ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্বাচন সামগ্রী প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিদেশে বসবাসকারী ভোটারদের জন্য ‘আউট অফ কান্ট্রি ভোটিং’–এর প্রক্রিয়াও চলছে। ৫৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রবাসীদের এই অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে এটি জেনে কমনওয়েলথ মহাসচিব সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এটি সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়োরকর বচওয়েকের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, অগ্রগতি, বিদেশে ভোট প্রদান, রেফারেন্ডামসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
রোববার সিইসির সঙ্গে নির্বাচন ভবনে এ সভা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিষয়ে তুলে ধরে আখতার আহমেদ জানান, কমনওয়েলথ মহাসচিব বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান।
তিনি আরও বলেন, আইসিপিভির আওতায় দেশের ভেতরে প্রায় ১০ লক্ষ ভোটার যারা বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ দায়িত্বে নিয়োজিত তাদেরও ভোটদানের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। এটিও মহাসচিবের কাছে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
রেফারেন্ডাম প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ জানান, মহাসচিব বলেছেন যে একই দিনে রেফারেন্ডাম আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য বাড়তি দায়িত্ব। তবে ইসি যে প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে, তা দেখে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
নারী ভোটার অংশগ্রহণ ও ভোটার তালিকা সংশোধনমহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত সংখ্যাগত তথ্য জেনে মহাসচিব প্রশংসা করেন। মৃত ভোটারদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে—এই উদ্যোগকেও তিনি ভালো সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব মিসইনফরমেশন ও ফেক নিউজের বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সতর্ক থাকতে বলেন। জবাবে ইসি জানায়, গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিয়মিত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও সম্প্রসারিত হবে।
মহাসচিব বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা—ট্রাস্ট ইন ইলেকশন সিস্টেম—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এজন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো জরুরি। ইসি জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রচার চলছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোও সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হয়। এতে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পর্যবেক্ষক ও বিদেশি মনিটরিং
আখতার আহমেদ বলেন, মহাসচিব জানিয়ে দিয়েছেন—৫৬ সদস্য দেশের সংগঠন হিসেবে কমনওয়েলথ প্রয়োজন হলে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। ব্রিটেনের সহযোগিতা পাওয়ায় তিনিও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো হবে। মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন—তারা এসে নির্বাচনকে আরও ক্রেডিবল করতে ভূমিকা রাখবেন।
তিনি আরও জানান, এখনো পর্যবেক্ষক দলের সংখ্যা বা পাঠানোর সময় বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট হয়নি। প্রবাসী পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচন পর্যালোচনা করে তাদের অবস্থান জানাবেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
মহাসচিব দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান। জবাবে ইসি জানায়, সারাদেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন—এই তিন জোনে ভাগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সহযোগিতার বিষয়
আখতার আহমেদ বলেন, “কমনওয়েলথ জিজ্ঞেস করেছে—আপনারা কী ধরনের সহযোগিতা চান? তবে আমরা এখনো নির্দিষ্ট করে কিছু বলিনি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোথায় সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে, তা নির্ধারণ করতে কিছু সময় লাগবে।”
সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস
আলোচনার শেষাংশে মহাসচিব নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ওপর আস্থা ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে।
আখতার আহমেদ বলেন, “আলোচনাটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে এবং মহাসচিব আমাদের প্রস্তুতিকে সমর্থন ও আস্থা জানিয়েছেন। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
শেষে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, এবারের নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ও পার্টিসিপেটরি হবে।

