আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

মানি চেঞ্জিং ব্যবসা হালাল নাকি হারাম

হাবিব আল মিসবাহ

মানি চেঞ্জিং ব্যবসা হালাল নাকি হারাম

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘সোনা বিনিময়ে সোনা, রুপা বিনিময়ে রুপা, গম বিনিময়ে গম, যব বিনিময়ে যব, খেজুর বিনিময়ে খেজুর এবং লবণ বিনিময়ে লবণ সমপরিমাণে, সমান সমানে, হাতে হাতে আদান-প্রদান দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে কেউ বেশি নিলে বা বেশি দিলে, সে সুদে লিপ্ত হলো। তবে যদি পণ্যের ধরন ভিন্ন হয়, তাহলে বেশি-কম বিনিময়ে কোনো ক্ষতি নেই। শর্ত হলো লেনদেনটি হাতে হাতে সম্পন্ন হতে হবে।’ (মুসলিম : ১৫৮৭)

বিজ্ঞাপন

এই হাদিস ইসলামিক অর্থনীতির একটি মূলনীতি স্থির করে দেয়, একই ধরনের জিনিস একই পরিমাণে দিলে তবেই লেনদেন বৈধ আর ভিন্ন ধরনের হলে বেশি-কম করা জায়েজ। এখন প্রশ্ন আসে, এর সঙ্গে মানি চেঞ্জিং ব্যবসার সম্পর্ক কী? মুদ্রা কেন ভিন্ন ধরনের পণ্য হিসেবে গণ্য?

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুদ্রা ছিল সোনা ও রুপা। সময়ের পরিবর্তনে কাগজের নোট, কয়েন ও ডিজিটাল মানি এসেছে। ইসলামি ফিকহে এগুলো এখনো সোনা-রুপার বিকল্প হিসেবে বিবেচিত। আর যেহেতু প্রতিটি দেশের মুদ্রা ভিন্ন ধরনের (টাকা, ডলার, রিয়াল ও রুপি) তাই এগুলোর মধ্যে দামের পার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক। এ কারণে এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময়ে বেশি-কম দামে বিক্রি করা পুরোপুরি বৈধ। কিন্তু এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ শরয়ি শর্ত আছে। শর্তটি হলো লেনদেন অবশ্যই তৎক্ষণাৎ হতে হবে।

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হাতে হাতে’ অর্থাৎ লেনদেনের সঙ্গে সঙ্গেই উভয় পক্ষকে তাদের পাওনা বুঝে নিতে হবে। দেরি করা যাবে না। কারণ দেরি হলে সুদের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। যেমন : আজ ১০০ ডলারের মূল্য ১২,০০০০ টাকা। কিন্তু কেউ যদি বলে, ‘আমি এখন ১০০ ডলার নিয়ে গেলাম, ১২,০০০০ টাকা বিকালে দেব।’ এটা হাতে হাতে হলো না। এখানে অর্থ আটকে থেকে ‘বাকি ও সুদের মতো সম্পর্ক’ তৈরি হতে পারে। সুতরাং, ডলার দিলে টাকা তৎক্ষণাৎ নিতে হবে। টাকা দিলে রিয়াল সেখানেই নিতে হবে। প্রতিশ্রুতি রেখে পরে লেনদেন করা যাবে নাÑএটাই মানি চেঞ্জিং ব্যবসাকে হালাল রাখার মৌলিক শর্ত।

মানি চেঞ্জিং ব্যবসা যেসব কারণে হালাল

১. মুদ্রা ভিন্ন ধরনের হওয়ায় বেশি-কম করা জায়েজ। যেমন : ১ ডলার, কখনো ১২০ ও কখনো ১১০ টাকা। ইসলামিক দৃষ্টিতে এই পার্থক্য বৈধ। কেননা টাকা, ডলার বা রিয়াল, মানের দিক থেকে এক নয়।

২. লেনদেন হাতে হাতে হওয়ায় সুদের সম্ভাবনা নেই। মানি এক্সচেঞ্জে সাধারণত উভয় পক্ষই তাৎক্ষণিকভাবে টাকাপয়সা বুঝে পান।

৩. চাহিদা-জোগানের ওপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ। বিশ্ববাজারে মুদ্রার মূল্য প্রতিদিন ওঠানামা করে। এটি সুদ নয়, স্বাভাবিক বাজারদর।

৪. এটি ইসলামি অর্থনীতিতে ও ইসলামি ফিকহে ‘সারফ’ নামে পরিচিত, যা ইসলামের বৈধ ব্যবসাগুলোর একটি ধরন।

কিছু শর্ত অবশ্যই মানতে হবে

১. লেনদেন সঙ্গে সঙ্গে (Spot Transaction) হতে হবে।

২. চুক্তির পর কোনো পক্ষ বাকি রাখবে না।

৩. হারাম কাজে টাকা সরবরাহ বা সহায়তা করা যাবে না।

৪. প্রতারণা, লুকানো চার্জ, বাড়তি সুবিধা নেওয়া নিষিদ্ধ।

৫. কোনোভাবেই একই দেশের মুদ্রা বেশি-কম করা যাবে না, কারণ তা মানের দিক দিয়ে সমান। যদি এ শর্তগুলো ভঙ্গ করা হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যবসা জায়েজ হবে না।

আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মুদ্রাবিনিময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা। সঠিক শরয়ি নির্দেশনা মেনে একজন মুসলিম এই খাতে সম্পৃক্ত হতে পারে।

লেখক : শিক্ষার্থী, আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন