জুলাই ঘোষণাপত্র বিকৃত, অসম্পূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন: ইন্তিফাদা বাংলাদেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৪৭

ইন্তিফাদা বাংলাদেশ জুলাই ঘোষণাপত্রকে “বিকৃত, অসম্পূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন” ঘোষণা করে তা পুনর্লিখনের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের মতে, এই দলিল বাংলাদেশের জনগণের প্রকৃত সংগ্রাম, ইতিহাস ও আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আওয়ামী শাসকদের অপরাধ ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করেছে।

ইন্তিফাদার প্রেসিডিয়াম সদস্য আসিফ আদনান ৯ আগস্ট ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পাঠানো “জুলাই ঘোষণাপত্র” জনগণের ঈমানী চেতনা, ত্যাগ ও সংগ্রামের বিপরীত এবং দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোকে আড়াল করেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিকতা যেমন ফকির মজনু শাহ, তিতুমীর, ফরায়েজি আন্দোলন ও জমিদারবিরোধী কৃষক প্রতিরোধের উল্লেখ ছাড়াই দলিল প্রকাশ করা হয়েছে, যা বাংলার রাজনৈতিক চেতনার মূল ভিত্তি। এই ইতিহাস উপেক্ষা জনগণের আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব দুর্বল করে।

আদনান আরও বলেন, ব্রিটিশ শোষণমূলক প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামো ভাঙার প্রয়োজনীয়তা এ দলিলে উপেক্ষিত হয়েছে, যা বাস্তব স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জন্ম ১৯৪৭ সালের মুসলিম সংখ্যাগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামের ফল। কিন্তু ঘোষণাপত্রে সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৪৭ সালের ভূমিকা বাদ দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের ভিত্তি ধ্বংসের সমতুল্য।

মুক্তিযুদ্ধকে ‘উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করাকে আদনান “চরম বিকৃতি” বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আসলে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ঈমান, ইনসাফ ও মর্যাদার জন্য শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, পশ্চিমা লিবারেল ডেমোক্রেসি চাপানোর প্রচেষ্টা নয়। তিনি অভিযোগ করেন, সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত বাদ দিয়ে এলিট শ্রেণি ও সেক্যুলার আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা অংশগ্রহণবিহীন ও চাপানো কাঠামো তৈরি করবে।

আদনান বলেন, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-কে ‘বিপ্লব’ বলা এবং ২০২৪ সালের জুলাইকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলে গুরুত্ব কমানো হয়েছে, যা দলিলের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পেছনে শুধুমাত্র দল নয়, প্রগতিশীল, বামপন্থী, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সক্রিয় ভূমিকা ছিল, যা দলিলে আড়াল করা হয়েছে। এভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ড, সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি আটকে রাখা, ভুয়া নির্বাচন ও হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার মতো ভারতের ভূমিকা আড়াল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আক্রমণকারী রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করলে দলিল জনগণের প্রতিনিধি হতে পারে না।

সংগঠনের মতে, ঘোষণাপত্রে সব সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের ঐক্যের দাবিও বাস্তবতা বিরোধী। ইসলামী অনুপ্রেরণায় জনগণ আন্দোলনে নেমেছিল, কিন্তু অমুসলিম সংগঠনের ভূমিকা নগণ্য এবং অনেকেই আওয়ামী দখলদারিত্বের পক্ষে ছিল। এছাড়া, র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, সিটিটিসি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট ভূমিকা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং ‘ফ্যাসিবাদী বাহিনী’ শব্দে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, যা অপরাধীদের দায় ঝাপসা করে। অপরাধীদের নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা জরুরি বলে তিনি মত দেন।

আদনান আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাহবাগ আন্দোলন, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, মোদীবিরোধী প্রতিবাদ এবং ইসলামপন্থীদের ত্যাগের কথা ঘোষণাপত্রে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন কৌশল’-এর মতো জাতিসংঘ-এনজিও পরিভাষা ব্যবহার করে পশ্চিমা এজেন্ডা চাপানোর শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ‘যেহেতু–সেহেতু’ শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহার দলিলকে সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বোধ্য করে তুলেছে।

তিনি বলেন, “এই ঘোষণাপত্র বাংলার মানুষের সংগ্রাম, চেতনা ও ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ছাড়া বাকী সব প্রস্তাব বাতিল করে পুনর্লিখন জরুরি।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য প্রেসিডিয়াম সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত