লেবাননে সফরের দ্বিতীয় দিনে হাজারো তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনায় রোমাঞ্চিত হয়ে সোমবার আশার বার্তা দিলেন পোপ লিও চতুর্দশ। সংকটপীড়িত দেশটিতে আমেরিকান এই পোপের আগমনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়, বৃষ্টিও থামাতে পারেনি মানুষের ঢল।
বৈরুতের উত্তরে বকিরকে-তে যুবকদের এক অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫,০০০ মানুষের করতালি, শিস আর উল্লাসে পোপকে বরণ করা হয়। মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণে প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভিড়ে। খবর এএফপির।
পোপ তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা যে বিশ্ব পেয়েছ, তার চেয়ে ভালো একটি বিশ্ব গড়ে তোলো। ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার শক্তি তোমাদের আছে। লেবাননের তরুণেরা—দেবদারুর মতো দৃঢ় হও, আর পৃথিবীকে আশায় ভরিয়ে তোলো।”
তরুণদের দেশত্যাগ ও অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপট
২০১৯ সালের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, পরের বছর বৈরুত বন্দরের বিস্ফোরণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ সংঘাতের শঙ্কা লেবাননের তরুণদের দেশত্যাগ বাড়িয়ে তুলেছে। এ বাস্তবতার মধ্যেই পোপের সফর অনেকে নতুন উদ্দীপনা হিসেবে দেখছেন।
ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ
সোমবার পোপ লেবাননের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “সহনশীলতা, অহিংসা ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে শান্তি নির্মাণই আপনাদের দায়িত্ব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সহাবস্থান যদি কখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়, লেবানন স্মরণ করিয়ে দেয়—ভয়, অবিশ্বাস ও পূর্বাগ্রহই চূড়ান্ত শব্দ নয়; ঐক্য ও পুনর্মিলন সম্ভব।”
ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন
পোপ লিও সকালে সেন্ট শারবেলের সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন এবং হারিসায় আওয়ার লেডি অব লেবাননের মূর্তি ঘিরে এক প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। তিনি বলেন, “বিশ্বের জন্য আমরা শান্তি চাই—বিশেষত লেবানন ও সমগ্র লেভান্তের জন্য।”
সীমান্ত অঞ্চলের প্রত্যাশা
ইসরাইল সীমান্তের কাছে রমিশ গ্রামের পুরোহিত টনি এলিয়াস জানান, “দুই বছর ধরে যুদ্ধের মধ্যে থেকেও আমরা আশা হারাইনি। পোপের আগমন আমাদের সেই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।”
যদিও নভেম্বর ২০২৪-এর যুদ্ধবিরতি এখনও কার্যকর তারপরেও ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত চাপে লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের চাপের মুখে রয়েছে।
জাতীয় উৎসবমুখর পরিবেশ
রবিবার তুরস্ক থেকে আগত পোপের সফর উপলক্ষে লেবানন সরকার সোমবার ও মঙ্গলবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সড়ক বন্ধ ও ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
থেরেস দারাউনি নামে একজন বলেন, “সবাই রোমে যায় পোপকে দেখতে, কিন্তু তিনি আমাদের কাছে এসেছেন—এটাই সবচেয়ে বড় বরকত।”
ইয়াসমিন চেদিয়াক বলেন, “তার আগমন আমাদের মুখে আবার হাসি ফিরিয়ে দিয়েছে।”
এসআর

