আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

অভিবাসী ছাড়া কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অভিবাসী ছাড়া কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দায়িত্ব নিয়েই কঠোর করেন দেশটির অভিবাসননীতি। সেই কঠোর ব্যবস্থার মাত্র এক বছরের মধ্যেই কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। লুইজিয়ানার বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা কাজের জন্য কাঠমিস্ত্রি খুঁজে বেড়াচ্ছে। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার হাসপাতাগুলোতে চলছে বিদেশি চিকিৎসক ও নার্স সংকট। টেনেসির মেমফিসে অবস্থিত একটি পাড়ার ফুটবল লিগ পর্যাপ্ত দল তৈরি করতে পারছে না; কারণ অভিবাসী শিশুরা আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

আর এসব সমস্যার একমাত্র কারণ অভিবাসীদের এ দেশে প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ। বিশ্বের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা, সিল মেরেছে সীমান্তে, দেশটিতে প্রবেশের আইনি পথগুলো সংকুচিত করেছে। একইসঙ্গে নতুন আগত এবং দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের বিতাড়ন করেছে। ভিসা ফি বাড়িয়েছে, অভিবাসী ভর্তি প্রায় শূন্য এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র ভর্তিও বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিগত বাইডেন প্রশাসনের অধীনে প্রদত্ত অস্থায়ী আইনি মর্যাদা প্রত্যাহারের ফলে যেকোনো সময় বহিষ্কারের ঝুঁকিতে আছে আরো কয়েক লাখ মানুষ। প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ছয় লাখেরও বেশি লোককে বহিষ্কার করেছে।

তবে বিদেশি বংশোদ্ভূত জনসংখ্যা রাতারাতি কমানো যাবে না। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স অনুমান করে যে, বর্তমান নীতিমালার অধীনে বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ লোকের নেট অভিবাসন চলছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ আসার তুলনায় এটি অনেক কম। ২০২৪ সালে দেশটির জনসংখ্যার মধ্যে বিদেশি বংশোদ্ভূতদের হার ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ১৮৯০ সালের পর আর দেখা যায়নি।

অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোর সঙ্গে এমনভাবে মিশে গেছে যে, দেশটিকে ঘিরে লাখ লাখ আমেরিকানের দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে বদলে দেবে।

দেশটির যেসব শহরে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীদের চোখে পড়ত, সেসব শহর, গ্রোসারি, গির্জা এখন একেবারেই শান্ত। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউ ইয়র্ক সিটি বিদেশি শিক্ষার্থীশূন্য।

১৯৯০ এর দশকে আইওয়া অঙ্গরাজ্যের মার্শাল টাউনে শূকরের মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে কিছু মেক্সিকান এ দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল। পরে ২০০৬ সালে সেখানে বড় ধরনের অভিযান চালায় সরকার। এসব ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে মিয়ানমার, হাইতি, কঙ্গো থেকে মর্যাদাসম্পন্ন অভিবাসীদের সেখানে আনা হয়েছিল।

১৯ শতকে আদালত ভবনের আশপাশে মেক্সিকান, চীনা এবং ভিয়েতনামি রেস্টুরেন্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এখানকার জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ অভিবাসী, পাবলিক স্কুলগুলোতে প্রায় ৫০টির মতো উপভাষায় কথা বলা হতো। এসব এলাকার গির্জাগুলোয় রোববারের প্রার্থনা সভা কানায় কানায় ভর্তি থাকত।

কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে স্থানীয় উৎসবগুলোতে অভিবাসীদের উপস্থিতি কমতে শুরু করে। কারণ, ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে অভিবাসীরা নিজেরা যেমন কাজে যেতে পারছেন না, তেমনি সন্তানদেরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না। বিপাকে পড়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর শূকরের মাংস প্রক্রিয়াকরণ ফ্যাক্টরির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই পরিবর্তনগুলোর অর্থ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে অভিবাসন দমনের অতীত যুগে কিছু তিক্ত শিক্ষা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই অভিবাসননীতি যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে বিপাকে পড়বে নার্সিং হোম, চাইল্ড কেয়ারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

এরই মধ্যে কর্মী সংকটের প্রভাব পড়েছে শ্রমবাজারে। বেশি মজুরি দিয়েও মিলছে না কর্মী। এমন পরিস্থিতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর
Loading...