
মিনার রশীদ

শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ১০ টাকা সের দরে জনগণকে চাল খাওয়াবেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। এসব দইয়ের ডিব্বা কেমন করে চুন হয়েছিলÑতা সবার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। সেই পোড়া জিহ্বা নিয়ে দেশবাসী আর্তনাদ করে বলেছিল, ‘মাগো দশ টাকা সের দরে চাউলের দরকার নাই, শুধু কুত্তাগুলি সামলান!’ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের পর এই কুত্তাগুলো তাড়ানোর পর ১৩ তারিখ আবার সমাবেশ করার ডাক দিয়েছে! এই সাহস তারা পেয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে দ্রুত অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টির কারণেই!
তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন—বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হবে ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি’ গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ রকম চুন খেয়ে বাঙালের মুখ অনেকবার পুড়েছে, তাই এখন দই দেখলেও ভয় লাগে! তারেক রহমানের প্রতিও আতঙ্কিত জনগণ একই আবেদন জানাচ্ছে, ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দরকার নেই, আগে আওয়ামী কুত্তাগুলোর ফিরে আসা থামান।
এমন কঠিন সময়ে বিএনপি মহাসচিব উল্টো ডোজ দিয়েছেন। তিনি এবার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, নৌকার ভোটাররা হতাশ হবেন না, ধানের শীষ পাশে আছে। বিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই অনেক হিসাবনিকাশ কষেই এই রাজনৈতিক ঝুঁকিটুকু নিয়েছেন। নতুন চার কোটি ভোটার ওনার এই রাজনৈতিক গ্যাম্বলিংকে কেমনভাবে গ্রহণ করবে, সেটিও গবেষণার বিষয়। আমরা জানি, নির্বাচনের আগে আগে একটা জনজোয়ার সৃষ্টি হয়! মানুষের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক মাংসপেশির মতো, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক পার্টস রয়েছে। তার এসব বক্তব্য অনেক অনৈচ্ছিক কাজের (আওয়ামী অলিগার্ক এবং নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া) দায় দলের ওপর চাপতে পারে এবং তার এসব বক্তব্য দলের বিপক্ষে জনজোয়ার সৃষ্টি করে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ আওয়ামী রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকেই এসব চাঁদাবাজ ও অলিগার্কদের কর্মকাণ্ড থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চেয়েছিল।
কাজেই তারেক রহমানের ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির প্রতি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করাই নিরাপদ বলে মনে হয়। বাংলাদেশের জিডিপি বর্তমানে প্রায় ৪৫০-৪৭০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন প্রায় দুই গুণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সঠিক নীতি অনুসরণ করলে এটি ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তজ্জন্যে হেভি স্মার্ট কোনো রাষ্ট্রনায়কের দরকার নেই। একজন এভারেজ মানের সরকার এই কাজটি করতে পারবে যদি; এক. দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। দুই. যদি অলিগার্কদের প্রভাব ও আছরমুক্ত সৎ এবং সাহসী কিছু মানুষ সরকারে থাকেন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এ দুটি শর্তপূরণ হলেই ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে এই টার্গেট অর্জিত হতে পারে! আজকের কলামটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েই আলোচনা করব। পরবর্তী কলামে সৎমানুষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা থাকবে।
এসব স্বপ্ন পূরণ করতে হলে প্রথমেই আমাদের রাজনীতির মূল রোগটি ডায়াগনোসিস করতে হবে। স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকেই রোগটির উৎপত্তি। আওয়ামী মানসিকতা কোনোভাবেই বিএনপিকে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। বিশেষ করে, শেখ হাসিনা কখনোই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার বিশাল(?) বাবার সম্মুখে একজন নগণ্য ‘৪০০ টাকার মেজর’-এর ওপরে ভাবতে পারেননি! আওয়ামী লীগ ও তাদের সব বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারিজ বিএনপিকে সবসময় একটা লুক-ডাউন দৃষ্টি নিয়ে দেখত।
এই মানসিকতার কারণেই বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখলে আওয়ামী লীগ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। এর ফল আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছি। আওয়ামী লীগের এই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে ইন্ডিয়া। এর ফল কী হয়েছে, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
এখন ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিন্যাশে বিএনপি বনাম জামায়াত একই অবস্থানে চলে এসেছে। একটা শক্তি আবার রাজনীতিতে ব্রাহ্মণ বনাম নমঃশূদ্রের খেলা চালু করতে চাচ্ছে। কারণ নমঃশূদ্র দলটিকে যেকোনোভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাখা ব্রাহ্মণ দলটির জন্য জায়েজ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স ভর করছে এখন বিএনপির ওপর।
জামায়াত অনেকটা বিএনপির একদা গরিব স্বজনদের মতো যে এখন বড়লোক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে চায়। সংগত কারণেই বিএনপির এটি সহ্য হচ্ছে না। জামায়াতের এই উত্থান ও চ্যালেঞ্জকে বিএনপি মনে করে জামায়াতের ‘মোনাফেকি’ হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একজন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী সর্বপ্রথম জামায়াতের বিরুদ্ধে এবং বিএনপির পক্ষে এই ফতোয়াটি দিয়েছিলেন!
অন্যদিকে ‘একদা গরিব স্বজনের’ ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে জামায়াতও বোধহয় পুরোপুরি মুক্ত হতে পারছে না। বিএনপির সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সের বিপরীতে তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এর ফলে আসল বিএনপি থেকে গুপ্ত বটলীগের পার্থক্য করা যেমন কঠিন, তেমনি আসল জামায়াত থেকে গুপ্ত বটলীগ আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই বটবাহিনী দুদিক থেকেই হাওয়া দেওয়া শুরু করেছে বলে জোর প্রতীয়মান হচ্ছে।
কাজেই তারেক রহমান যদি এসব রোগ থেকে নিজের দল এবং প্রতিপক্ষকে মুক্ত করতে পারেন, তবে হাফ ট্রিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নিত করা মোটেই কঠিন হবে না। তজ্জন্যে মিঠা ওষুধের চেয়ে এই তিতা ওষুধটির কথা বিবেচনা করতে হবে। কারণ জাতি হিসেবে আমরা বরাবরই একটু বেশি পাহলোয়ান কিসিমের। নেতা ‘ধইরা’ আনতে বললে আমরা ‘বাইধা’ আনি।
মগজে যাদের বেশি চেতনা ঢুকে পড়েছে, তাদের ডিচেতনাইজ করতে না পারলে এই জাতির মুক্তি নেই! মগজে বা দিলে এই চেতনা নিয়ে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়া অসম্ভব হবে। খণ্ডিত জাহাজ নিয়ে যে ধরনের সাগর পাড়ি দেওয়া যায় না, তেমনি খণ্ডিত জাতি নিয়েও বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না।
মাফিয়া রানির অর্থমন্ত্রী ৪ হাজার কোটি টাকার লুটপাটকে যে রাতে বলেছিলেন ‘পি-নাট’Ñসেই রাতেও কয়েক কোটি আদম সন্তান ক্ষুধার্ত পেটে ঘুমুতে গিয়েছে। মাফিয়া রানির এক পিয়নই লুটেছিল ৪০০ কোটি টাকা। এটা কেমন যেন গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছিলেন সেই দস্যুরানি। হাদিসে আছে, ‘তুমি পেট পুড়ে খেলে অথচ প্রতিবেশী না খেয়ে রাত কাটাল, তাহলে তুমি মুসলমান নও।’ অনেকেই ভাবতে পারেন, আমরা যেহেতু ধনী এলাকায় থাকি, তাই এই হাদিস আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
এই কথাটি শুধু প্রতিবেশী নয়, আধুনিক রাষ্ট্রটিই এই হাদিসের আওতায় পড়ে। কাজেই এ দায় থেকে আমরা কেউ মুক্ত নই। মাফিয়া রানি তার অলিগার্কদের সঙ্গে নিয়ে ২৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৩০ লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন। এই টাকা দিয়ে ছয় কোটি যুবকের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা, ফার্ম তৈরি করে দিলে এই দেশে আর কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ থাকত না। কাজেই এদেশের কয়েক কোটি বনি আদম যে ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে ঘুমুতে যাচ্ছে, তার দায় কি আমার-আপনার ওপর বর্তাচ্ছে না?
