স্পিনস্বর্গ বানিয়ে উইন্ডিজকে নরক দেখাল বাংলাদেশ

এম. এম. কায়সার
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৩০

মিরপুরের বহুল আলোচিত ‘কালো’ উইকেট, কালোই রইল। রানের আলো ছড়াল না!
অনেক কষ্টে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশ এখানে রান তুলল ২০৭। সেই রান তাড়ায় নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেল ১৩৩ রানে। লো-স্কোরের ম্যাচ ৭৪ রানে জিতে দুটি স্বস্তি পেল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ তে। আর ওয়ানডেতে টানা হারের যন্ত্রণা থেকে আপাতত প্রাথমিক মুক্তি মিলল।
২০৭ রান তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হলো বেশ। ওপেনিং জুটিতে যোগ হলো ৫১ রান। তবে দৃশ্যপট বদলে গেল লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন আক্রমণে আসতেই। নিজের প্রথম ওভারেই রিশাদ উইকেট পেলেন। সেই শুরু। শেষটাও করলেন সেই তিনিই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুর ছয় উইকেটের পাঁচটাই তার! নিজের প্রথম সাত ওভারের মধ্যে তার এই উইকেট শিকারের কৃতিত্ব। শেষ স্পেলে এসে আরেকটি উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের নজির গড়লেন এই লেগস্পিনার। ওয়ানডেতে ছয় উইকেট পাওয়া চতুর্থ বাংলাদেশি রিশাদ। তার আগে এই কৃতিত্ব গড়েছিলেন মাশরাফি, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। কৃতিত্বপূর্ণ এই তালিকায় একমাত্র স্পিনার রিশাদ হোসেন।
ওপেনিং জুটি ছাড়া এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের আর কিছুই ভালো হয়নি। মিরপুরের টার্নি উইকেটে অতিথি দলের ব্যাটিং ছারখার। বাড়তি সমস্যা হলো পরের দুই ম্যাচেও এমন উইকেটই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা যেমন ধীরগতিতে হয়েছিল, শেষটা হলো অমন ভঙ্গিতে; ঝটপট শেষ! ১৬৫ রানে ৫ উইকেট থেকে হঠাৎ ২০৭ অলআউট। পুরোপুরি স্পিনবান্ধব এই উইকেটে বলার মতো ব্যাট করলেন শুধু দুজন। তাওহিদ হৃদয় ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংটা হলো সমর্থন জোগানোর মতো কিছু একটা। দলের রান ২০০ পেরোল শেষের দিকে রিশাদ হোসেনের ১৩ বলে ২৬ রানের টি-টোয়েন্টি ঘরানার ইনিংসের কল্যাণে।
তবে মিরপুরের এমন র‌্যাংক টার্নার উইকেটে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিংটা এল তাওহিদ হৃদয় এবং মাহিদুল ইসলামের কাছ থেকেই। মাহিদুল তার ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে বুঝিয়ে দিলেন পরিস্থিতির দাবি মেটাতে জানেন তিনি।
দলের ৮ রানে দুই ওপেনার বিদায় নিতে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব চাপে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের ওপর। দুজনেই প্রায় একই গতিতে সামনে বাড়েন। ঝুঁকি এড়িয়ে ব্যাট চালান। উইকেট বাঁচলেও রানের চাকা শ্লথ হয়ে পড়ে। ১০ ওভার শেষের স্কোরবোর্ডে জমা ২ উইকেটে ৩৩ রান। দলের ৫০ পুরো হলো ১৬.১ ওভারে। রান তিন অঙ্কে পৌঁছাল ২৯.৩ ওভারে। দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ আনে উইন্ডিজ। ম্যাচের প্রথম ১৫ ওভারের মধ্যে মিরপুরের উইকেটে স্পিন বাঁক নিচ্ছিল সাপের ফণার মতো। এমন উইকেটে গ্রাফটিং করে সামনে বাড়া ছাড়া ব্যাটারদের তেমন উপায়ও নেই। শান্ত-হৃদয় সেই কৌশলেই দলকে এগিয়ে নেন। এমন উইকেটে ক্রসব্যাটে শট খেলা মানেই বিপদকে আমন্ত্রণ জানানো। শান্ত সেই ভুলেই কাটা পড়লেন। ৬৩ বলে তার ৩২ রানের সংগ্রামী ইনিংস শেষ হলো ক্রস ব্যাটে খেলা ভুল শটে। আম্পায়ার অবশ্য এলবির আবেদন গ্রাহ্য করেননি। কিন্তু উইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ রিভিউতে জিতেন।
হাফসেঞ্চুরির পর পেসার জাসটিন গ্রিভসকে জায়গায় দাঁড়িয়ে কাট খেলতে গিয়ে তাওহিদ হৃদয়ও ফিরলেন। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিলেন। মাহিদুল ইসলাম যেভাবে খেলছিলেন তাতে ওয়ানডে অভিষেকে হাফসেঞ্চুরিটা তার পাওনা ছিল। কিন্তু হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তোলার আগেই তাকেও ফিরতে হলো। ৭৬ বলে ৪৬ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। রোস্টন চেজের স্পিন বুঝতেই পারেননি মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। স্লগ সুইপের জোসে হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরলেন।
অঙ্কনের আউটের পরপরই যেন বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের আঁকিবুঁকিও শেষ! ৩ বাউন্ডারিতে ৪৬ রানের কার্যকর একটা ইনিংস খেলে অঙ্কন যখন ফিরলেন তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান ১৬৫। মূলত সেখানেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষের শুরু! শেষের ৪.২ ওভারে ৪২ রান যোগ করে বাংলাদেশ হারায় শেষ ৫ উইকেট।
দলের স্কোর ২০০ টপকালো মূলত সেই স্বস্তি নিয়েই ফিরল বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেটে বল যেভাবে লাটিমের মতো ঘুরছিল তাতে স্কোরবোর্ডে ২০৭ রানকে যে ২৬০-এর মতোই মনে হচ্ছিল। ১৩৩ রানে লুটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই হিসাবকে সঠিক প্রমাণই করল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ: ২০৭/১০ (৪৯.৪ ওভারে, সাইফ ৩, সৌম্য ৪, শান্ত ৩২, হৃদয় ৫১, অঙ্কন ৪৬, মিরাজ ১৭, সোহান ৯, রিশাদ ২৬, তানভীর ৯*, তাসকিন ০, মোস্তাফিজুর ১, অতিরিক্ত ৯, সীলস ৩/৪৮, চেজ ২/৩০, গ্রিভস ২/৩২)।


ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৩৩/১০ (৩৯ ওভারে, কিং ৪৪, এলিক ২৭, হোপ ১৫, রিশাদ ৬/৩৫, মোস্তাফিজুর ২/১৬, মেহেদি ১/১৬)।

ফল : বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : রিশাদ হোসেন।

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত