খানের আখ্যান
মারুফ কামাল খান
এই লেখা পিছিয়ে দিয়ে হাসিনার ভাষণ শুনছিলাম বুধবার রাতে। কে এই হাসিনা? ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে পড়শি দেশে আশ্রয় নেওয়া ক্রোধোন্মত্ত ও অনুশোচনাহীন এক বৃদ্ধা নারী। সেটা এমনই এক পড়শি দেশ, যে দেশকে হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় কেবল দিয়েছেন আর দিয়েছেন। নিজের মুখেই বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি তা তাদের কেয়ামত পর্যন্ত মনে রাখতে হবে।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষা না করে ভারতকে কেবল একতরফা দিয়ে যাওয়াই ছিল তার কাজ। এই দেওয়ার বিনিময়ে অতিকায় পড়শি দেশটি সব রীতিনীতি ভেঙে হাসিনার ক্ষমতার গদি টিকিয়ে রাখতে যত রকম মদত দেওয়া যায় তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে হাসিনা ক্ষমতায় টিকেছেন, কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব আর জনগণ হারিয়েছেন স্বাধীনতা।
ভারত ভেবেছিল হাসিনার ক্ষমতা তাদের মদতে আমরণ অটুট থাকবে। কিন্তু ‘গোকুলে বেড়ে ওঠা’ তরুণ-শিক্ষার্থী-জনতার দ্রোহের সম্ভাবনার ব্যাপারে তারা ছিল পুরোই বেখবর। তাই যখন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল তখন মানুষের রুদ্ররোষ থেকে জীবন বাঁচাতে হাসিনার সামনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
হাসিনা ভারতের কাছে সকাতরে মিনতি জানিয়েছিলেন, সসৈন্যে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নিতে। যে দেশে হাসিনার জন্ম, যার আবহাওয়ায় তিনি লালিত, যে মাটির ফল-তণ্ডুল আর শস্যকণায় তার দেহ পরিপুষ্ট, যে দেশ তাকে দুহাত ভরে দিয়েছে ক্ষমতা, ঐশ্বর্য ও প্রতিপত্তি, সেই দেশকে দখল ও পরাধীন করতে তিনি ভিনদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কত বড় দেশদ্রোহী হলে এটা সম্ভব!
এই ঘটনার পর হাসিনার কি আর কোনো অধিকার আছে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার? আর কখনো কি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পেতে পারেন তিনি? হাসিনা এই দেশের কাছে ক্ষমতা ও সম্পদ লুণ্ঠনের অবাধ অধিকার ছাড়া আর কিছুই চান না। সেই অধিকার হারানোর সঙ্গে সঙ্গে উন্মত্ত হয়ে উঠে বিদেশিদের প্রতি দেশ দখলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ‘রং-হেডেড’ ওই নারী।
হাসিনা বিকারগ্রস্ত বলে ভারত তো তা নয়। চাণক্যবাদী দেশটির আছে নানা হিসেবনিকেশ, হরেক রকম মানসাঙ্ক ও সমীকরণ। তারা সামরিক আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নেওয়ার জন্য হাসিনার খ্যাপাটে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। পরিস্থিতি দ্রুত বিশ্লেষণ করে হাসিনাকে স্বল্প সময়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয় দিতে রাজি হয় ভারত। কিন্তু বিশ্বপরিমণ্ডলে হাসিনার অবস্থান কোন তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে, সে অঙ্কেও ভারত ভুল করে ফেলেছিল।
ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কোনো দেশ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া দূরে থাকুক, এক মুহূর্তের জন্য গ্রহণ করতেও রাজি হয়নি। তাই তাকে বাধ্য হয়ে গত ছয় মাস ধরে ভারতের গলগ্রহ হয়েই থাকতে হচ্ছে। তাকে সাময়িক আশ্রয় দিতে গিয়ে চরম গ্যাঁড়াকলে পড়েছে ভারতও। এই গলার কাঁটাকে গিলতেও পারছে না, আবার উগরাতেও পারছে না তারা।
ভারত এখন হাসিনাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে তাদের ক্রীড়নক হিসেবে। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে দ্রুত অস্থিতিশীল করে তোলা এবং যেকোনো মূল্যে অতি দ্রুত রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আনা। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের প্রধান টার্গেট। কারণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা ও সুখ্যাতির কারণে ড. ইউনূসকে ভারত তাদের অপপ্রচারণার অস্ত্রে সহজে ঘায়েল করতে পারছে না। আর ভারতের মাথাব্যথার আরেক কারণ বাংলাদেশের তরুণেরা। তাদের বুদ্ধিবৃত্তি, সাহস ও দেশপ্রেম বাংলাদেশকে পদানত করার পথে এক বড় বাধা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্য-সংহতিকেও ভালো চোখে দেখছে না ভারত।
ভারত চায় আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে বিভেদ-বিভাজন ও হানাহানি সৃষ্টি করতে। তারা চায় সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের প্রতিপক্ষে অবস্থান নিক। ড. ইউনূসের শাসন-প্রশাসনকে ব্যর্থ, অকেজো ও ভণ্ডুল করতে চায় তারা। আর চায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের বদনাম করে, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে সাধারণ মানুষকে তাদের ওপর বিরূপ করে তুলতে।
ওইসব বদ মতলব হাসিল করতে ভারত তাদের কাছে আশ্রিত হাসিনা ও অন্যান্য পলাতক ফ্যাসিবাদীকে ব্যবহার করেছে। পতিত ফ্যাসিবাদের অনুগ্রহভাজনেরা সরকারের ভেতরে-বাইরে বসে পারস্পরিক গুফতাগু করে নানারকম চক্র-চক্রান্ত করছে। দাবিদাওয়া ও আন্দোলনের নামে মাঠে নেমে অরাজকতা ও নাশকতার ছক কষা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে মুক্তকণ্ঠে অপপ্রচার ও গুজব রটনা। মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিরূপ করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পারলেই তাদের আসল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে বলে নয়াদিল্লি বসে অনেকেই সুখস্বপ্নে বিভোর।
চক্রান্তের সেই পরিকল্পিত ফাঁদে বাংলাদেশের ক্ষমতালোভীরাও পা দিয়ে ফেলতে পারে বলে চাণক্যপুরী আশাবাদী। ছক মোতাবেক পতিত-পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা ফেব্রুয়ারিজুড়ে নানারকম কর্মসূচির কথা প্রচার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার জোরদার অপপ্রচার ও গুজবে তারা সত্য ও বাস্তবতাকে ভাসিয়ে দিতে পারবে বলেও মনে করে। ভারতীয় নির্দেশনাতেই বুধবার রাতে হাসিনা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়েবপেজ মারফত ছাত্রসমাজ ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
হাসিনার এ ঘোষণাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের রূপকার শিক্ষার্থী ও তরুণেরা তাদের সাফল্য বিজয়ের প্রতি ধৃষ্টতামূলক খোলা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। ঘাতক ফ্যাসিবাদী রাজনীতির পুনরুত্থানের এই উদ্যোগের মোকাবিলায় তরুণেরা ধানমণ্ডির মুজিব-ভবন অভিমুখে কর্মসূচি ঘোষণা করে। কারণ মুজিবের স্মৃতিকে হাসিনা ১৬ বছর ধরে দেশে চরম নৃশংস ফ্যাসিবাদী রেজিম প্রতিষ্ঠার প্রেরণা ও ভিত্তিরূপে প্রচার করেছে। জনরোষের শিকার ওই পোড়োবাড়িকে ফ্যাসিবাদের মূর্ত প্রতীক রূপে ধরে নিয়েই সেখানে চলেছে বুধবার রাতের অভিযান।
আমি আজকের লেখায় ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়িতে সাধারণ জনতার অভিযান এবং এর ফলাফল নিয়ে বেশি কিছু লিখব না। তবে সেখানে যা কিছুই ঘটেছে তা রাজনীতিতে হাসিনার পুনরাবির্ভাবের প্রকাশ্য ঘোষণারই পালটা প্রতিক্রিয়া। এটা হাসিনার অ্যাকশনের প্রতি ছাত্র-জনতার রিঅ্যাকশন। এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা নিজে ও তার উসকানি। বাংলাদেশে এখনো জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-তরুণ-শিশুদের রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনই সেই অভ্যুত্থানকে চ্যালেঞ্জ করে, সেই অভ্যুত্থানকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ইতিহাসের পৃষ্ঠা উলটে ফেলতে হবে? আর মোটেও তর সইছে না?