লুটপাটের সময় এদেশে টাকার অভাব নেই। তখন টাকার অঙ্ক হাজার কোটির নিচে নেই। অথচ এদেশের শিক্ষক সমাজ সামান্য কয়েকটা টাকা বেতন বাড়ানোর জন্য মাফিয়া রানির আমলে যেমন মরিচ-পানির স্প্রে খেয়েছেন, বর্তমান আমলেও জলকামানের ধাওয়াসহ পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছেন। আর আমাদের রাজনীতির আলাল ও দুলাল ভাইয়েরা অর্ধশতাব্দী পরও সেই চেতনার ভূতের আহার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন!
কিছু নেতানেত্রী এখনো চৈত্র মাসের ওয়াজ শীতকালে করা অব্যাহত রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। ওনারা কেন এমন করছেন, তা অবোধগম্য ঠেকছে। আমাদের মতো আমেরিকারও একটা স্বাধীনতা-সংগ্রাম হয়েছিল, ব্রিটিশ বাহিনীর সহায়তাকারী হুবহু একই কিসিমের অনেক রাজাকারও ছিল। যেহেতু আমেরিকার জনগণের মধ্যে চেতনার পরিমাণ কম ছিল, কাজেই সে রাজাকারদের ইতিহাস আমেরিকার পরবর্তী প্রজন্ম শতবর্ষের আগেই ভুলে গেছে! আমেরিকা যেমন ব্রিটিশদের প্রতি কিংবা তাদের রাজাকারদের (সহযোগীদের) প্রতি ঘৃণা জিইয়ে রাখেনি, তেমনি জাপানও আমেরিকানদের প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমা মারার ক্ষোভ জিইয়ে রাখেনি।
কাজেই আমরা জাপান-আমেরিকার মতো ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমির দিকে অগ্রসর হব, নাকি আফ্রিকার দেশগুলোর মতো চেতনার সাগরে যুগের পর যুগ হাবুডুবু খাব, তা নির্ভর করবে আমাদের হুঁশের ওপর।
আফ্রিকার অনেক দেশে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে । কিন্তু ওরা এগোতে পারছে না, কারণ এদের মধ্যেও আমাদের মতো ভয়ংকর চেতনা রয়েছে। যেই চেতনার প্রধান উপকরণ ঘৃণা, ঘৃণা আর ঘৃণা! ঘৃণার এই চক্র থেকে ওরা বের হতে পারছে না। কলোনিয়াল মাস্টাররা এখনো এসব ঘৃণা ও বিভক্তিতে আড়াল থেকে হাওয়া দেন। আমাদের এক কলিগ এঙ্গোলাতে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কান্ট্রি-ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। অন্য বন্ধু তার কাছে সে দেশ কেমন আছে তা জানতে চান। কলিগটি জবাব দেন, শেখ হাসিনা আর পাঁচ-ছয় বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলে আমাদের দেশটি যেখানে পৌঁছাতে, এই দেশটি বলতে পারেন সেখানেই আছে। অথচ দেশটিতে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদ, যা মনের সুখে শুষে নিচ্ছে আগের কলোনিয়াল মাস্টার।
একসময় গ্রামাঞ্চলের জেয়াফতে কলাপাতাকে ওয়ানটাইম প্লেটের মতো ব্যবহার করা হতো। তখন এক সম্প্রদায় কলাপাতার যেদিকে খেতেন প্রতিপক্ষ সম্প্রদায় উল্টোদিকে খেতেন! আমার মনে পড়ে, এ রকম এক জেয়াফতে এক মুরব্বি ধমক দিয়ে বলেছিলেন, এই ব্যাটা! উল্টো করে খাও, এই পিঠে হিন্দুরা খায়! জুলাইয়ের আগে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি ছিল এ রকম মানসিক অবস্থায়। এখন বিএনপি এবং জামায়াতকে একই ফ্যানোমেনায় স্থাপন করা হয়েছে। একজন যা করবে, অন্যজন তার উল্টোটা করবেনই! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এরা আমাদের আর সোজা হতে দেবে না।
জাতিকে এই পরিস্থিতি থেকে টেনে তোলার একটা সুযোগ তারেক রহমানের সামনে উপস্থিত হয়েছে। তিনি যদি দেশটিকে সত্যিকার অর্থেই ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমিতে রূপান্তর করতে চান, তবে তাকে একজন পলিটিশিয়ান থেকে সত্যিকার অর্থেই স্টেটমেনসুলভ ভূমিকায় নামতে হবে! একজন পলিটিশিয়ান হিসেবে তিনি সহজেই সামনের সব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের দলকে ম্যানুভার করে ক্ষমতায় চলে যেতে পারেন। কিন্তু একজন স্টেটমেন হিসেবে পুরো জাতিকে একত্র করে আগামী কয়েকশ বছরের জন্য জাতিকে একটা দিশা দেখাতে পারেন।
এ রকম প্রথম সুযোগটি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপর। কিন্তু তিনি বিরোধী শক্তির ওপর লাল ঘোড়া দাবড়াতে গিয়ে সেই সুযোগটি নষ্ট করেন। এখানে উল্লেখ্য, এই লাল ঘোড়া তিনি দাবড়িয়েছেন একসময়ের রাজনৈতিক সতীর্থদের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয় সুযোগটি পেয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনি তার সর্বোত্তম ব্যবহার করেছিলেন।
শহীদ জিয়া যেমন করে তার জনগণের মনটি পড়তে পেরেছিলেন, তেমনি জনগণের কাছে মাটির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে কখনোই দুর্বোধ্য লাগেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠের বোধবিশ্বাসকে যখন চেতনার ধামা দিয়ে চাপা দেওয়া শুরু হয়Ñসেই অবস্থা থেকে তিনি জাতিকে উদ্ধার করেন। নিজের জনগণকে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কমফোর্ট দিয়েছিলেন। আর এর বিনিময়ে তিনি তার জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। সে কারণেই শহীদ জিয়া যখন সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ সংযুক্ত করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযুক্ত করলেন, এরপর আর তাকে টুপি মাথায় দিয়ে ধার্মিকতার অভিনয় করতে হয়নি। এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন জয় করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যান! তখনো অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক লাফিয়ে বাড়তে থাকে। একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতি জনগণের এই আস্থাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লি কুয়ান ইউ ছিলেন এ রকম আরেকজন নেতা, যিনি তার জনগণের আস্থা শতভাগ উপভোগ করেছেন। মাহাথির মুহাম্মদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।
তারেক রহমানকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে চেতনার পুরো মেকানিজমটির বিপরীতে জনগণের পালসটি আগে বুঝতে হবে! তা না করে চেতনার চোরাবালিতে ঢুকে পড়লে সবকিছু আগের মতোই অগ্রসর হবে। তখন সব পরিকল্পনার মতো ট্রিলিয়ন ডলারের এই পরীটিও আকাশে উড়ে যাবে এবং ‘কল্পনা’ ঘাসের ওপর গড়াগড়ি খাবে।

শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ১০ টাকা সের দরে জনগণকে চাল খাওয়াবেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। এসব দইয়ের ডিব্বা কেমন করে চুন হয়েছিলÑতা সবার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। সেই পোড়া জিহ্বা নিয়ে দেশবাসী আর্তনাদ করে বলেছিল, ‘মাগো দশ টাকা সের দরে চাউলের দরকার নাই, শুধু কুত্তাগুলি সামলান!’ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের পর এই কুত্তাগুলো তাড়ানোর পর ১৩ তারিখ আবার সমাবেশ করার ডাক দিয়েছে! এই সাহস তারা পেয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে দ্রুত অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টির কারণেই!
তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন—বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হবে ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি’ গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এ রকম চুন খেয়ে বাঙালের মুখ অনেকবার পুড়েছে, তাই এখন দই দেখলেও ভয় লাগে! তারেক রহমানের প্রতিও আতঙ্কিত জনগণ একই আবেদন জানাচ্ছে, ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দরকার নেই, আগে আওয়ামী কুত্তাগুলোর ফিরে আসা থামান।
এমন কঠিন সময়ে বিএনপি মহাসচিব উল্টো ডোজ দিয়েছেন। তিনি এবার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, নৌকার ভোটাররা হতাশ হবেন না, ধানের শীষ পাশে আছে। বিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই অনেক হিসাবনিকাশ কষেই এই রাজনৈতিক ঝুঁকিটুকু নিয়েছেন। নতুন চার কোটি ভোটার ওনার এই রাজনৈতিক গ্যাম্বলিংকে কেমনভাবে গ্রহণ করবে, সেটিও গবেষণার বিষয়। আমরা জানি, নির্বাচনের আগে আগে একটা জনজোয়ার সৃষ্টি হয়! মানুষের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক মাংসপেশির মতো, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক পার্টস রয়েছে। তার এসব বক্তব্য অনেক অনৈচ্ছিক কাজের (আওয়ামী অলিগার্ক এবং নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া) দায় দলের ওপর চাপতে পারে এবং তার এসব বক্তব্য দলের বিপক্ষে জনজোয়ার সৃষ্টি করে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ আওয়ামী রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকেই এসব চাঁদাবাজ ও অলিগার্কদের কর্মকাণ্ড থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চেয়েছিল।
কাজেই তারেক রহমানের ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির প্রতি সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করাই নিরাপদ বলে মনে হয়। বাংলাদেশের জিডিপি বর্তমানে প্রায় ৪৫০-৪৭০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন প্রায় দুই গুণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সঠিক নীতি অনুসরণ করলে এটি ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তজ্জন্যে হেভি স্মার্ট কোনো রাষ্ট্রনায়কের দরকার নেই। একজন এভারেজ মানের সরকার এই কাজটি করতে পারবে যদি; এক. দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। দুই. যদি অলিগার্কদের প্রভাব ও আছরমুক্ত সৎ এবং সাহসী কিছু মানুষ সরকারে থাকেন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এ দুটি শর্তপূরণ হলেই ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে এই টার্গেট অর্জিত হতে পারে! আজকের কলামটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েই আলোচনা করব। পরবর্তী কলামে সৎমানুষের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা থাকবে।
এসব স্বপ্ন পূরণ করতে হলে প্রথমেই আমাদের রাজনীতির মূল রোগটি ডায়াগনোসিস করতে হবে। স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকেই রোগটির উৎপত্তি। আওয়ামী মানসিকতা কোনোভাবেই বিএনপিকে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। বিশেষ করে, শেখ হাসিনা কখনোই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার বিশাল(?) বাবার সম্মুখে একজন নগণ্য ‘৪০০ টাকার মেজর’-এর ওপরে ভাবতে পারেননি! আওয়ামী লীগ ও তাদের সব বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারিজ বিএনপিকে সবসময় একটা লুক-ডাউন দৃষ্টি নিয়ে দেখত।
এই মানসিকতার কারণেই বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখলে আওয়ামী লীগ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। এর ফল আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছি। আওয়ামী লীগের এই সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে ইন্ডিয়া। এর ফল কী হয়েছে, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
এখন ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিন্যাশে বিএনপি বনাম জামায়াত একই অবস্থানে চলে এসেছে। একটা শক্তি আবার রাজনীতিতে ব্রাহ্মণ বনাম নমঃশূদ্রের খেলা চালু করতে চাচ্ছে। কারণ নমঃশূদ্র দলটিকে যেকোনোভাবে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাখা ব্রাহ্মণ দলটির জন্য জায়েজ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স ভর করছে এখন বিএনপির ওপর।
জামায়াত অনেকটা বিএনপির একদা গরিব স্বজনদের মতো যে এখন বড়লোক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে চায়। সংগত কারণেই বিএনপির এটি সহ্য হচ্ছে না। জামায়াতের এই উত্থান ও চ্যালেঞ্জকে বিএনপি মনে করে জামায়াতের ‘মোনাফেকি’ হিসেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একজন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী সর্বপ্রথম জামায়াতের বিরুদ্ধে এবং বিএনপির পক্ষে এই ফতোয়াটি দিয়েছিলেন!
