২০২৬ বিশ্বকাপের গ্রুপিং চূড়ান্ত। ঠিক হয়েছে ফুটবলের বিশ্বমঞ্চের সূচিও। ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা দলগুলো জেনে গেছে তাদের গ্রুপ প্রতিপক্ষের বিষয়েও। ৪৮টি দল বিশ্বকাপ খেলবে ১২ গ্রুপে ভাগ হয়ে। ফুটবল মহাযজ্ঞের গ্রুপগুলো নিয়ে আমার দেশ-এর বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে ‘এইচ’ গ্রুপে থাকা উরুগুয়ে, সৌদি আরব, কেপ ভার্দের শক্তিমত্তার বিশ্লেষণ।
২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বসা ওই আসরের আগে স্পেনের দিকে কারোরই নজর ছিল না। হিসাব বরাবর ওই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে ঘিরেই ছিল। কিন্তু সব হিসাব এলোমেলো করে দিয়েছিল ভিসেন্তে দেল বস্কের স্পেন। টিকিটাকার ছন্দে পুরো আসর মাত করে দিয়েছিলেন জাভি হার্নান্দেজ-আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা-ডেভিড ভিয়ারা। জিতেছিলেন শিরোপা। সময়ের ক্রমে স্পেন হয়ে উঠল দুর্দান্ত দল। ইউরোপের ফুটবলের গতিশীলতাকে এক পাশে ঠেলে টিকিটাকার পসরা সাজিয়েই ম্যাচের পর ম্যাচ মাত করে দেন পেদ্রি-গাভি-লামিনে ইয়ামালের মতো কিশোর-তরুণরা। নিজেদের গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে স্প্যানিশরা। প্রতিভায় ঠাসা এই দলের দিকে বিশ্বকাপেও নজর সবার।
ভারসাম্যপূর্ণ দল স্পেন। রক্ষণ থেকে শুরু করে মধ্যমাঠ ও আক্রমণভাগÑকোথাও কমতি নেই। গোলপোস্টের নিচে আছেন উনাই সিমোন, অ্যালেক্স রেমিরো, ডেভিড রায়া। রক্ষণে এমেরিক লাপোর্ত, ড্যানিয়েলে ভিভিয়ান, মার্কোস ইয়োরেন্তে, মার্ক কুকুরেলা, পাউ কুরবাসি, পেদ্রো পোরো। মাঝমাঠে ফ্যাবিয়ান রুইজ, মিকেল মেরিনো, গাভি, পেদ্রির মতো তারকারা। আক্রমণভাগে মিকেল ওয়ারজাবাল, দানি ওলমো, ফের্মিন লোপেজ, লামিনে ইয়ামাল, ফেরান তোরেস, নিকো উইলিয়ামসের মতো তরুণ তারকারা। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোর আসর মাতাতেই মাঠে নামবে স্পেন।
এই গ্রুপে স্পেনের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে। বাছাইয়ের লড়াইয়ে ব্রাজিলকেও পেছনে ফেলে চার নম্বরে থেকে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে দুবারের বিশ্বকাপজয়ীরা। যদিও এখন আর উরুগুয়ের ভরা যৌবন নেই। লুইস সুয়ারেজ, এডিসন কাভানিদের মতো তারকারা নেই। তবে তাদের সমীহ করতেই হবে। ব্রুনো মেন্দেজ, মাথিয়াস অলিভিয়েরা, ফেদেরিকো ভালভার্দে, মানুয়েল উগার্তে, ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাউহো ও ডারউইন নুনেজদের নিয়ে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতোই দল তারা।
সৌদি আরবের কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল এশিয়ার দেশটি। সময়ের ক্রমে ফুটবলে নিজেদের বেশ উচ্চতায় নিয়ে গেছে সৌদি। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, সাদিও মানে, রিয়াদ মাহরেজদের মতো তারকা খেলছেন দেশটির সর্বোচ্চ ঘরোয়া লিগে। তাতে উন্নতি করার সুযোগ পেয়েছেন সৌদি ফুটবলাররাও। সালেম আল দাওসারি, মুসাব আল জুওয়াইর ও সৌদ আবদুল হামিদরা মাতাচ্ছেন সৌদি প্রো লিগ। বিশ্বকাপেও আরব দেশটির ওপর নজর থাকবে। স্পেন ও উরুগুয়েকে চমকে দিতে পারে তারা।
এই গ্রুপের শেষ দল কেপ ভার্দে। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট কাটল প্রায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যার দেশ কেপ ভার্দে। তারা পেছনে ফেলেছে ক্যামেরুনকেও। প্রথমবার বিশ্ব আসরে খেলতে যাওয়া কেপ ভার্দের হয়ে আলো ছড়াতে প্রস্তুত ডেইলন, ডেরয় ও স্টোপিরাদের মতো খেলোয়াড়রা।
এই গ্রুপের লড়াই শুরু হবে ১৫ জুন স্পেন-কেপ ভার্দের ম্যাচ দিয়ে। এরপর ১৬ জুন মুখোমুখি হবে সৌদি আরব ও উরুগুয়ে। পর্যায়ক্রমে ২১ জুন স্পেন-সৌদি আরব, ২২ জুন উরুগুয়ে-কেপ ভার্দে, ২৭ জুন উরুগুয়ে-স্পেন ও কেপ ভার্দে-সৌদি আরব মুখোমুখি হবে।

