের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ টেনে ফরিদা আখতার বলেন, “আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। শহরকেন্দ্রিক ভোগবাদ ও গ্রামীণ বঞ্চনা একসঙ্গে চলতে পারে না।”

‘নেট জিরো কার্বন এমিশন’ ধারণাকে ধনী দেশগুলোর “নতুন অর্থনৈতিক প্রতারণা” বলে আখ্যা দেন তিনি। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো প্রকৃত অর্থে কার্বন নির্গমন কমাতে চায় না; বরং ‘নেট জিরো’ ধারণার আড়ালে তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবসা ও কর্পোরেট মুনাফা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “নেট জিরো মানে একদিকে কার্বন ছাড়বে, আরেকদিকে কার্বন কমানোর প্রযুক্তি বিক্রি করবে। এর মাধ্যমে তারা এক ধরনের ‘টেকনোলজিক্যাল ব্যবসা’ চালাচ্ছে।”

“আমরা কার্বন নির্গমনের অপরাধী নই, বরং ভুক্তভোগী। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও আমাদের ওপর নানা শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধনী দেশগুলো দায় নিতে চায় না, বরং নানাভাবে দায় এড়িয়ে চলছে," বলেন তিনি।

আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ‘ইনডেমনিটি আইন’ করা হয়েছিল চৌর্যবৃত্তিকে আইনি বৈধতা দিতে। তাঁর ভাষায়, “এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইন, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এলে অবশ্যই এই আইন বিলুপ্ত করা হবে।”

রিজভী আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু বর্তমান সরকার সে পথে আগায়নি। “এই সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন কমিয়ে ফেলেছে, কারণ সেখানে দ্রুত অর্থলাভের সুযোগ নেই। জীবাশ্ম জ্বালানির নামে তারা টাকা লুট করেছে,”- বলেন তিনি।

বিএনপির ৩১ দফার পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, “পরবর্তী সরকারে আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের দিকে যাব। ২৫ কোটি বৃক্ষরোপণ, ২০ হাজার কিলোমিটার জলভূমি পুনরুদ্ধার, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ আমাদের মূল প্রতিশ্রুতি।”

তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, “আমাদের দেশে সূর্যতাপ ও বায়ুর সীমাবদ্ধতা থাকলেও আখসহ কৃষিপণ্য থেকে বিকল্প জ্বালানির উপায় বের করা সম্ভব। প্রযুক্তিবিদরা ইতোমধ্যে নানা প্রস্তাব দিয়েছেন, সরকারকে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে।”

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ক্যাব যুব সংসদের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে তরুণদের অংশগ্রহণে জ্বালানি, পরিবেশ, এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত