এশিয়ার অর্থনৈতিক জায়ান্ট জাপান তাদের আধুনিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী অথবা সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে। দেশটির ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) শনিবার তাদের পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করবে। নির্বাচিত সভাপতি সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
এলডিপির পাঁচ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ৬৪ বছর বয়সি কট্টর রক্ষণশীল নেতা সানায়ে তাকাইচি এবং ৪৪ বছর বয়সি মধ্যপন্থি শিনজিরো কোইজুমি। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব ৬৪ বছর বয়সি ইয়োশিমাসা হায়াশিকে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পদত্যাগকারী শিগেরু ইশিবার স্থলাভিষিক্ত হবেন নতুন নির্বাচিত নেতা।
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাপানের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে, যেখানে প্রথমবারের মতো নারী অথবা সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তাকাইচি দেশের অর্থনৈতিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। নতুন প্রযুক্তি, অবকাঠামো, খাদ্য উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে আগামী এক দশকের মধ্যে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগের একটি বিনিয়োগ চুক্তি পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন, যা ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অন্যদিকে, কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব হায়াশি পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে কর কমানোর মাধ্যমে সহায়তার পরিকল্পনা করছেন। তবে তারা বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বর্তমান জরিপ অনুযায়ী, নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাকাইচি দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে সমর্থন পাচ্ছেন, যেখানে কোইজুমি দলের আইন প্রণেতাদের বেশি সমর্থন অর্জন করেছেন। যদি প্রথম রাউন্ডে কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পান, তাহলে নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টিনা বুরেটের মতে, কোইজুমি এমন একজন নেতা, যিনি অন্য দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য তৈরি করতে পারবেন, যেখানে তাকাইচি ‘রাজনীতিবিদদের ধূসর জগৎকে নাড়া দিতে সক্ষম’ হবেন। যদি কোইজুমি নির্বাচিত হন, তবে তিনি ১৮৮৫ সালে যুদ্ধ-পূর্ব সংবিধান অনুসারে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিরোবুমি ইতোর তুলনায় কয়েক মাস বড় হবেন।
তবে নির্বাচনে যেই আসুক চলমান অর্থনৈতিক মন্থরতার মধ্যে এলডিপি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। দলটি ইতোমধ্যে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এবং জনগণের হতাশাও বাড়ছে। জাপানের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই নির্বাচন দেশটির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

