আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

আল জাজিরার এক্সপ্লেইনার

রাশিয়ার তেল কিনতে ভারতের নতুন কৌশল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার তেল কিনতে ভারতের নতুন কৌশল
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে আগ্রাসনের দায়ে রাশিয়ার তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতকে রুশ তেল কেনা থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার চাপ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভারত এসব অনুরোধের কোনো তোয়াক্কাই করেনি। উল্টো রাশিয়া থেকে সস্তায় কীভাবে অপরিশোধিত তেল কেনা যায়, তা নিয়েই নতুন নতুন কৌশল করছে মোদি সরকার।

গত সপ্তাহে দিল্লিতে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে পুতিন সাফ জানিয়ে দেন, ‘রাশিয়া ভারতে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত।’

বিজ্ঞাপন

চীনের পর রাশিয়ার এই অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা ভারত। সেই ভারতের ওপরই বারবার চাপ দিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তিস্বরূপ চলতি বছরের শুরুতে ভারতীয় পণ্যের ওপর বাণিজ্য শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, তেলের বিষয়টি এর অন্যতম কারণ।

এত নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সত্ত্বেও দিল্লি কীভাবে মস্কো থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে ভারত রাশিয়ার তেলের এত বড় ভোক্তা হয়ে উঠল? ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পুরোদমে হামলা চালায় রাশিয়া। এর আগে ২০২১ সালে ভারতের মোট আমদানি করা তেলের মাত্র দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে, এমন তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ-আমেরিকা মস্কোকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে। যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোকে চাপে রাখতে ইউরোপ ও আমেরিকা জ্বালানি, বিমান চলাচল থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতে ২১ হাজারের বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জি-৭, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার তেলের দামের ওপর ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়, যা দৃশ্যত ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থায়নকে সীমিত করে। পরে ইইউ ও ব্রিটেন এই সীমা প্রায় ৪৮ ডলারে নামিয়ে আনে। ফলে রুশ তেল ক্রেতাদের কাছে, বিশেষ করে ভারত ও চীনের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ভারতের কাছে মূলত পানির দামে তেল বিক্রি শুরু করে রাশিয়া। ২০২২ সালের মার্চে এই দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৫ ডলারেও নেমেছিল।

অথচ বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হচ্ছে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৬২ দশমিক ৫০ ডলারে।

ভারত কেন কিনছে রুশ তেল। এর অর্থ একেবারেই সহজ। ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারত রাশিয়া থেকে রেকর্ড ৫.৮ বিলিয়ন ডলারের তেল কিনেছে। তবে ওই মাসের শেষে রাশিয়ার নাগরিক এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ছিল রাশিয়ার তেলের জাহাজ, জাহাজ মালিক এবং এর তেল পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। ফলে নভেম্বরে আমদানি কমে ৩.৯ বিলিয়ন ডলারে এবং ডিসেম্বরে ৩.২ বিলিয়ন ডলারে নামে। যাহোক, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে ফিরে আসে। তারপর থেকে আমদানির পরিমাণ ওঠানামা করেছে। গত আগস্টে হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেছিলেন, ভারতের কেনা তেলের টাকায় রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। তাই শাস্তি হিসেবে ওয়াশিংটন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে। অক্টোবরে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, মোদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞার ভয়েই কি মস্কো থেকে কম দামে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত? এর পেছনের কারণ হলো গত ২২ অক্টোবর ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোজনেফ্ট ও লুকোয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। এই নিয়ম ২১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এ সময়ের সুযোগটিই নিয়েছে ভারত। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই ভারতীয় রিফাইনারি বা শোধনাগারগুলো দ্রুত তেল কিনে মজুত বাড়াতে শুরু করে। নভেম্বরের শুরুতে ভারত দিনে ৫০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যা ছিল একটি রেকর্ড।

তবে সামগ্রিকভাবে এটা স্পষ্ট যে, ভারত রুশ তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারত তেল কেনা কিছুটা কমিয়ে আনলেও দিল্লি এখনো জানুয়ারিতে প্রতিদিন ছয় লাখ ব্যারেল তেল কিনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি ১.৬ মিলিয়ন থেকে ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল আমদানির চেয়ে অনেক কম হতে পারে; তবে শূন্য নয়Ñএমনটাই জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। ভারত যে তেল কিনেছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশ রোসনেফ্ট ও লুকোয়েলের। রাশিয়ার সরকারি সংস্থাগুলোর বরাতে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল জানিয়েছে, রাশিয়ার তেল উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের ছয় শতাংশ রোসনেফ্টের। এখন যেহেতু এদের ওপর কড়াকড়ি, তাই ভারতকে বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন