ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়ন ঘোষণার পর দিনাজপুরে স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ অনেকখানি বেড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিরোধ চলতে থাকলে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত তিনটি আসন বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জামায়াত।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। সে সময় দিনাজপুর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আসনে প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে দিনাজপুর জেলা বিএনপির দাবি, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর সব নেতাকর্মী মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে একসঙ্গে কাজ করবে।
জানা গেছে, মনোনয়ন ঘোষণার আগে ও পরে দিনাজপুর-১, ২ ও ৪ নম্বর আসনে বিএনপির বিরোধ প্রকাশ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা। ইতোমধ্যে বিরল ও বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, পিনাক চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করে এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে যিনি আসনটি উদ্ধার করতে পারবেন। এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন না করলে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেতাকর্মীদের।
দিনাজপুর-২ আসন ছাড়াও দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল), দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনেও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ আসন দুটিতেও বিএনপির একটি অংশ বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। গত রোববারও দিনাজপুর-২ ও ৪ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বিএনপির নেতাকর্মীর আশঙ্কা, এ বিরোধ এখন আর দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এলাকার সাধারণ ভোটারের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিগগিরই বিএনপি এ কোন্দল মেটাতে না পারলে অনেক আসন হাতছাড়া হয়ে যাবে।
সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, যে প্রার্থী সুখে-দুঃখে ও বিপদাপদে জনগণের সঙ্গে থাকে, জনগণের উপকার করে আমরা তাকেই ভোট দেব।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক, বিরল উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ভিপি হামিদুর রহমান জানান, বিরলবাসী এমন এক প্রার্থীকে চায় যিনি আসনটিতে জিতে আসতে পারেন।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিরল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ ন ম বজলুর রশিদ কালু বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দেশের জন্য, বিএনপির জন্য রাজপথে থেকে যিনি আন্দোলন করেছেন রক্ত ও ঘাম ঝরিয়েছেন, এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে দিনাজপুর-২ আসনটি উদ্ধার করা যাবে। অন্যথায় আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা বিএনপির আপত্তি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। সেখানে এমন সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। চূড়ান্তভাবে ধানের শীষ যে বা যারা পাবেন সবাই তাদের পক্ষেই কাজ করবে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী বিজয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০০১ সালের নির্বাচনে দিনাজপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে (১ ও ৬) বিজয়ী হয়েছিল। এবারও তারা একাধিক আসনে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে।
দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পলায়নের পর জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী দুর্নীতি বা খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত হয়নি। তাই সাধারণ মানুষ মনে করেন, আগামীতে জামায়াতকেই দরকার। আগে সবাইকে দেখা হয়েছে। এবার জামায়াতকে ভোট দিয়ে তারা দেখতে চায় জামায়াত কেমন করে দেশ পরিচালনা করে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরে ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রভাব থাকলেও চব্বিশের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর মূল লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে।

