কোরআনুল কারিম মহান আল্লাহর কালাম, সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। কোরআন মজিদ যে নবীর ওপর নাজিল করা হয়েছে, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। যে মাসে নাজিল করা হয়েছে সেই রমজানুল মোবারকও সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। যে রাতে এ কোরআন মজিদ নাজিল করা হয়েছে সে রাতটিও সর্বশ্রেষ্ঠ রাত, যে রাতের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর সহস্র মাসের চেয়েও উত্তম (সুরা ক্বদর : ১-৩) ।’
কোরআনুল কারিমের শিক্ষাদান ও গ্রহণকারী উভয়কেও (মানবজাতির মধ্যে) সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলে কারিম (সা.) । তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে কোরআন মজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি)। অপর বর্ণনায় রাসুলে কারিম (সা.) কোরআন মজিদের তিলাওয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে অভিহিত করেছেন। কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত বর্ণনায় তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরিফের একটি হরফ পড়বে, তার জন্য একটি সওয়াব এবং সে একটি সওয়াব ১০টি সওয়াবের সমতুল্য। তথা প্রতি হরফে ১০টি সওয়াব মিলবে (তিরমিজি)।’
তিলাওয়াতে কোরআনের কারণে মুমিন অন্তরে সৃষ্টি হয় তাকওয়ার আবহ। শানিত হয় ঈমানি স্পৃহা। যেমনটি ইরশাদ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা— ‘মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে (সুরা আনফাল : ০২) ।’
তিলাওয়াতে কোরআনের ফজিলত ও হাফেজে কোরআনদের মান-মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সেই হাদিস থেকে যেটি শুরুতে উল্লেখ হয়েছে। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি যে কোরআন মজিদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় (বুখারী) ।’ তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘সাহেবে কোরআন তথা যিনি কোরআন শিখলেন এবং তার ওপর আমল করলেন (কিয়ামতের দিন) তাঁকে বলা হবে পড়ো এবং মর্যাদার স্তরে উন্নীত হও, আর ধীরস্থিরভাবে পড়ো যেভাবে তুমি দুনিয়াতে পড়তে। কেননা তোমার মর্যাদার স্তর ওই আয়াতের সমাপ্তির ওপরই যে আয়াত পর্যন্ত তুমি পড়বে (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ) ।’
কোরআনুল কারিমের এমনই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত, অর্থ ও তাফসির শিক্ষাদানের পবিত্র খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছে সহিহ ধারার দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। হিফ্জখানাগুলোর অবদানেই প্রতি বছর অসংখ্য হাফেজে কোরআন তৈরি হয়ে কোরআনের খেদমতে নিবেদিত হন। কোরআনুল কারিম নাজিলের মাস রমজানুল মোবারকে বিশ্বময় অসংখ্য হাফেজে কোরআনের তিলাওয়াতে সজীব হয়ে ওঠে মুমিন হৃদয়। মসজিদে মসজিদে তাদের তিলাওয়াতে কোরআনের পবিত্র সুরে মুখর হয় পুরো জমিন।
যারা হাফেজে কোরআন তাদের কত বড়ই খোশনসিব । তারা আল্লাহপাকের বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিরল প্রতিভার অধিকারী। তাই তো তারা আল্লাহপাকের ৩০ পারা কোরআনের আমানত বক্ষে ধারণ করার তাওফিক লাভ করেন। তাদের অন্তর কোরআনের আলোয় আলোকিত আর চেহারা ঈমানের জ্যোতিতে দীপ্তিমান। হাফেজে কোরআনদের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাবা-মাকেও কিয়ামতের ময়দানে সূর্যের চেয়েও আলোকিত তাজ পরিধান করানো হবে বলে হাদিস শরিফে এসেছে।
তাই হাফেজে কোরআনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সবারই উচিত। যাদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার ঘোষণা স্বয়ং রাসুল (সা.) দিয়েছেন, যাদের কিয়ামতের ময়দানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সম্মাননায় ভূষিত করবেন, সেই হাফেজে কোরআনদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শন করা কোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শামিল। আর তাদের অবমাননা পবিত্র কোরআনেরই অবমাননার শামিল। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, কোরআনের ভাষায়, রাসুলে কারিম (সা.)-এর দৃষ্টিতে যারা শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত সেই ওলামায়ে কেরাম ও হাফেজে কোরআনরা সমাজে আজ নানাভাবে অবহেলার শিকার।
এভাবে কোরআনের খাদেমরা, হাফেজ সাহেবানেরা যাতে অবহেলিত না হন, কোনোভাবে যাতে তাদের অবমাননা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। হাফেজ সাহেবদেরও উচিত যেহেতু তাদের অন্তরে পবিত্র কোরআনের আমানত সংরক্ষিত, সেহেতু কোনোভাবে যাতে তার খেয়ানত না ঘটে, অবমাননা না হয়, সেভাবে জীবনযাপন করা এবং কোরআনের তিলাওয়াত ও চর্চা জারি রাখা।
সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে হলে ঘরে ঘরে কোরআনের তিলাওয়াতের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে কোরআনুল কারিমের চর্চা। জীবনকে ঢেলে সাজাতে হবে কোরআন-সুন্নাহর আলোয়।
আসুন! কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখি, কোরআনের শিক্ষা আহরণে মনোনিবেশ করি, কোরআনের হাফেজ, আলেম ও কারী সাহেবানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। কোরআনের শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একনিষ্ঠ সহযোগী হই। সর্বোপরি কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাজ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি।
লেখক : খতিব, শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট জামে মসজিদ, কক্সবাজার