আজ আমি শুধু আরেকটি ঘটনার কথা বলব। ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ স্বামীর সারা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন থেকে এক কাপড়ে বিধবা মহিলা খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছিলেন হাসিনা। তারপর অনুগত সেনা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা ও চিহ্নিত দুষ্ট সাংবাদিক চক্রের মাধ্যমে কুৎসিত সব অপপ্রচার চালিয়েছিলেন। সেই বাড়ি তিনি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপর ক্ষমতার দম্ভে বলেছিলেন, অনেক আগে পরিকল্পনা ছিল, সুযোগ পেয়েই খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করতে পেরেছেন।
হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট রেজিম ১৬ বছর ধরে এই জনপদে চরম নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, বহু মানুষ হত্যা করেছে, জুলুম-নির্যাতনে পঙ্গু করেছে, মিথ্যা মামলায় জর্জর করেছে, ফাঁসি দিয়ে বিচারের নামে জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে, অসংখ্য পরিবারকে নিঃস্ব করেছে, কল্পনাতীত বিপুল সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাহাড় গড়েছে, মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং আরো কত বেশুমার অপরাধ তারা করেছে। ছ’মাস না যেতেই সেই হাসিনা ও তার চামুণ্ডাদের সমস্ত অধিকার ফিরে পেতে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে? এটা কি মজলুম মানুষ মেনে নেবে? শহীদ পরিবারগুলো মানবে? আহত ও পঙ্গুরা মাথা পেতে নেবে? এটুকু বোধবুদ্ধিও লোপ পাওয়া বাংলাদেশি ফ্যাসিবাদের জননী হাসিনা বুধবার রাতে তার বস্তাপচা পুরোনো মিথ্যাচারের ঝুলির মুখ খুলেছিলেন।
আমি আমার এই লেখা পিছিয়ে দিয়ে তার সে ভাষণ শোনার চেষ্টা করেছি। আমি এমনিতেই অসুস্থ মানুষ। হাসিনার বিরক্তিকর লম্বা বক্তৃতার বিষয়বস্তু শুনে ক্রোধে আমি বারবার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলাম। কী আশ্চর্য! একচিলতে অনুশোচনা নেই তার ১৬ বছরের সীমাহীন অপরাধ ও অপকাণ্ডের জন্য। তিনি তার বহু ব্যবহারে জর্জর মেকি অভিনয় ও কান্নাকাতর কণ্ঠ নিয়ে ফের নেমেছেন মানুষকে ধোঁকা দিতে। দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার লেশমাত্র নেই। হাসিনার কথা শুনে মনে হলো, ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে অপরাধের এক নজিরবিহীন কালো অধ্যায় রচনা করার জন্য তার প্রতিই সারা দেশের মানুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
এক ঝুড়ি মিথ্যার তুবড়ি ছুটিয়ে হাসিনা বললেন, তিনি সারা দেশের মানুষকে কেবল দিয়েছেন আর দিয়েছেন। তার কোনো দোষ নেই, ত্রুটি নেই, অন্যায় নেই, অপরাধ নেই, আছে শুধু কৃতিত্ব। যাকে ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ পা ফেলার জন্য একচিলতে জায়গাও দেয়নি, সেই হাসিনা নাকি বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে স্থাপিত করেছেন। হাসিনার ভাষণের সিংহভাগজুড়েই ছিল সেই চিরাচরিত তার আপন পরিবারের বন্দনা। আর শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়া সেই ‘স্বজন হারানো বেদনা’।
হাসিনা পুলিশ, র্যাব, আর্মি, সীমান্তরক্ষী, আনসার ও দলীয় সন্ত্রাসী নামিয়ে কেবল জুলাই অভ্যুত্থান ঠেকাতেই প্রায় দুই হাজার আদম সন্তানের জীবন কেড়েছেন। এজন্য সামান্য দুঃখবোধও নেই তার। বরং কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে ঘটা সত্যকে অস্বীকার করে হাসিনা বললেন, সুপরিকল্পিতভাবে ড. ইউনূসই নাকি এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে গণভবন লুট করতেও ড. ইউনূস সশরীরে গণভবনে যান বলেও হাসিনা উল্লেখ করেন।
হাসিনা নিজে, তার বোন, পুত্র, কন্যা, ভাগনে, ভাগনি, অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং দলের লোক ও অলিগার্কেরা কী পরিমাণ দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে, তার অনেক কিছুই এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে এবং পাচ্ছে। সরকার বিদেশে পাচার করা সেই বিপুল সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা শুরু করেছে। সেই নজিরবিহীন লুটপাট আড়াল করতে হাসিনা তাদের ত্যাগের নির্লজ্জ কাহিনি ফেঁদেছেন।
ছাত্রলীগকে আয়োজক করে হাসিনা এ বক্তৃতা করেন। তিনি ছাত্রলীগকে স্বাধীনতার সমার্থক বলে উল্লেখ করেন। ছাত্রলীগকে আহ্বান জানান তাদের হারানো রাজত্ব ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নামতে। গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের কৃতকর্মের স্মৃতি এখনো সবার স্মৃতিতে টাটকা। এই ছাত্রলীগ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার পাহারাদারি করতে গিয়ে হেলমেট-হাতুড়ি-চাপাতি বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। বিশ্বজিৎ, আবরার-সহ অজস্র ছাত্র-তরুণের রক্তে রঞ্জিত ছাত্রলীগের হাত। তারা সব ছাত্রাবাস আর শিক্ষাঙ্গন দখল করে চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। হাসিনার এই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী খুন, অপহরণ, দখল, ধর্ষণ, দাঙ্গাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। তরুণদের জন্য ছাত্রলীগ এক বিভীষিকা ও ত্রাসের নাম। এই ছিল ছাত্রলীগের স্বাধীনতার চেতনার রাজনীতি। হাসিনা সেই দুর্বৃত্তদের ওপর ভর করে সেই পরাজিত অপরাজনীতি ফিরিয়ে আনার ভয় দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে হাসিনা তার মিথ্যাচারিতায় ভরা হুমকিমূলক ব্যর্থ ভাষণকে বুধবার রাতের দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছেন। এ ভাষণ তার ফিরে আসার কোনো বার্তা দিতে পারেনি; বরং দিয়েছে ইতিহাসে হাসিনা-অধ্যায় অবসানের আরো শক্তিশালী বার্তা।
মারুফ কামাল খান, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক
ই-মেইল : mrfshl@gmail.com
এই লেখা পিছিয়ে দিয়ে হাসিনার ভাষণ শুনছিলাম বুধবার রাতে। কে এই হাসিনা? ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে পড়শি দেশে আশ্রয় নেওয়া ক্রোধোন্মত্ত ও অনুশোচনাহীন এক বৃদ্ধা নারী। সেটা এমনই এক পড়শি দেশ, যে দেশকে হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় কেবল দিয়েছেন আর দিয়েছেন। নিজের মুখেই বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি তা তাদের কেয়ামত পর্যন্ত মনে রাখতে হবে।
জাতীয় স্বার্থ রক্ষা না করে ভারতকে কেবল একতরফা দিয়ে যাওয়াই ছিল তার কাজ। এই দেওয়ার বিনিময়ে অতিকায় পড়শি দেশটি সব রীতিনীতি ভেঙে হাসিনার ক্ষমতার গদি টিকিয়ে রাখতে যত রকম মদত দেওয়া যায় তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে হাসিনা ক্ষমতায় টিকেছেন, কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব আর জনগণ হারিয়েছেন স্বাধীনতা।
ভারত ভেবেছিল হাসিনার ক্ষমতা তাদের মদতে আমরণ অটুট থাকবে। কিন্তু ‘গোকুলে বেড়ে ওঠা’ তরুণ-শিক্ষার্থী-জনতার দ্রোহের সম্ভাবনার ব্যাপারে তারা ছিল পুরোই বেখবর। তাই যখন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল তখন মানুষের রুদ্ররোষ থেকে জীবন বাঁচাতে হাসিনার সামনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
হাসিনা ভারতের কাছে সকাতরে মিনতি জানিয়েছিলেন, সসৈন্যে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নিতে। যে দেশে হাসিনার জন্ম, যার আবহাওয়ায় তিনি লালিত, যে মাটির ফল-তণ্ডুল আর শস্যকণায় তার দেহ পরিপুষ্ট, যে দেশ তাকে দুহাত ভরে দিয়েছে ক্ষমতা, ঐশ্বর্য ও প্রতিপত্তি, সেই দেশকে দখল ও পরাধীন করতে তিনি ভিনদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কত বড় দেশদ্রোহী হলে এটা সম্ভব!
