ইসরাইলি হামলায় চূর্ণ গাজার কিশোর জিমন্যাস্টের স্বপ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ০৫: ২১

গাজার ১৬ বছরের কিশোর আহমদ আল-গালবান। ৯ বছর ধরে জিমন্যাস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছে সে। ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যেও প্রতিদিন নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে গেছে সে। বোমা হামলার মধ্যেই আহমদ ও তার যমজ ভাই মুহাম্মদ প্রতিদিনই মধ্য গাজায় নিজেদের আশ্রয়ের জন্য অস্থায়ী তাঁবুতে অনুশীলন করতো। তারা স্বপ্ন দেখত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার।

কিন্তু গত মার্চে ইসরাইলি বোমা হামলায় এ স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে যায় আহমদের। হামলায় দুই পা হারায় সে। অন্যদিকে ওই হামলায় নিহত হয় মুহাম্মদ।

বিজ্ঞাপন

মিডল ইস্ট আইকে আহমদ জানায়, সাত বছর বয়স থেকেই প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে সে।

আহমদ বলে, ‘মুহাম্মদ এবং আমি এক ক্লাবে ও স্কুলে প্রশিক্ষণ নিতাম। খুব দ্রুতই আমরা উন্নতি করেছিলাম। নতুনদেরও প্রশিক্ষণ দিতাম আমরা। বিদেশি দর্শকদের সামনে পারফর্ম করতাম আমরা। যুদ্ধের আগে আমাদের মিসরে পারফর্ম করতে যাওয়ার কথা ছিল।’

উত্তর গাজার বাইত লাহিয়ার বাসিন্দা আহমদ আগ্রাসন শুরুর পর ১০ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল আহমদ ও তার পরিবার। সেখানেও আহমদ ও মুহাম্মদ তাদের অনুশীলন অব্যাহত রেখেছিল।

আহমদ বলে, ‘বিমান হামলার মধ্যেই আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু আমার ভাই ও আমার বড় স্বপ্ন ছিল। তাই আমরা কোনো সময়ই নষ্ট করতাম না।’

গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির পর নিজেদের বাড়িতে ফেরে তারা। ফিরে এসে তারা দেখে, তাদের বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আহমদ বলে, ‘ধ্বংসের মাত্রা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি আমাদের বাড়ি এভাবে ভূমির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে।’

ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতেই তাদের চারদিন লেগে যায়। এরপরই আহমদ ও মুহাম্মদ আবার তাদের অনুশীলন শুরু করে।

আহমদ বলে, ওই সময় ৫০ দিন ছিল তার ‘সবচেয়ে আনন্দের দিন।’

কিন্তু ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় আবার আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল। চারদিন পর ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

আহমদ, মুহাম্মদ, তাদের এক চাচা ও ছয় বছরের চাচাতো ভাই পায়ে হেঁটে এক রাস্তা দিয়ে বাড়ি ছাড়ে। পরিবারের অন্যরা অন্য পথ দিয়ে বাড়ি ছাড়ে।

পথে ইসরাইলি বিমান তাদের ওপর সরাসরি হামলা করে। হামলায় ঘটনাস্থলেই চাচা ও চাচাতো ভাই নিহত হয়। ভয়াবহভাবে আহত হয় আহমদ ও মুহাম্মদ।

আহমদ বলে, ‘আমি কল্পনাই করতে পারিনি মুহাম্মদ মারা যাবে। আমরা অ্যাথলেট। আমি বিশ্বাস করতাম না কোনো মিসাইল আমাদের হত্যা করতে পারবে। আমি তাকে বারবার ডাকছিলাম, কিন্তু মুহাম্মদ কোনো উত্তর না দিয়েই শুধু কোরআন তিলাওয়াত করছিল।’

পরে স্থানীয় লোকেরা একটি টুকটুকে করে তাদেরকে উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ডাক্তাররা দুই ভাইয়ের পা কেটে ফেলে। ভয়াবহভাবে জখম হওয়ায় আহমদের ডান হাতের চারটি আঙুলও কেটে ফেলা হয়।

আহমদ বলে, ‘পুরো সময়টি আমি সজাগ ছিলাম। আমার চোখের সামনেই আমার পা কেটে ফেলা হয়। জিমন্যাস্টিকসের অনুশীলনে কাজে লাগানো আমার পা তারা কেটে ফেলে। এগুলো ছিল আমার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।’

এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুহাম্মদ মারা যায়। ১৭ দিন পরে আহমদ এ খবর জানতে পারে।

হাসপাতালে ৬৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিল আহমদ। চিকিৎসকরা জানান, আহমদ কৃত্রিম পা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু গাজায় তা এখন দুর্লভ। আবার যুদ্ধের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়াও কঠিন।

তবে এর মধ্যে এখনো জিমন্যাস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখে আহমদ। সে বলে, ‘আমার শুধু কৃত্রিম পা প্রয়োজন। আমি আবার আমার জীবনে ফিরতে চাই এবং স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত