ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে বার্লিনে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। আলোচনাটি সোমবারও চালিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এতে “অনেক অগ্রগতি হয়েছে”। ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই বৈঠকে স্টিভ উইটকফ ছাড়াও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার অংশ নেন। যদিও আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। জেলেনস্কির উপদেষ্টা দিমিত্রি লিটভিন জানিয়েছেন, বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট সোমবার আলোচনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করবেন। তিনি জানান, আলোচনার খসড়া নথিগুলো বর্তমানে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
লিটভিন সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেন, দুই পক্ষ পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করেছে এবং সোমবার সকালে আবার আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠক শেষ হয়।
আলোচনার আগে জেলেনস্কি পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে ন্যাটোতে যোগদানের ইউক্রেনের লক্ষ্য পরিত্যাগের প্রস্তাব দেন। এটি ইউক্রেনের নীতিগত অবস্থানে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে সুরক্ষার জন্য ন্যাটোতে যোগদান ছিল ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের কৌশলগত লক্ষ্য এবং তা দেশটির সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত।
এই প্রস্তাব রাশিয়ার অন্যতম দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও ইউক্রেন এখনো মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি হয়নি।
স্টিভ উইটকফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, শান্তির জন্য একটি ২০ দফার পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক এজেন্ডাসহ নানা বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে এবং প্রতিনিধিরা আবার বৈঠকে বসবেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এই আলোচনার আয়োজন করেন। একটি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে আলোচনার সূচনা করার পর সেখান থেকে সরে যান।
এদিকে সোমবার আলোচনায় অংশ নিতে আরও কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা জার্মানিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের মাধ্যমে প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চেয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কিছু অংশীদার দেশ এই অবস্থান সমর্থন করেনি।
তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, ন্যাটোর আর্টিকল ফাইভের সমতুল্য সুরক্ষা এবং ইউরোপীয় অংশীদারদের পাশাপাশি কানাডা ও জাপানের মতো দেশের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাই ভবিষ্যতে আরেকটি রুশ আগ্রাসন ঠেকানোর বাস্তব সুযোগ হতে পারে। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করাকে একটি ন্যায্য বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
এসআর