অন্যদিকে ‘একদা গরিব স্বজনের’ ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে জামায়াতও বোধহয় পুরোপুরি মুক্ত হতে পারছে না। বিএনপির সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্সের বিপরীতে তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এর ফলে আসল বিএনপি থেকে গুপ্ত বটলীগের পার্থক্য করা যেমন কঠিন, তেমনি আসল জামায়াত থেকে গুপ্ত বটলীগ আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই বটবাহিনী দুদিক থেকেই হাওয়া দেওয়া শুরু করেছে বলে জোর প্রতীয়মান হচ্ছে।
কাজেই তারেক রহমান যদি এসব রোগ থেকে নিজের দল এবং প্রতিপক্ষকে মুক্ত করতে পারেন, তবে হাফ ট্রিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নিত করা মোটেই কঠিন হবে না। তজ্জন্যে মিঠা ওষুধের চেয়ে এই তিতা ওষুধটির কথা বিবেচনা করতে হবে। কারণ জাতি হিসেবে আমরা বরাবরই একটু বেশি পাহলোয়ান কিসিমের। নেতা ‘ধইরা’ আনতে বললে আমরা ‘বাইধা’ আনি।
মগজে যাদের বেশি চেতনা ঢুকে পড়েছে, তাদের ডিচেতনাইজ করতে না পারলে এই জাতির মুক্তি নেই! মগজে বা দিলে এই চেতনা নিয়ে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়া অসম্ভব হবে। খণ্ডিত জাহাজ নিয়ে যে ধরনের সাগর পাড়ি দেওয়া যায় না, তেমনি খণ্ডিত জাতি নিয়েও বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যায় না।
মাফিয়া রানির অর্থমন্ত্রী ৪ হাজার কোটি টাকার লুটপাটকে যে রাতে বলেছিলেন ‘পি-নাট’Ñসেই রাতেও কয়েক কোটি আদম সন্তান ক্ষুধার্ত পেটে ঘুমুতে গিয়েছে। মাফিয়া রানির এক পিয়নই লুটেছিল ৪০০ কোটি টাকা। এটা কেমন যেন গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছিলেন সেই দস্যুরানি। হাদিসে আছে, ‘তুমি পেট পুড়ে খেলে অথচ প্রতিবেশী না খেয়ে রাত কাটাল, তাহলে তুমি মুসলমান নও।’ অনেকেই ভাবতে পারেন, আমরা যেহেতু ধনী এলাকায় থাকি, তাই এই হাদিস আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
এই কথাটি শুধু প্রতিবেশী নয়, আধুনিক রাষ্ট্রটিই এই হাদিসের আওতায় পড়ে। কাজেই এ দায় থেকে আমরা কেউ মুক্ত নই। মাফিয়া রানি তার অলিগার্কদের সঙ্গে নিয়ে ২৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৩০ লাখ কোটি টাকা লুট করেছেন। এই টাকা দিয়ে ছয় কোটি যুবকের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা, ফার্ম তৈরি করে দিলে এই দেশে আর কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ থাকত না। কাজেই এদেশের কয়েক কোটি বনি আদম যে ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে ঘুমুতে যাচ্ছে, তার দায় কি আমার-আপনার ওপর বর্তাচ্ছে না?
লুটপাটের সময় এদেশে টাকার অভাব নেই। তখন টাকার অঙ্ক হাজার কোটির নিচে নেই। অথচ এদেশের শিক্ষক সমাজ সামান্য কয়েকটা টাকা বেতন বাড়ানোর জন্য মাফিয়া রানির আমলে যেমন মরিচ-পানির স্প্রে খেয়েছেন, বর্তমান আমলেও জলকামানের ধাওয়াসহ পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছেন। আর আমাদের রাজনীতির আলাল ও দুলাল ভাইয়েরা অর্ধশতাব্দী পরও সেই চেতনার ভূতের আহার নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন!
কিছু নেতানেত্রী এখনো চৈত্র মাসের ওয়াজ শীতকালে করা অব্যাহত রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে। ওনারা কেন এমন করছেন, তা অবোধগম্য ঠেকছে। আমাদের মতো আমেরিকারও একটা স্বাধীনতা-সংগ্রাম হয়েছিল, ব্রিটিশ বাহিনীর সহায়তাকারী হুবহু একই কিসিমের অনেক রাজাকারও ছিল। যেহেতু আমেরিকার জনগণের মধ্যে চেতনার পরিমাণ কম ছিল, কাজেই সে রাজাকারদের ইতিহাস আমেরিকার পরবর্তী প্রজন্ম শতবর্ষের আগেই ভুলে গেছে! আমেরিকা যেমন ব্রিটিশদের প্রতি কিংবা তাদের রাজাকারদের (সহযোগীদের) প্রতি ঘৃণা জিইয়ে রাখেনি, তেমনি জাপানও আমেরিকানদের প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আণবিক বোমা মারার ক্ষোভ জিইয়ে রাখেনি।
কাজেই আমরা জাপান-আমেরিকার মতো ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমির দিকে অগ্রসর হব, নাকি আফ্রিকার দেশগুলোর মতো চেতনার সাগরে যুগের পর যুগ হাবুডুবু খাব, তা নির্ভর করবে আমাদের হুঁশের ওপর।
আফ্রিকার অনেক দেশে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে । কিন্তু ওরা এগোতে পারছে না, কারণ এদের মধ্যেও আমাদের মতো ভয়ংকর চেতনা রয়েছে। যেই চেতনার প্রধান উপকরণ ঘৃণা, ঘৃণা আর ঘৃণা! ঘৃণার এই চক্র থেকে ওরা বের হতে পারছে না। কলোনিয়াল মাস্টাররা এখনো এসব ঘৃণা ও বিভক্তিতে আড়াল থেকে হাওয়া দেন। আমাদের এক কলিগ এঙ্গোলাতে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কান্ট্রি-ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। অন্য বন্ধু তার কাছে সে দেশ কেমন আছে তা জানতে চান। কলিগটি জবাব দেন, শেখ হাসিনা আর পাঁচ-ছয় বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলে আমাদের দেশটি যেখানে পৌঁছাতে, এই দেশটি বলতে পারেন সেখানেই আছে। অথচ দেশটিতে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদ, যা মনের সুখে শুষে নিচ্ছে আগের কলোনিয়াল মাস্টার।
একসময় গ্রামাঞ্চলের জেয়াফতে কলাপাতাকে ওয়ানটাইম প্লেটের মতো ব্যবহার করা হতো। তখন এক সম্প্রদায় কলাপাতার যেদিকে খেতেন প্রতিপক্ষ সম্প্রদায় উল্টোদিকে খেতেন! আমার মনে পড়ে, এ রকম এক জেয়াফতে এক মুরব্বি ধমক দিয়ে বলেছিলেন, এই ব্যাটা! উল্টো করে খাও, এই পিঠে হিন্দুরা খায়! জুলাইয়ের আগে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি ছিল এ রকম মানসিক অবস্থায়। এখন বিএনপি এবং জামায়াতকে একই ফ্যানোমেনায় স্থাপন করা হয়েছে। একজন যা করবে, অন্যজন তার উল্টোটা করবেনই! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এরা আমাদের আর সোজা হতে দেবে না।
জাতিকে এই পরিস্থিতি থেকে টেনে তোলার একটা সুযোগ তারেক রহমানের সামনে উপস্থিত হয়েছে। তিনি যদি দেশটিকে সত্যিকার অর্থেই ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমিতে রূপান্তর করতে চান, তবে তাকে একজন পলিটিশিয়ান থেকে সত্যিকার অর্থেই স্টেটমেনসুলভ ভূমিকায় নামতে হবে! একজন পলিটিশিয়ান হিসেবে তিনি সহজেই সামনের সব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের দলকে ম্যানুভার করে ক্ষমতায় চলে যেতে পারেন। কিন্তু একজন স্টেটমেন হিসেবে পুরো জাতিকে একত্র করে আগামী কয়েকশ বছরের জন্য জাতিকে একটা দিশা দেখাতে পারেন।
এ রকম প্রথম সুযোগটি পেয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপর। কিন্তু তিনি বিরোধী শক্তির ওপর লাল ঘোড়া দাবড়াতে গিয়ে সেই সুযোগটি নষ্ট করেন। এখানে উল্লেখ্য, এই লাল ঘোড়া তিনি দাবড়িয়েছেন একসময়ের রাজনৈতিক সতীর্থদের ওপর দিয়ে। দ্বিতীয় সুযোগটি পেয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিনি তার সর্বোত্তম ব্যবহার করেছিলেন।
শহীদ জিয়া যেমন করে তার জনগণের মনটি পড়তে পেরেছিলেন, তেমনি জনগণের কাছে মাটির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে কখনোই দুর্বোধ্য লাগেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠের বোধবিশ্বাসকে যখন চেতনার ধামা দিয়ে চাপা দেওয়া শুরু হয়Ñসেই অবস্থা থেকে তিনি জাতিকে উদ্ধার করেন। নিজের জনগণকে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কমফোর্ট দিয়েছিলেন। আর এর বিনিময়ে তিনি তার জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। সে কারণেই শহীদ জিয়া যখন সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ সংযুক্ত করে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযুক্ত করলেন, এরপর আর তাকে টুপি মাথায় দিয়ে ধার্মিকতার অভিনয় করতে হয়নি। এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন জয় করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যান! তখনো অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক লাফিয়ে বাড়তে থাকে। একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতি জনগণের এই আস্থাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লি কুয়ান ইউ ছিলেন এ রকম আরেকজন নেতা, যিনি তার জনগণের আস্থা শতভাগ উপভোগ করেছেন। মাহাথির মুহাম্মদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।
তারেক রহমানকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে চেতনার পুরো মেকানিজমটির বিপরীতে জনগণের পালসটি আগে বুঝতে হবে! তা না করে চেতনার চোরাবালিতে ঢুকে পড়লে সবকিছু আগের মতোই অগ্রসর হবে। তখন সব পরিকল্পনার মতো ট্রিলিয়ন ডলারের এই পরীটিও আকাশে উড়ে যাবে এবং ‘কল্পনা’ ঘাসের ওপর গড়াগড়ি খাবে।

আমেরিকায় রীতিমতো রাজনৈতিক ভূমিকম্প সৃষ্টি করে জোহরান মামদানি যে কদিন আগে নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেটি সব পাঠকই জানেন। কিন্তু তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার, রাজনীতিতে প্রবেশ, ইত্যাদি সম্পর্কে সবার হয়তো পুরো ধারণা নাও থাকতে পারে। আমি তাই অতি সংক্ষেপে সেই তথ্যগুলো দিয়ে তারপর আজকের আসল আলোচনায়
৩ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যায় এবং এখন ভারতেই অবস্থান করছে। ফলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রভাবের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়।
১ দিন আগে
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ইতিহাসের নজিরবিহীন এই ঘটনায় দলীয় নেতাসহ তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে। এদিকে দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় হবে সহসাই। তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডজন ডজন মামলা বিচারাধীন।
১ দিন আগে
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এই যে, অতি অল্পসংখ্যক অভিজাত গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এই দেশটিকে শাসন করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আচরণে স্বৈরাচারী। সংস্কারের বুলি তোলে, কিন্তু সংস্কার করে শুধু নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য।
১ দিন আগে