উ.কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের জন্য চীনের সহযোগিতা চাইলো দক্ষিণ কোরিয়া

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২১

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং শনিবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য বেইজিংয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি জানান, চীন সহযোগিতা বাড়াতে এবং যৌথভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায় গিয়ংজু শহরে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক নেতাদের ফোরাম শেষে লি প্রেসিডেন্ট সি-কে রাজকীয় নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। এটি ছিল গত ১১ বছরে কোনো মার্কিন মিত্র দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর।

বিজ্ঞাপন

লি-র দপ্তর জানায়, বৈঠকের আগে সি চিন পিং বলেন, চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ককে বেইজিং অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং সিউলকে "অবিচ্ছেদ্য সহযোগী অংশীদার" হিসেবে দেখে।

চলতি বছরের জুনে আকস্মিক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট লি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবেন, তবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করে এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা হ্রাসের পথ খুঁজবেন।

লি বলেন,“চীন ও উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগে আমরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি গড়ে উঠতে দেখছি। আমি আশা করি, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াবে এবং সংলাপ পুনরায় শুরু করবে।”

লি ধাপে ধাপে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার পক্ষে—যেখানে প্রথম ধাপ হবে সংলাপ শুরু করা ও অস্ত্র উন্নয়ন বন্ধে চুক্তি।

অন্যদিকে, শনিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়া এই প্রস্তাবকে "অবাস্তব স্বপ্ন" বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। পিয়ংইয়ং বারবার বলেছে, তারা দক্ষিণের সঙ্গে আর কোনো আলোচনায় যাবে না এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিউলকে “প্রধান শত্রু” ঘোষণা করেছে।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক, যদি ওয়াশিংটন নিরস্ত্রীকরণের দাবি প্রত্যাহার করে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে এসে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও, কিম প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

লি ও ট্রাম্প যৌথভাবে ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়া বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে—যা এক “অপ্রত্যাশিত সাফল্য” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ট্রাম্প পরে মূল এপেক সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই দেশ ত্যাগ করেন।

সি চিন পিংয়ের সফরে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উন-ইউয়ান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা, অনলাইন অপরাধ প্রতিরোধ, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবসা, ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিত্র ও প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, কিন্তু দেশটি বাণিজ্যে চীনের ওপরও ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

সি ও লি-র বৈঠকের সময় সিউলে শতাধিক প্রতিবাদকারী চীনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা "South Korea belongs to South Korea" এবং "China Out" লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে “চীনা কমিউনিজম, কোরিয়া ছাড়ো” স্লোগান দেন।

৬৪ বছর বয়সী রক্ষণশীল প্রতিবাদকারী কিম হে কিয়ং বলেন, “আমি এখানে এসেছি আমাদের দেশের উদার গণতন্ত্র রক্ষার জন্য।”

অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট লি নির্দেশ দেন বিদেশিবিরোধী ও চীনবিরোধী বিক্ষোভ দমনের, কারণ তার মতে, এসব কর্মকাণ্ড দেশের ভাবমূর্তি ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

(সূত্র: রয়টার্স)

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত