আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বিজয় দিবসে গণতন্ত্রে উত্তরণই হোক প্রত্যাশা

বিজয় দিবসে গণতন্ত্রে উত্তরণই হোক প্রত্যাশা

রাত পোহালেই ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের দিন। মুক্তির দিন।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই ভূখণ্ডের মানুষের নিজের ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষার মুক্তি ঘটে এই দিনে।

বিজ্ঞাপন

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে কাল ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫। আমাদের গৌরবময় বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্ণ হলো। শুরু হলো ৫৫ বছরের যাত্রা।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের উজ্জ্বলতম তারিখ ১৬ ডিসেম্বর। কারণ এদিন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গ্লানিকর পরাজয় হয়েছিল। তারা এই দিনে চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে স্বাধীন হওয়ার আনন্দে আমরা উদ্বেলিত ছিলাম। এ দেশের মানুষের এর আগের ২৬৬টি রুদ্ধশ্বাস দিন কেটেছে ঠিক এই ১৬ ডিসেম্বরের দিনটির প্রতীক্ষায় কাতর হয়ে। বিজয়ের খবর পেয়ে তাই এই দিন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করে ঝাঁকে ঝাঁকে মুক্তিযোদ্ধারা। পথে পথে শত শত উল্লসিত জনতা সেদিন ঘিরে ধরেছিল তাদের। আনন্দে উদ্বেলিত মানুষ সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে, বুকে বুক জড়িয়ে এবং উল্লাসে ফেটে পড়ে তাদের নামে বিজয় ধ্বনি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল। কারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জাতির অহংকার।

বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস আজ এমন একসময়ে উপস্থিত হয়েছে, যখন গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জুলাই বিপ্লবী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলিতে প্রাণনাশের চেষ্টা এরই আলামত। তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্র যাতে ব্যর্থ করে দেওয়া যায়, সে জন্য দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলোকে বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, দেশের প্রশ্নে সবার ‘কমন শত্রু’ পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ দেশের সাধারণ মানুষ সবসময়ই একটি অংশগ্রহণ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা আশা করে। ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সেটি পূরণ হবে, বাংলাদেশ গণতন্ত্রে উত্তরণ হবে—সেটাই হোক ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রত্যাশা।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যে স্মৃতি এখনো চোখে ভাসছে

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিজয়ের দিন সম্পর্কে বালক বয়সের আমার স্মৃতিও অম্লান আছে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পীরের গাঁওয়ে বোনের বাড়িতে ছিলাম। শৈশব ও কৈশোরবেলা সেখানেই কেটেছে। সেদিন বিজয়ের খবর পেয়ে আমরা বালকরা গ্রামজুড়ে দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি করেছিলাম। বিজয়ের আনন্দে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। কেউ ধানের ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম, গান গাইছিলাম, কেউ আবার পুকুরে লাফিয়ে পড়েছিলাম। সূর্যের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা নিয়ে গ্রামীণ সড়কে মিছিল করছিলাম। দুপুরের পর হঠাৎ একজন দৌড়ে এসে জানাল আমাদের গ্রামের ‘মাইঝের বাড়ি’তে মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে সবাই হই হই করে দৌড়ে যাই ‘মাইঝের বাড়ি’তে। না, শুধু আমরাই নই, সেদিন সব বয়সি মানুষই চারপাশের গ্রাম থেকে এসেছিল। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। তাদের পাশে রাখা ছিল রাইফেল। বীর যোদ্ধাদের চোখের সামনে দেখছি সে যে কী আনন্দ! আমাদের চোখে তারা সাধারণ কোনো মানুষ নন, তারচেয়ে বেশি কিছু ছিলেন। ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের শরীর ছুঁয়ে তাই আমরা অন্যরকম অনুভূতি উপভোগ করছিলাম। নিজেদের খুব ধন্য মনে হয়েছিল। ঘুম থেকে ওঠার পর মুক্তিযোদ্ধারা বড়দের সালাম জানিয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা কিছু সময় শুনিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি ভোলার নয়।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের দিনটি নিয়ে আমারই নয়, এ দেশের সব বয়সি মানুষেরই আছে নানা রকম স্মৃতি। বিজয়ের মুহূর্তটি সেদিন মুক্তিযুদ্ধের নায়করা কীভাবে উপভোগ করেছিলেন? মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার তার ‘আত্মপক্ষ’ শীর্ষক স্মৃতিমূলক লেখায় উল্লেখ করেন এভাবে, ‘কলকাতা থেকে আমি যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমার একটি মাত্র অনুভূতিই ছিল। সেটি কোনো ব্যক্তিগত গৌরবের বা অর্জনের নয়, আল্লাহতায়ালার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতার যে, আমি স্পর্শ করতে পেরেছি আমার স্বাধীন দেশের মাটি। আমরা যখন রমনা ময়দানের দিকে যেতে থাকি, তখন রাস্তার দুই পাশের বহু মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই মুক্তির আনন্দে আকুলভাবে কাঁদতে দেখেছি। তাদের মুখে যে অভিব্যক্তি ছিল, সেটি মুক্তির। একটি আতঙ্কিত অবস্থা থেকে একটি নিশ্চিত অবস্থায় উত্তরণের। রেসকোর্স ময়দানে অসংখ্য লোকের সঙ্গে আমাকে কোলাকুলি করতে হয়েছে। এর মধ্যেও ছিল মানুষের অনাবিল আনন্দ এবং স্বস্তির অভিব্যক্তি।’ বেশ কজন সেদিন আমাকে বলেছেন, ‘আজ রাত থেকে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাবো।’

খালেদা জিয়ার জীবনে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

এবার বিজয় দিবস এমন একটি সময়ে আমাদের সামনে উপস্থিত—বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে নিয়ে সারা দেশ উৎকণ্ঠিত। তাকে এখন ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

১৬ ডিসেম্বরের দিনটি খালেদা জিয়ার জীবনেও এক অনন্য দিন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রায় সাড়ে ৫ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই শিশুসন্তানসহ তাঁকে ক্যান্টনমেন্টের একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। সেখানে তাঁকে কাটাতে হয় বিভীষিকাময় বন্দিজীবন।

একাত্তরের ২৬ মার্চ তার স্বামী তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দুই সন্তানসহ খালেদা জিয়াকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। খালেদা জিয়া কিছুদিন চাচার বাসায় ছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে দুই শিশুপুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে সঙ্গে নিয়ে বোরকা পরে লঞ্চে করে পালিয়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। সেখান থেকে বড় বোন খুরশীদ জাহান হকের ঢাকার বাসায় আসেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা জেনে যায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ঢাকায়। তারা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে খালেদা জিয়াকে।

এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে তার দুলাভাই মোজাম্মেল হক পেট্রোবাংলার তৎকালীন কর্মকর্তা তার বন্ধু ড. এস আব্দুল্লাহর বাসায় রেখে আসেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২ জুলাই, ১৯৭১ তাঁকে ওই বাসা থেকে দুই শিশুপুত্রসহ গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টের একটি বাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি মুক্ত হন। বড় বোন খুরশীদ জাহান হক তাঁকে ওই বন্দিদশা থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তখন তাঁর পরিচিতি মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাদানকারী, জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জিয়ার স্ত্রী হিসেবে।

Victory-Day

দৈনিক বাংলার প্রখ্যাত সাংবাদিক মনজুর আহমদ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বন্দিদশা থেকে মুক্তির পর খালেদা জিয়ার প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সে সম্পর্কে মনজুর আহমদ তার ‘একাত্তর কথা বলে’ বইতে লেখেন—‘১৬ ডিসেম্বর বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গিয়ে ওঠেন তার এক চাচার বাসায়। সেখান থেকে পরদিন শান্তিনগরে বোনের বাসায়। খবর পেয়েই হানা দিলাম শান্তিনগর রেললাইনের পাশের এক বাড়ির দোতলায়। সঙ্গে ছিলেন দৈনিক বাংলার বার্তা সম্পাদক ফওজুল করিম আর আলোকচিত্রী গোলাম মাওলা। ফওজুল করিম তারা ভাই ছিলেন জিয়া সাহেবের চাচাতো বড় ভাই। কথা হলো অনেকক্ষণ ধরে বেগম জিয়ার সঙ্গে। গৃহবন্দি থাকাকালে খালেদা জিয়াকে কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল একেবারে বন্ধ। রেডিও নেই, সংবাদপত্র নেই। এ সময়ের কোনো ঘটনাই তাঁর জানা নেই। এ বাসাতেই কদিন পরে এসে ওঠেন জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে মুক্ত স্বদেশ ভূমিতে তাঁর গৌরবময় প্রত্যাবর্তন।’

ডিসেম্বরে স্মরণীয় আরো তারিখ

ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। একাত্তরের ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দিবসই রক্তের অক্ষরে লেখা। তারপরও এমন কয়েকটি দিন, এমন কয়েকটি তারিখ রয়েছে, যা গৌরবের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচেয়ে স্মরণীয় দিনটিই ১৬ ডিসেম্বর।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৩ ডিসেম্বর একটি উল্লেখযোগ্য দিন। এটি প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের এক পরিণতি নির্ধারক দিন। পাকিস্তান এদিন ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলোয় এবং পশ্চিম সীমান্তে সরাসরি আক্রমণ করে বসে। ফলে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পূর্ব রণাঙ্গনে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর আক্রমণ চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করে। ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ ১৩ দিনের বিজয়গাঁথা রচিত হবে—এটি যেন নির্ধারিত হয়েছিল ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১।

৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ছিল আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিন। মুজিবনগর সরকারের অনুরোধে এদিন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে ভারত একে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বরণ করে নেয়। বাংলাদেশকে ভারতের আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিচয় থেকে মুক্তি দেয়।

একাত্তরের ৩ ডিসেম্বর থেকে যখন চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তখন নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরেও চলতে থাকে এক কূটনৈতিক লড়াই। ৪ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে প্রবল উত্তেজনাকর এ লড়াই। পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বাংলাদেশের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন ছিল স্নায়ুযুদ্ধের যুগ। দুই পক্ষের তুমুল বিতর্কের মুখে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে জাতিসংঘ। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ সম্পন্ন হয়ে গেলেও নিরাপত্তা পরিষদ মতৈক্যে আসতে পারেনি। আমাদের বিজয়ের চার দিন পর ২১ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাতে বলা হয়, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘যুদ্ধবিরতি’ স্থায়ী হতে হবে এবং ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের সেনা যার যার সীমান্তের পেছনে ফিরিয়ে নিতে হবে।” ততদিনে অবশ্য ঢাকাসহ সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পত পত করে উড়তে থাকে।

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এর দিনটি ছিল একটি কালিমালিপ্ত দুঃখময় দিন। পরাজয় আসন্ন জেনে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে বেছে বেছে আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। এই গণহত্যা ছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শেষ মরিয়া আঘাত। তাদের এই নৃশংসতার শিকার হয়েছিলেন শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক ও পেশাজীবীসহ দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা।

গণতন্ত্রে উত্তরণে ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলা আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মৌলিক, মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে সাজানো ও মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে জেলে নেওয়া হলো। তিনি তখন জনগণকে বলে যান, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি কখনো পিছপা হননি এবং হারেননি। শেষ দিন পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাবেন। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন ভারতে। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষিত হয়েছে, সে নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সারা দেশের মানুষ তার জন্য দোয়া করছে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ১/১১-এর জরুরি সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি লন্ডনে চিকিৎসা ও নির্বাসিত জীবন কাটান। ১৭ বছর পর তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করছেন। যতটুকু জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন মাকে দেখতে।

আজ ১৬ ডিসেম্বর যখন সমাগত, গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের তারিখ যখন এগিয়ে আসছে, তখন এই নির্বাচন বানচালের জন্য ফ্যাসিবাদী শক্তি যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন তা নস্যাৎ করে দিতে হবে। তাই এ সময়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বুঝতে হবে তাদের কমন শত্রু পরাজিত আওয়ামী লীগ এবং প্রতিবেশী ভারত। এরা যেন কোনোভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণ ব্যাহত করতে না পারে—সেটাই হোক ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের প্রত্যাশা।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, আমার দেশ

abdal62@gmail.com

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন