Ad T1

জন্ম থেকেই যুদ্ধ আর সংঘাতে লিপ্ত দুই দেশ

বশীর আহমেদ
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ০৯: ২৩

১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে পাকিস্তান ও ভারত। যে বৈরী মনোভাবের মধ্য দিয়ে দেশ দুটি পথ চলতে শুরু করেছিল তা আজও অব্যাহত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি সংঘাত ও যুদ্ধ পিছু ছাড়েনি পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ দুটিকে। দেশ দুটি কখনো পূর্ণমাত্রায়, কখনো স্বল্প পরিসরে পরস্পরের বিরুদ্ধে বার বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কোনোটিতে জয়ী হয়েছে ভারত, কোনোটিতে পাকিস্তান। আবার কোনোটি শেষ হয়েছে কোনো প্রকার জয়-পরাজয় ছাড়াই। ভারত-পাকিস্তানের যুগ যুগ ধরে চলে আসা বৈরী সম্পর্কের মূলে রয়েছে কাশ্মীর ইস্যু। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই বার বার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে দেশ দুটি।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার কয়েক সপ্তাহ পেরুতে না পেরুতেই প্রথমবারের মতো যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। হিন্দু ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীন হলেও কাশ্মীরসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে উপমহাদেশের শেষ ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল মাউন্ট ব্যাটেন এক প্রকার সংঘাতকে জিইয়ে রাখেন। কাশ্মীরের ব্যাপারে বলা হয় কাশ্মীর ইচ্ছে করলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে অথবা ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তান যে কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। মজার ব্যাপার হলো স্বাধীনতার সময়কালে কাশ্মীরের অধিকাংশ জনগণই ছিলেন মুসলিম। আর শাসক ছিলেন হরিসিং নামে একজন হিন্দু রাজা।

১৯৪৭ সালের শেষের দিকে কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ব্যাপারে তৎকালীন রাজা হরি সিং কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাশ্মীরে বসবাসরত মুসলিম এবং পাকিস্তানের উপজাতীয় মুসলিমরা কাশ্মীরে হামলা চালায়। ওই হামলায় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জনবল ও রসদ দিয়ে সহায়তা করা হয়। রাজা হরি সিং তখন দিল্লির সহযোগিতা চেয়ে একটি চুক্তি সই করেন। ফলে কাশ্মীরে শুরু হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযান। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখল করে নেয়। বাকি অংশ দখল করে নেয় উপজাতীয় মুসলিমরা। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দু’দেশের মধ্যে কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।

১৯৪৮ সালের ২১ এপ্রিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর নিয়ে ৪৭তম রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়। এই রেজুলেশনে কাশ্মীরের শাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গণভোটের কথা বলা হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৪৯ সালে কাশ্মীরকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণ রেখাকে লাইন অব কন্ট্রোলের স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর আজাদ কাশ্মীর এবং ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর জম্মু কাশ্মীর বলে পরিচিতি লাভ করে। দুই পক্ষই আজও কাশ্মীরকে তার নিজস্ব ভূমি বলে দাবি করে। ওই যুদ্ধের ফলাফলকে পাকিস্তানের জয় হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধের ঘটনা ঘটে ১৯৬৫ সালে। পাকিস্তানের সিন্দ প্রদেশের পেছনে কুচ সীমান্তের জলাভূমিতে সংঘটিত সীমান্ত সংঘাত এক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে এক প্রকার যুদ্ধে রূপ নেয়। প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যস্থতায় ১৯৬৫ সালের ৩০ জুন একটি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই বছরের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের অনিয়মিত সৈন্যরা লাইন অব কন্ট্রোল অতিক্রম করে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ঢুকে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’। ওই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল শত্রুদের কমিউনিকেশন সিস্টেম গুঁড়িয়ে দিয়ে কৌশলগত এলাকাগুলো দখল করে দেওয়া। ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ট্যাংক এবং কামান নিয়ে কাশ্মীর সীমান্তে ‘চম্ব’ সেক্টরে ব্যাপক আক্রমণ চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল পুরো কাশ্মীর এলাকা দখল করে নেওয়া।

পাকিস্তানের ওই আক্রমণের পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় সৈন্যরা পাঞ্জাব সীমান্তে আক্রমণ শুরু করে। শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ। ওই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ১৭ দিন। যুদ্ধে পাকিস্তান-ভারতের কিছু এলাকা দখল করে নেয়। বিপরীতে ভারতও পাকিস্তানের তিনটি পয়েন্টে বেশ কিছু জায়গা দখলে নেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভারত বা পাকিস্তান কেউই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এক ধরনের সামরিক অচল অবস্থার মধ্য দিয়ে ওই যুদ্ধের অবসান ঘটে। ২২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ওই যুদ্ধ বিরতির উদ্যোগের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয় এবং উভয়পক্ষই সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৬৫ সালের এই যুদ্ধে বস্তুত কোনো পক্ষেরই জয়-পরাজয় ঘটেনি। উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারত তিন হাজার ৭১২ জন সৈন্য হারায়। অন্যদিকে নিহত পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা ছিল দেড় হাজার।

ভারত-পাকিস্তান তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধে জড়ায় ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরুর মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের ওপর এক অযাচিত যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। ওই যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা দেয় ভারত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরে মাত্র দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী পরাজিত হয়ে আত্মসমপর্ণ করে। পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল এ কে নিয়াজী ভারতীয় জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমপর্ণ করে। এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। এই স্বাধীনতা যুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাংলাদেশি শহীদ হন। বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারতের পক্ষ থেকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়কে ভারত তাদের নিজেদের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত সিমলা চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে।

