আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

এবার বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিলো রাশিয়া

আমার দেশ অনলাইন
এবার বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিলো রাশিয়া

বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে ২৩ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনকে সহায়তায় জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহারের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরিকল্পনার জেরে বেলজিয়ামভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মস্কোর একটি আদালতে দায়ের করা এই মামলাকে ক্রেমলিন ইউরোপের জন্য একটি “আইনি দুঃস্বপ্ন”-এর সূচনা বলে আখ্যা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপে প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৪৬.৬ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করা হয়। এই অর্থের একটি অংশ ব্যবহার করে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ইউক্রেনের সামরিক ও বেসামরিক প্রয়োজনে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইইউ।

শুক্রবার ইইউ নেতারা এসব সম্পদ অনির্দিষ্টকালের জন্য জব্দ রাখার বিষয়ে একমত হন। তাদের যুক্তি, ইউক্রেনকে সহায়তা না করলে ভবিষ্যতে রাশিয়া ন্যাটো দেশগুলোকে আক্রমণ করতে পারে—যা মস্কো প্রত্যাখ্যান করেছে।

মস্কোর বাণিজ্যিক আদালত জানিয়েছে, তারা ১২ ডিসেম্বর রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মামলা গ্রহণ করেছে। মামলায় ইউরোক্লিয়ারের কাছে রাশিয়ার জব্দকৃত সার্বভৌম সম্পদের সম্পূর্ণ মূল্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আদালত দ্রুত রাশিয়ার পক্ষে রায় দিতে পারে।

যদি রাশিয়া মামলায় জয়ী হয়, তবে তারা ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে বিদেশে—বিশেষ করে চীন, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাজাখস্তানের মতো ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ দেশগুলোতে—সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নিতে পারে।

এদিকে ইইউ-এর শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস সোমবার বলেছেন, ইউক্রেনকে অর্থায়ন নিয়ে চলতি সপ্তাহের শীর্ষ সম্মেলনে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যদিও জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহারের বিষয়টি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “আমরা এখনো চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছাইনি, তবে আলোচনা চলছে।”

বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ-এর ২৭ দেশের নেতারা ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ বেলজিয়াম এখনো জব্দ সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ৯০ বিলিয়ন ইউরোর ‘ক্ষতিপূরণ ঋণ’ দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে।

রাশিয়া আগেই সতর্ক করে দিয়েছে, তাদের সার্বভৌম সম্পদ ব্যবহার করা হলে তা হবে “চুরি”, যা ইউরো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ওপর আস্থা নষ্ট করবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিনিয়োগ দূত কিরিল দমিত্রিয়েভ বলেন, “যদি সম্পত্তির অধিকার সম্মান না করা হয়, তবে কোনো যুক্তিসঙ্গত বিনিয়োগকারী কেন ইউরোক্লিয়ার বা ইউরোপে তার সম্পদ রাখবে?”

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ইইউ-এর এই পরিকল্পনা অবৈধ এবং তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতসহ সব আইনি পথ অনুসরণ করবে।

ইউরোপে এই পরিকল্পনা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেক ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞের মতে, এত বড় অঙ্কের সার্বভৌম সম্পদ জব্দ করা একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করতে পারে। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিক্সব্যাংকের ২০২৪ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চলমান যুদ্ধে কোনো পক্ষভুক্ত নয়—এমন দেশগুলোর দ্বারা যুদ্ধরত দেশের সম্পদ জব্দ করে তৃতীয় দেশকে সহায়তার ঘটনা ইতিহাসে নজিরবিহীন।

এই বিতর্ক এমন সময় সামনে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, কোনো শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন জব্দ করা রুশ সম্পদ মুক্ত করার চেষ্টা করতে পারে।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ

এসআর

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন