উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার নাগরিক ২৬ বছর বয়সি মোহাম্মদ বোয়াজিজি রাস্তায় ফল বিক্রি করতেন। একদিন পুলিশ তার গাড়িটি জব্দ করলে পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। ১৫ বছর আগে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটে।
ওই ঘটনার পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু করেন লাখো মানুষ। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি ও ভিন্নমত দমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন জনগণ। মাত্র ২৮ দিনের বিপ্লবে ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট জাইন এল আবেদিন বেন আলিকে উৎখাত করেন বিক্ষোভকারীরা।
তিউনিসিয়ার বিদ্রোহে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১১ সালে মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বিক্ষোভে নামে লাখো মানুষ। যা পরিচিতি পায় ‘আরব বসন্ত’ নামে। ওই বিপ্লবে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা পাঁচ নেতার পতন ঘটে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা সেসব নেতার সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা তুলে ধরেছে।
তিউনিসিয়া
জাইন এল আবিদিন বেন আলি ১৯৮৭ সালে তিউনিসিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিব বোরগুইবাকে শারীরিকভাবে শাসনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। দুই দশকের স্বৈরশাসনের পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিনি গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। আট বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ৮৩ বছর বয়সে জেদ্দায় নির্বাসিত অবস্থায় মারা যান বেন আলি।
মিসর
মিসরে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত খুনের পর হোসনি মুবারক প্রেসিডেন্ট হন। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের প্রতিবাদে ও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৮ দিনের বিক্ষোভের পর ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হন মুবারক। বিপ্লবের সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যার দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তির পর ২০২০ সালে ৯১ বছর বয়সে কায়রোয় মারা যান মুবারক।
ইয়েমেন
ইয়েমেনের শক্তিশালী নেতা আলি আবদুল্লাহ সালেহ ৩৩ বছর দেশটি শাসন করেন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে উত্তর ইয়েমেন এবং ১৯৯০ সাল থেকে একীভূত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১১ সালে আরব বসন্ত শুরুর পর ২০১২ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর চুক্তির আওতায় পদত্যাগ করেন সালেহ।
কিন্তু নিজের পুরোনো শত্রু হুথিদের সঙ্গে আশ্চর্যজনক জোট করে ২০১৪ সালে তাদের রাজধানী সানা দখলে সহায়তা করে। ২০১৭ সালে চুক্তিটি ভেঙে গেলে ৭৫ বছর বয়সে হুথি বাহিনীর হাতে তিনি নিহত হন।
লিবিয়া
লিবিয়ার সেনা কর্মকর্তা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ১৯৬৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক মানবাধিকার আইনজীবীকে গ্রেপ্তারের পর বেনগাজিতে বিক্ষোভ শুরু হলে আগস্টে বিরোধী সশস্ত্র বাহিনী ত্রিপোলি দখল করে। নিজ শহর সির্তেতে ফেরার পর ২০ অক্টোবর বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং নিহত হনগিাদ্দাফি। এর মাধ্যমে তার ৪২ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
সিরিয়া
সিরিয়ায় ২০০০ সালে বাশার আল-আসাদ তার বাবার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই বিশেষ সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। স্কুলের দেয়ালে সরকারবিরোধী গ্রাফিতি লেখার মদ্য দিয়ে শুরু হয় বিপ্লব।
সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সরকারি বাহিনী দমনপীড়ন চালায় এবং যা গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত করে। প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে শেষ হয় হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্ক দখল করলে আসাদ ও তার পরিবার বিমানে করে দেশ ছেড়ে মস্কো পালিয়ে যায়। এভাবে আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


মাদকবিরোধী অভিযানে ইকুয়েডরে মার্কিন সেনা মোতায়েন
ভেনেজুয়েলায় পুতুল সরকার বসাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: মাদুরো
ভারতীয় সাবেক কর্ণেলের হুমকি, হাদির পর ‘টার্গেট’ হাসনাত