ভারতীদের লক্ষ্য করে কানাডার গণভিসা বাতিলের পরিকল্পনা

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৫
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯

কানাডায় ভিসা ও অভিবাসন সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। দেশটির সরকার এমন একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশ বা গোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক ভিসা একসাথে বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এই পরিকল্পনার আওতায় ভারত ও বাংলাদেশকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কানাডার অভিবাসন দপ্তর ইমিগ্রেশন, রিফিউজি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (IRCC) এবং কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA)-এর এক যৌথ উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি বিশেষ কর্মগোষ্ঠী গঠন করেছে। এই টিমের কাজ হলো প্রতারণামূলক বা সন্দেহজনক ভিসা আবেদন চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনে সেই আবেদনগুলো বাতিল করা।

বিজ্ঞাপন

উপস্থাপনায় বলা হয়, এই উদ্যোগ মূলত “দেশভিত্তিক চ্যালেঞ্জ” মোকাবিলার অংশ, যেখানে ভারত ও বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ উৎস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী লেনা দিয়াব জানিয়েছেন, এই ক্ষমতা মূলত যুদ্ধ বা মহামারির মতো বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হবে। তবে অভ্যন্তরীণ নথিতে দেশভিত্তিক ভিসা বাতিলের কথাও উল্লেখ থাকায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

সরকার ইতোমধ্যেই একটি বিল পার্লামেন্টে তুলেছে, যার মাধ্যমে এই ‘গ্রুপ ভিত্তিক ভিসা বাতিলের ক্ষমতা’কে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সরকার দ্রুত এই বিলটি পাস করাতে চাইছে।

শিক্ষার্থী ও আবেদনকারীদের ওপর প্রভাব

গত আগস্টে কানাডা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৪ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে, অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনই ভিসা পাননি। ফলে ভারতের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কানাডায় উচ্চশিক্ষার পথ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

এছাড়া, নথিতে দেখা গেছে যে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের নাগরিকদের আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) দাবির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে — মে ২০২৩-এ যেখানে মাসে ৫০০ জনেরও কম দাবি জানিয়েছিলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সেই সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ২,০০০ জনে।

এই বৃদ্ধির কারণে ভিসা যাচাই ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে যেখানে গড় প্রসেসিং সময় ছিল ৩০ দিন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ দিন। ফলে অনুমোদনের সংখ্যা কমেছে — জানুয়ারি ২০২৪-এ যেখানে ৬৩ হাজারের বেশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, জুনে তা নেমে আসে প্রায় ৪৮ হাজারে।

প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে সরকার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, অঞ্চল বা দেশের আবেদন একসাথে বাতিল করতে পারবে। এটি কার্যকর হলে কানাডা প্রথমবারের মতো আইনি প্রক্রিয়ায় ‘মাস ভিসা ক্যানসেলেশন’ করার ক্ষমতা পাবে।

তবে মানবাধিকার ও নাগরিক সংগঠনগুলো এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, এই ক্ষমতা “এক ধরনের গণনির্বাসন প্রক্রিয়া” চালুর পথ খুলে দিতে পারে, যা বিদেশিদের প্রতি বৈষম্য বাড়াবে। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩০০ নাগরিক সংগঠন এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কানাডার এই নীতি মূলত ভিসা জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধের উদ্দেশ্যে হলেও এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ভারত ও বাংলাদেশের আবেদনকারীদের ওপর। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এর ফলে কানাডায় পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ খুঁজতে যাওয়া দক্ষিণ এশীয়দের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

সরকারি সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১,৮৭৩ জন ভারতীয় যাত্রীকে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং তাদের ‘প্রসিডিউরাল ফেয়ারনেস লেটার’ পাঠানো হয়েছে — যেখানে তাদের অধিকার ও আপিলের সুযোগের কথা জানানো হয়েছে।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে কানাডার সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক এই নীতি পরিবর্তন দুই দেশের সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কানাডা এখন এমন এক নীতির দিকে যাচ্ছে যেখানে নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে — যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের ওপরই।

সূত্রঃ এনডিটিভি

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত