চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের রাস্তায় নামেন হাজার হাজার উগ্র অভিবাসীবিরোধী লোক। ব্রিটেনে এসে নাগরিকত্ব পাওয়া বিভিন্ন জাতির লোকদের উদ্দেশ করে তারা স্লোগান দেন, ‘তাদের বের করে দাও’, ‘তাদের ঘরে পাঠাও’, ‘আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই’।
সমাবেশে অংশ নেওয়া এক পার্লামেন্ট সদস্য অভিযোগ করেন, ব্রিটিশ টেলিভিশনেই এখন প্রচুর অশেতাঙ্গ মুখ দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনের বাইরে জন্ম নেওয়া নাগরিকদের বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
ব্রিটেন ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব জোরালো হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশগুলোয় এসে বাস করা মানুষকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। জনপ্রিয়তা ও ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে উগ্র রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলগুলো অভিবাসন রোধকে তাদের এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছে।
বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশেও রাজনৈতিক দলগুলো অভিবাসীদের বহিষ্কারের জোর দাবি তুলছে। ব্রিটেনের রিফর্ম ইউকে, জার্মানির এএফডি বা ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালির মতো দলগুলো অভিবাসনকে জাতীয় পরিচিতির জন্য হুমকি বলে তুলে ধরছে।
এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দেশটিতে সোমালিয়া থেকে এসে বাস করা অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বলে মন্তব্য করেছেন। এর আগে বিভিন্ন সময় অভিবাসীবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ইউরোপের স্থূল অভিবাসীবিরোধী মনোভাবাপন্ন দল ও সংগঠনগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছেন তিনি।
এ অস্থিরতার মধ্যেই ইউরোপের মূলধারার দলগুলোও অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিভক্তিজনক ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের বেলফাস্টের কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিটিশ ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক কিরেন কনেল বলেন, ‘একসময় যা উগ্রতা হিসেবে রক্ষণশীল দলগুলোর কাছ থেকেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, এখন সেটাই রাজনৈতিক বিতর্কের মূল অংশ হয়ে উঠেছে।’
বেশকিছু ইউরোপীয় দেশে গত দশকে অভিবাসন নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে সংঘাতের জেরে লাখ লাখ আশ্রয়প্রার্থী তাদের দেশ ছেড়ে ইউরোপে এসেছেন।
তবে মোট অভিবাসনের ক্ষুদ্র একটি অংশ আশ্রয়প্রার্থীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন কারণেই বৈচিত্র ও অভিবাসনের বিরুদ্ধে মনোভাব দেখা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর থেকে অচলাবস্থা, ক্যারিশম্যাটিক জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের উত্থান ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেরূকরণÑসবকিছুই এতে ভূমিকা রেখেছে।
লন্ডনের কিংস কলেজের পলিসি ইউনিটের ডিরেক্টর ববি ডাফি জানান, ব্রিটেনে জাতিগত স্বতন্ত্রতার ধারণা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এর ফলে লোকজন উগ্র রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে। অর্থনৈতিক সংকট থেকেই এ মনোভাব গড়ে উঠছে, যা ব্রেক্সিটের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং কোভিড-১৯ মহামারির মাধ্যমে আরো গভীর হয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ মনোভাব আরো জোরালো করেছে।
ইউরোপজুড়ে সাধারণত ব্রিটেনের রিফর্ম ইউকে, জার্মানির এএফডি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি ও হাঙ্গেরির ফিডেস পার্টির মতো উগ্র রক্ষণশীল দলগুলোই নৃতাত্ত্বিক জাতি বিভেদের প্রচারণা করত। বর্তমানে তা মূলধারার দলগুলোর মধ্যেও প্রবেশ করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নীতিমালা অনুযায়ী ইউরোপ অভিবাসন বেড়ে যাওয়া ও জাতীয় পরিচিতি হারানোর কারণে ‘অর্থনৈতিক পতন’ ও ‘সভ্যতার বিলোপ’ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালির নেতা জর্ডান বারডেলা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ট্রাম্পের শঙ্কার সঙ্গে তিনি একমত। বিপুল অভিবাসনের কারণে ইউরোপের দেশগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
ব্রিটেনের রিফর্ম ইউকে দল বলে আসছে, তারা যদি ক্ষমতায় যায় তবে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বিলুপ্ত করা হবে। যদিও ওই অভিবাসীরা দশকের পর দশক দেশটিতে থাকেন। রক্ষণশীল কনজারভেটিভ পার্টি জানিয়েছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত দ্বি-নাগরিকত্বের অধিকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের তারা বহিষ্কার করবে।
কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ডন বাটলার বলেন, ‘পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তাতে সন্দেহ নেই।’ তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন তার বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্রভাবে বেড়ে চলছে। এমনকি তাকে মৃত্যুর হুমকি দিয়েও পোস্ট করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত আগের এক বছরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের পুলিশ এক লাখ ১৫ হাজার ঘৃণামূলক অপরাধ (হেট ক্রাইম) রেকর্ড করেছে, যা আগের এক বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি।
তবে এর বিপরীতে মূলধারার অনেক রাজনীতিবিদ এ ধরনের মনোভাবের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির পক্ষ থেকে জাতিগত বিদ্বেষের নিন্দা জানানো হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের জাতীয় ইতিহাসে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।


বলিভিয়ায় বন্যায় ৭ জনের মৃত্যু
সিডনিতে বন্দুক হামলার ঘটনায় আরব দেশগুলোর নিন্দা
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও লেবাননে ইসরাইলি হামলা, নিহত ৩