এই ঘটনার পর হাসিনার কি আর কোনো অধিকার আছে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার? আর কখনো কি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পেতে পারেন তিনি? হাসিনা এই দেশের কাছে ক্ষমতা ও সম্পদ লুণ্ঠনের অবাধ অধিকার ছাড়া আর কিছুই চান না। সেই অধিকার হারানোর সঙ্গে সঙ্গে উন্মত্ত হয়ে উঠে বিদেশিদের প্রতি দেশ দখলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ‘রং-হেডেড’ ওই নারী।
হাসিনা বিকারগ্রস্ত বলে ভারত তো তা নয়। চাণক্যবাদী দেশটির আছে নানা হিসেবনিকেশ, হরেক রকম মানসাঙ্ক ও সমীকরণ। তারা সামরিক আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নেওয়ার জন্য হাসিনার খ্যাপাটে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। পরিস্থিতি দ্রুত বিশ্লেষণ করে হাসিনাকে স্বল্প সময়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয় দিতে রাজি হয় ভারত। কিন্তু বিশ্বপরিমণ্ডলে হাসিনার অবস্থান কোন তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে, সে অঙ্কেও ভারত ভুল করে ফেলেছিল।
ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কোনো দেশ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া দূরে থাকুক, এক মুহূর্তের জন্য গ্রহণ করতেও রাজি হয়নি। তাই তাকে বাধ্য হয়ে গত ছয় মাস ধরে ভারতের গলগ্রহ হয়েই থাকতে হচ্ছে। তাকে সাময়িক আশ্রয় দিতে গিয়ে চরম গ্যাঁড়াকলে পড়েছে ভারতও। এই গলার কাঁটাকে গিলতেও পারছে না, আবার উগরাতেও পারছে না তারা।
ভারত এখন হাসিনাকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে তাদের ক্রীড়নক হিসেবে। তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে দ্রুত অস্থিতিশীল করে তোলা এবং যেকোনো মূল্যে অতি দ্রুত রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আনা। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের প্রধান টার্গেট। কারণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা ও সুখ্যাতির কারণে ড. ইউনূসকে ভারত তাদের অপপ্রচারণার অস্ত্রে সহজে ঘায়েল করতে পারছে না। আর ভারতের মাথাব্যথার আরেক কারণ বাংলাদেশের তরুণেরা। তাদের বুদ্ধিবৃত্তি, সাহস ও দেশপ্রেম বাংলাদেশকে পদানত করার পথে এক বড় বাধা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ঐক্য-সংহতিকেও ভালো চোখে দেখছে না ভারত।
ভারত চায় আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে বিভেদ-বিভাজন ও হানাহানি সৃষ্টি করতে। তারা চায় সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের প্রতিপক্ষে অবস্থান নিক। ড. ইউনূসের শাসন-প্রশাসনকে ব্যর্থ, অকেজো ও ভণ্ডুল করতে চায় তারা। আর চায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের বদনাম করে, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে, তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে সাধারণ মানুষকে তাদের ওপর বিরূপ করে তুলতে।
ওইসব বদ মতলব হাসিল করতে ভারত তাদের কাছে আশ্রিত হাসিনা ও অন্যান্য পলাতক ফ্যাসিবাদীকে ব্যবহার করেছে। পতিত ফ্যাসিবাদের অনুগ্রহভাজনেরা সরকারের ভেতরে-বাইরে বসে পারস্পরিক গুফতাগু করে নানারকম চক্র-চক্রান্ত করছে। দাবিদাওয়া ও আন্দোলনের নামে মাঠে নেমে অরাজকতা ও নাশকতার ছক কষা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে মুক্তকণ্ঠে অপপ্রচার ও গুজব রটনা। মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিরূপ করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পারলেই তাদের আসল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে বলে নয়াদিল্লি বসে অনেকেই সুখস্বপ্নে বিভোর।
চক্রান্তের সেই পরিকল্পিত ফাঁদে বাংলাদেশের ক্ষমতালোভীরাও পা দিয়ে ফেলতে পারে বলে চাণক্যপুরী আশাবাদী। ছক মোতাবেক পতিত-পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা ফেব্রুয়ারিজুড়ে নানারকম কর্মসূচির কথা প্রচার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার জোরদার অপপ্রচার ও গুজবে তারা সত্য ও বাস্তবতাকে ভাসিয়ে দিতে পারবে বলেও মনে করে। ভারতীয় নির্দেশনাতেই বুধবার রাতে হাসিনা নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়েবপেজ মারফত ছাত্রসমাজ ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
হাসিনার এ ঘোষণাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের রূপকার শিক্ষার্থী ও তরুণেরা তাদের সাফল্য বিজয়ের প্রতি ধৃষ্টতামূলক খোলা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। ঘাতক ফ্যাসিবাদী রাজনীতির পুনরুত্থানের এই উদ্যোগের মোকাবিলায় তরুণেরা ধানমণ্ডির মুজিব-ভবন অভিমুখে কর্মসূচি ঘোষণা করে। কারণ মুজিবের স্মৃতিকে হাসিনা ১৬ বছর ধরে দেশে চরম নৃশংস ফ্যাসিবাদী রেজিম প্রতিষ্ঠার প্রেরণা ও ভিত্তিরূপে প্রচার করেছে। জনরোষের শিকার ওই পোড়োবাড়িকে ফ্যাসিবাদের মূর্ত প্রতীক রূপে ধরে নিয়েই সেখানে চলেছে বুধবার রাতের অভিযান।
আমি আজকের লেখায় ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়িতে সাধারণ জনতার অভিযান এবং এর ফলাফল নিয়ে বেশি কিছু লিখব না। তবে সেখানে যা কিছুই ঘটেছে তা রাজনীতিতে হাসিনার পুনরাবির্ভাবের প্রকাশ্য ঘোষণারই পালটা প্রতিক্রিয়া। এটা হাসিনার অ্যাকশনের প্রতি ছাত্র-জনতার রিঅ্যাকশন। এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা নিজে ও তার উসকানি। বাংলাদেশে এখনো জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-তরুণ-শিশুদের রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনই সেই অভ্যুত্থানকে চ্যালেঞ্জ করে, সেই অভ্যুত্থানকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ইতিহাসের পৃষ্ঠা উলটে ফেলতে হবে? আর মোটেও তর সইছে না?
আজ আমি শুধু আরেকটি ঘটনার কথা বলব। ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ স্বামীর সারা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন থেকে এক কাপড়ে বিধবা মহিলা খালেদা জিয়াকে উৎখাত করেছিলেন হাসিনা। তারপর অনুগত সেনা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা ও চিহ্নিত দুষ্ট সাংবাদিক চক্রের মাধ্যমে কুৎসিত সব অপপ্রচার চালিয়েছিলেন। সেই বাড়ি তিনি গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপর ক্ষমতার দম্ভে বলেছিলেন, অনেক আগে পরিকল্পনা ছিল, সুযোগ পেয়েই খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করতে পেরেছেন।
হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট রেজিম ১৬ বছর ধরে এই জনপদে চরম নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, বহু মানুষ হত্যা করেছে, জুলুম-নির্যাতনে পঙ্গু করেছে, মিথ্যা মামলায় জর্জর করেছে, ফাঁসি দিয়ে বিচারের নামে জুডিশিয়াল মার্ডার করেছে, অসংখ্য পরিবারকে নিঃস্ব করেছে, কল্পনাতীত বিপুল সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাহাড় গড়েছে, মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং আরো কত বেশুমার অপরাধ তারা করেছে। ছ’মাস না যেতেই সেই হাসিনা ও তার চামুণ্ডাদের সমস্ত অধিকার ফিরে পেতে এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে? এটা কি মজলুম মানুষ মেনে নেবে? শহীদ পরিবারগুলো মানবে? আহত ও পঙ্গুরা মাথা পেতে নেবে? এটুকু বোধবুদ্ধিও লোপ পাওয়া বাংলাদেশি ফ্যাসিবাদের জননী হাসিনা বুধবার রাতে তার বস্তাপচা পুরোনো মিথ্যাচারের ঝুলির মুখ খুলেছিলেন।
আমি আমার এই লেখা পিছিয়ে দিয়ে তার সে ভাষণ শোনার চেষ্টা করেছি। আমি এমনিতেই অসুস্থ মানুষ। হাসিনার বিরক্তিকর লম্বা বক্তৃতার বিষয়বস্তু শুনে ক্রোধে আমি বারবার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলাম। কী আশ্চর্য! একচিলতে অনুশোচনা নেই তার ১৬ বছরের সীমাহীন অপরাধ ও অপকাণ্ডের জন্য। তিনি তার বহু ব্যবহারে জর্জর মেকি অভিনয় ও কান্নাকাতর কণ্ঠ নিয়ে ফের নেমেছেন মানুষকে ধোঁকা দিতে। দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার লেশমাত্র নেই। হাসিনার কথা শুনে মনে হলো, ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে অপরাধের এক নজিরবিহীন কালো অধ্যায় রচনা করার জন্য তার প্রতিই সারা দেশের মানুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
এক ঝুড়ি মিথ্যার তুবড়ি ছুটিয়ে হাসিনা বললেন, তিনি সারা দেশের মানুষকে কেবল দিয়েছেন আর দিয়েছেন। তার কোনো দোষ নেই, ত্রুটি নেই, অন্যায় নেই, অপরাধ নেই, আছে শুধু কৃতিত্ব। যাকে ভারত ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ পা ফেলার জন্য একচিলতে জায়গাও দেয়নি, সেই হাসিনা নাকি বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে স্থাপিত করেছেন। হাসিনার ভাষণের সিংহভাগজুড়েই ছিল সেই চিরাচরিত তার আপন পরিবারের বন্দনা। আর শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়া সেই ‘স্বজন হারানো বেদনা’।
হাসিনা পুলিশ, র্যাব, আর্মি, সীমান্তরক্ষী, আনসার ও দলীয় সন্ত্রাসী নামিয়ে কেবল জুলাই অভ্যুত্থান ঠেকাতেই প্রায় দুই হাজার আদম সন্তানের জীবন কেড়েছেন। এজন্য সামান্য দুঃখবোধও নেই তার। বরং কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে ঘটা সত্যকে অস্বীকার করে হাসিনা বললেন, সুপরিকল্পিতভাবে ড. ইউনূসই নাকি এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে গণভবন লুট করতেও ড. ইউনূস সশরীরে গণভবনে যান বলেও হাসিনা উল্লেখ করেন।
হাসিনা নিজে, তার বোন, পুত্র, কন্যা, ভাগনে, ভাগনি, অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং দলের লোক ও অলিগার্কেরা কী পরিমাণ দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে, তার অনেক কিছুই এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে এবং পাচ্ছে। সরকার বিদেশে পাচার করা সেই বিপুল সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা শুরু করেছে। সেই নজিরবিহীন লুটপাট আড়াল করতে হাসিনা তাদের ত্যাগের নির্লজ্জ কাহিনি ফেঁদেছেন।
ছাত্রলীগকে আয়োজক করে হাসিনা এ বক্তৃতা করেন। তিনি ছাত্রলীগকে স্বাধীনতার সমার্থক বলে উল্লেখ করেন। ছাত্রলীগকে আহ্বান জানান তাদের হারানো রাজত্ব ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নামতে। গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের কৃতকর্মের স্মৃতি এখনো সবার স্মৃতিতে টাটকা। এই ছাত্রলীগ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার পাহারাদারি করতে গিয়ে হেলমেট-হাতুড়ি-চাপাতি বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। বিশ্বজিৎ, আবরার-সহ অজস্র ছাত্র-তরুণের রক্তে রঞ্জিত ছাত্রলীগের হাত। তারা সব ছাত্রাবাস আর শিক্ষাঙ্গন দখল করে চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। হাসিনার এই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী খুন, অপহরণ, দখল, ধর্ষণ, দাঙ্গাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। তরুণদের জন্য ছাত্রলীগ এক বিভীষিকা ও ত্রাসের নাম। এই ছিল ছাত্রলীগের স্বাধীনতার চেতনার রাজনীতি। হাসিনা সেই দুর্বৃত্তদের ওপর ভর করে সেই পরাজিত অপরাজনীতি ফিরিয়ে আনার ভয় দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে হাসিনা তার মিথ্যাচারিতায় ভরা হুমকিমূলক ব্যর্থ ভাষণকে বুধবার রাতের দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছেন। এ ভাষণ তার ফিরে আসার কোনো বার্তা দিতে পারেনি; বরং দিয়েছে ইতিহাসে হাসিনা-অধ্যায় অবসানের আরো শক্তিশালী বার্তা।
মারুফ কামাল খান, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক
ই-মেইল : mrfshl@gmail.com
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে