ইসরাইলি নাগরিক আব্রাহাম বিনেনফেল্ড। ২০২৩ সালে দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের নৃশংস হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শংকিত হয়ে পড়েন। গাজা নিয়ে ইসরাইল সরকারের পরিকল্পনা নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করে তাকে। পরে সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সে যোগ দিয়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেন তিনি। কারণ তার দুই ভাই যুদ্ধ ইউনিটে থাকায় ভাইদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি।
কিন্তু এখন গাজা যুদ্ধে ইসরাইল ও হামাস যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো অব্যাহত হামলা চলছে ইসরাইলের। এসব বিষয় বিনেনফেল্ডকে দেশত্যাগে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
বিনেনফেল্ড বলেন, সাইরেন, সন্ত্রাসী হামলা, আঞ্চলিক যুদ্ধ, ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, গাজা ও লেবাননে তার ভাইদের প্রাণের শঙ্কা সবকিছু তার ওপর প্রভাব ফেলছে। ইসরাইল সরকার তার বর্তমান পরিকল্পনার বাইরে যদি সঠিকপথে চলতে পারত তবে তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলাতেন। কিন্তু যেহেতু সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না, তাই বেঁচে থাকার তাগিদে দেশত্যাগই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি। গাজা যুদ্ধের পর থেকে গত দুই বছরে কয়েক হাজার ইসরাইলি নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।
ইসরাইলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০২৪ সালে ১ কোটি নাগরিকের মধ্যে ৮০ হাজারেরও বেশি দেশ ছেড়েছেন এবং এ বছরও একই সংখ্যা আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজনেরও বেশি ইসরাইলি দেশত্যাগের কথা ভাবছেন। রোববার প্রকাশিত এই নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ২৭ শতাংশ ইসরাইলি দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। যদিও তাদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন, গণহারে দেশত্যাগ রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হবে। এপ্রিল মাসে ৭২০ জন ইহুদি এবং ১৮৭ জন আরব নাগরিকের মধ্যে এই জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে ৩০ শতাংশ আরব এবং ২৬ শতাংশ ইহুদি দেশত্যাগের কথা ভাবছেন। তাদের মতে, ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদিরা ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে নিরাপত্তা, রাজনীতি, কর্মসংস্থান এবং জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন। তাই তারা দেশ ছাড়তে আগ্রহী। তবে দেশ ছাড়তে আগ্রহীদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ ইহুদি এবং ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ আরব বলেছেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, কিন্তু ইসরাইল ছাড়তে চান তারা।
ধর্মনিরক্ষেপ ইহুদি তরুণদের ৬০ শতাংশ বিদেশে চলে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আর যারা বেশি বেতনের চাকরি করেন এবং বিদেশি পাসপোর্ট আছে তাদের ৮০ শতাংশই বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরব ও ইহুদি, যারা বেশি শিক্ষিত এবং উচ্চ বেতনের চাকরি করেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি। তবে যারা মাঝারি বেতনের চাকরি করেন তারাও একই পথে হাঁটছেন। একইভাবে, উচ্চ প্রযুক্তি, চিকিৎসা এবং ফাইন্যান্সের মতো বিশ্বব্যাপী চলাচলের সুযোগ করে দেয় এমন চাকরিতে থাকা ব্যক্তিদের চলে যাওয়ার কথা সবচেয়ে বেশি ছিল।


আফগান শরণার্থীদের নথিপত্র পুনঃতদন্তের আহ্বান ট্রাম্পের
আফগানদের অভিবাসন আবেদন স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র