পরবর্তী সময়ে ১৯৮৬-৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তান আবারো সংঘাতের মুখোমুখি হয়। এই সময়টিতে ভারতের শিখ বিদ্রোহ ছিল তুঙ্গে। শিখ বিদ্রোহে পাকিস্তান মদত যোগাচ্ছে এই অভিযোগ তুলে পাকিস্তানের সিন্দ সীমান্তের কাছে ‘অপারেশন ব্রাস টাস্ক’ নামে বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এই পরিস্থিতিতে রীতিমত যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। পরে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ভারত সামরিক মহড়া চালানো থেকে বিরত হয় ও পরিস্থিতি শান্ত হয়। ১৯৮৯ সালে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আবারো চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী আন্দোলন চাঙ্গা হয় ও সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেয়। ওই সংগ্রামে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনের কথা জানিয়ে জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে ভারতের পক্ষ থেকে ক্রসবর্ডার সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া থেকে পাকিস্তানকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। প্রায় দুই বছর টানটান উত্তেজনা চলার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

১৯৯৮ সালকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই বছরই দেশ দুটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। ১১ থেকে ১৩ মে প্রথমে ভারতের পক্ষ থেকে রাজস্থানের পোখরানে ৫টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো হয়। এর পাল্টা হিসেবে ২৮ থেকে ৩০ মে’র মধ্যে পাকিস্তান অন্তত ৬টি পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালায়। এ সময়ে দেশ দুটির মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা বিরাজ করে। পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে কঠোর নিন্দা জানানো হয়।

একাত্তর সালের পরে কারগিল যুদ্ধ ছিল সবচেয়ে আলোচিত। স্বল্প পরিসরের যুদ্ধ হলেও এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। জম্মু কাশ্মীরের কারগিল জেলায় সংঘটিত হয়েছিল এই আলোচিত যুদ্ধটি। যুদ্ধটি আসলে শুরু হয়েছিল একতরফাভাবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি ছোট কন্টিনজেন্ট পর্বত আরোহীদের পোশাকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভেতরে বেশ কয়েকটি কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে তাদের এই কৌশলগত স্থানগুলো পাল্টা দখলের জন্য অগ্রসর হলে বড় ধরনের আক্রমণের মুখে পড়ে ভারতীয় বাহিনী। এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। ভারতের পক্ষ থেকে বিমান সেনা পাঠিয়েও পাকিস্তানি সৈন্যদের হটানো যায়নি। কারগিল যুদ্ধের প্রথম খবর প্রকাশ করেছিলেন যে সাংবাদিক সেই সুরিন্দার সিং বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা সফর করেছিলেন। ওই সময়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে সুরিন্দার সিং জানান, ভারত সরকার প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে যতসংখ্যক সেনা হারানোর কথা বলে, বাস্তব সংখ্যা ছিল অন্তত তার তিনগুণ। উল্লেখ্য, ভারতের পক্ষ থেকে তাদের ৫শ’র মতো সৈন্য কারগিল যুদ্ধে নিহত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ব্যাপক তৎপরতায় পাকিস্তান সৈন্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়। প্রত্যাহারের সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে বেশ সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, কারগিল যুদ্ধে কৌশলগত ও সামরিক দিক থেকে বড় বিজয় ছিল পাকিস্তানের জন্য। পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে ভারতের কৌশলগত জায়গা দখল করেছিল তা নিয়ে আলোচনা আজও থেমে নেই।

২০১৯ সালের কাশ্মীরের পালওয়ামা জেলায় ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর ওপর এক আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়। এই ঘটনার জেরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বারপ্রাপ্তে এসে দাঁড়ায়। এই হামলার জন্য পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যদিও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তখন জোরালোভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। মোদি সরকারের পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা না করে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে পাকিস্তানে অভ্যন্তরে বালাকোট এলাকায় কথিত সার্জিকাল স্ট্রাইক বা বিমান হামলা চালায়। ভারতের পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয় ওই হামলায় অনেক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে সরেজমিন পরিদর্শনে বিদেশি সাংবাদিকরা দেখতে পান হামলাটি হয়েছে একটি ঝোপঝাড়ের ওপর এবং ভারতীয় দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে তখন মজা করে বলা হয়েছিল ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে একটি গাছ ও একটি কাক নিহত হয়েছে। এরপর পাকিস্তান সেনবাহিনী ঘোষণা দিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে পাল্টা আক্রমণ চালায় ভারতে। ওই হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের একটি ডিপো ধ্বংসের পাশাপাশি ভারতের একটি যুদ্ধবিমান মিগ ২৯ বিমান ভূপাতিত হয়। ওই বিমানের পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে আটকের পর তার চোখ বেঁধে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। ভারতের জন্য এটা ছিল অত্যন্ত লজ্জার। পরবর্তী সময়ে এবারও মার্কিন যুদ্ধরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আটক পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। ধারণা করা হয়েছিল ভারত তার এই দুঃসহ স্মৃতি মনে রেখে পাকিস্তানে হয়তো এ ধরনের হামলার দিকে আর যাবে না। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। হিন্দুত্ববাদী জিগির তুলে মোদি প্রশাসন পেহেলগাম হামলার ঘটনায় কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই একতরফাভাবে পাকিস্তানের ওপর দায় চাপিয়ে মঙ্গলবার রাতে আবারো একই ঘটনা ঘটাল। ভারতের ছোড়া মিসাইল হামলায় পাকিস্তানের অন্তত ২৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বেসামরিক স্থাপনা। তাৎক্ষণিক পাল্টা আক্রমণে রাফায়েলসহ ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। এটি ভারতের মোদি সরকারের জন্য এক লজ্জাজনক পরাজয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত