আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

অবিলম্বে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন: জামায়াত আমির

স্টাফ রিপোর্টার
অবিলম্বে এটিএম আজহারকে মুক্তি দিন: জামায়াত আমির

ধৈর্যের পরীক্ষা না নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।

মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও ফ্যাসিবাদের কঠিন সাক্ষী এটিএম আজহার মুক্ত হলেন না কেন। গত ১৩ বছর ধরে তিনি কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি। কিন্তু তাকে এখনো মুক্তি না দেয়ায় বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছি। আমরা ১৩ বছর সহ্য করেছি আর ১৩ মিনিটও অপেক্ষা নয়, আজহারকে মুক্তি দিন। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্তু আন্দোলন আরও তীব্রভাবে চলবে বলে ঘোষণা দেন জামায়াত আমির।

দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সারাদেশে একই কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কবলে ছিল। তাদের সবচেয়ে বেশি হিংস্র থাবা ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর। দলের শীর্ষ নেতাদের যখন তারা একে একে বন্দি করেছিল, তখন নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। কিন্তু পথের কাটা হিসেবে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে তিনি কারাগারে আবদ্ধ আছেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার অনেককে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলো ফ্যাসিবাদী সরকারের সবচেয়ে জুলুমের শিকার এটিএম আজহার এখনো মুক্ত হননি।

আমরা তো নিজ থেকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলাম। এই উদারতা আমরা দেখিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও এই উদারতা আমরা দেখিয়ে যাব। কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলাম কবে মুক্তি পাবেন, সেটি আমরা জানতে চাই সরকারের কাছে। আমাদের ভদ্রতাকে দুর্বল মনে করবেন না।

জামায়াত আমির বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে মহান আল্লাহকে ভয় করার কারণে আমরা কারও কাছে মাথা নত বা আপোষ করিনি। আমাদের বহু প্রস্তাব এসেছে। ফাঁসির কাষ্ঠে ওঠানোর আগে জনে জনে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সেসব প্রস্তাবকে পায়ের তলায় ফেলেছিলেন আমাদের নেতারা। আমরা তাদের উত্তরসূরি, আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। অবিলম্বে এটিএমআজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিন।

তিনি বলেন, আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল জালেম সরকার। সেই জুলুম কি আপনারাও (বর্তমান সরকার) করবেন? এজন্য কি হাজার হাজার ছাত্রজনতা জীবন দিয়েছেন? হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন? আমরা আর কোনো বৈষম্য সহ্য করব না। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জুলাই-আগস্টে যেভাবে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রস্তুত আছেনতো?

জামায়াত আমির স্লোগান ধরে বলেন, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ আবু সাঈদ মুগ্ধ’। এই যুদ্ধ চলবে ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদেরকে আর কেউ চোখ রাঙ্গাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কেউ কথা বলবেন না। কথা বলবেন রাজনীতিবিদের ভাষায়। আমরা অভিনন্দন জানাব। কিন্তু এই সংগঠন কারো চোখ রাঙ্গানি পরোয়া করে না। তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফাঁসির দণ্ড নিয়ে এটিএম আজহারুল ইসলাম কেন এখনো জেলে আছেন? তাকে মুক্তি দেওয়া হলো না কেন? এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে মুক্তি না দেয়নি, এটা দু:খজনক।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, অবিলম্বে এটিএম আজহারকে মুক্তি না দিলে, দলের নিবন্ধন ও মার্কা ফিরিয়ে না দিলে আমিরে জামায়াতের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডে সকাল-বিকাল মিছিল করে ঢাকা অচল করে দেয়া হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, মহানগর নেতা দেলোয়ার হোসেন, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, শিবির সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।

বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হলেও দুপুরের পর থেকেই পল্টন মোড়ে জড়ো হওয়া শুরু করেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে চারটার আগেই উপস্থিতি পল্টন মোড় ছাড়িয়ে বিজয়নগর-নাইটিংগেল মোড় ও আশপাশের এলাকা ছাড়িয়ে যায়। পল্টন মোড়ে তিনটি খোলা ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এমএস

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন