
সাইদুর রহমান রুমী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানো হয়। এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সংঘটিত হয়। তার দোষ আমি স্বীকার করছি।’
এ সময় তিনি গণহত্যার শিকার প্রত্যেক পরিবার ও আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি কীভাবে সংঘঠিত হয়েছিল, সে কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দেন। এ মামলার রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই আইজিপি।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃসংশতার জন্য তিনি অপরাধবোধ এবং বিবেকের তাড়নায় নিজ থেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে তিনিও রয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার তিনি ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছিল। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন-অর রশীদ হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের কথা সদর দপ্তরে উপস্থিত অতিরিক্ত আইজিপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে জানালে তিনি ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে ওই নির্দেশনা পৌঁছে দেন।
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করার প্রস্তাব দেয় ডিজিএফআই। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজি হই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ডিবি ও ডিজিএফআই তাদের আটক করে।
জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় কোর কমিটির বৈঠক বসত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী।
আমি জানতে পারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীরা সরকারের পক্ষে কাজ করেন। যেসব পুলিশ অফিসার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন, তাদের বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পূর্ণাঙ্গ জবানবন্দি
জবানবন্দিতে দেওয়া রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পুরো বক্তব্য এখানে তুলো ধরা হলো। তিনি বলেন, ‘আমি সাবেক আইজিপি। বর্তমানে অবসরে। এ মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে আছি। আমি ১৯৮৬ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিই। আইজিপি হওয়ার আগে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডির প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমাকে এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক হলে গত ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের কাছে পাঠালে আমি সেদিনই তার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিই। এই সেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। জবানবন্দির প্রতি পৃষ্ঠায় আমার স্বাক্ষর আছে। এগুলো আমার স্বাক্ষর। পরবর্তীকালে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর আমি দোষ স্বীকার করে পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার করে অ্যাপ্রুভার হওয়ার আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করে। আমি আজ পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে সাক্ষ্য দিচ্ছি।’
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি আমার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরো এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক গ্রুপিং ছিল। ওই গ্রুপিং যাতে প্রকাশ না হয় এবং পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে আমাকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়।’
চৌধুরী মামুন বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
৫০ শতাংশ ব্যালট ভরে পুলিশের পদোন্নতি
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এসব অফিসার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ অফিসার ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেন, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।
পুলিশে ছিল দুটি গ্রুপ, ব্যাহত হয় চেইন অব কমান্ড
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক বসত এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলত। যেসব পুলিশ অফিসার ওই সব বৈঠকে অংশ নিতেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির অ্যাডিশনাল কমিশনার হারুন অর রশিদ, এসবির অ্যাডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, অ্যাডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপূর্ব হাসানসহ বেশ কয়েকজন অফিসার ছিলেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে ওই সব পুলিশ অফিসার চেইন অব কমান্ড মানতেন না। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।
প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আরেকটি প্রপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম। তারা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ার
চৌধুরী আল-মামুন বলেন, ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় জানতে পারি—হেডকোয়ার্টার পরিচালিত উত্তরায় র্যাব-১-এর কম্পাউন্ডের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাব ইউনিটের অধীন আরো অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতো, যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপস/অপারেশন) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র্যাব ইন্টেলিজেন্স) পরিচালকরা সমন্বয় করতেন।
র্যাবের দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত বলে শুনেছি। এই নির্দেশনাগুলো তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র্যাব ইন্ট) পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো।
আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাকে জানান, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছেন। আমি যোগদানের পর র্যাব ইন্টেলিজেন্সের ডাইরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র্যাবের এডিজি (অপস) ও র্যাব ইন্ট সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কাছে একাধিকবার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন বলে অবহিত করেন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
আমি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। র্যাব অফিসারদের মধ্যে অ্যাডিশনাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিল। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল, পরে র্যাবের এডিজির (অপস) প্রস্তাবমতে তাকে র্যাব ইন্টেলিজেন্সে পদায়ন করা হয়।
আমি র্যাব ডিজির দায়িত্ব পালনকালে র্যাবের ডাইরেক্টর (ইন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম ও লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এছাড়া এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ ও কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্ব পালনকালে যদিও আমি র্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন ও কাউকে কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোনো তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিইনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না। র্যাবের এসব কার্যক্রমের ফলে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট র্যাবের ওপর এবং আমিসহ সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর স্যাংশন আরোপ করে।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, র্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই প্রধান ও এনএসআই প্রধান উপস্থিত থাকতেন।
কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই এ প্রস্তাব দেয়। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই এবং ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। তাদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে উক্ত রূপ চাপ প্রদান করা হয়।
সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘জিন’ বলে ডাকতেন। কারণ তিনি সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিলেন।
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার
আন্দোলনের একপর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়। হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে উপস্থিত ছিলাম এবং আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় জোয়ারদার উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রলয় জোয়ারদারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালে সে আমার রুম থেকে বের হয়ে ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে এ নির্দেশনা পৌঁছে দেয়। এ নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই এবং ওই দিন থেকেই লেথাল উইপন ব্যবহার শুরু হয়।
সরকারকে উৎসাহিত করে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী ও ব্যবসায়ীরা
নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার অধীন কর্মকর্তাদের লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। লেথাল উইপন ব্যবহারের বিষয়ে অতিউৎসাহী ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে দেশে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন—মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না, তবে কি রাজাকারের সন্তান ও নাতিপুতিরা চাকরি পাবে? এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং সমগ্র দেশে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের ও নানক মন্তব্য করেন যে, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগই যথেষ্ট। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করে আন্দোলনরত অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে আহত ও নিহত করা হয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনী ছাড়াও আন্দোলন দমনে সরকারকে উৎসাহিত করে আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী ও ব্যবসায়ীরা।
৪ আগস্ট গণভবনে যা ঘটে
৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অন্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন—আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানসহ মোট ২৭ জন। আমি নিজেও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে আন্দোলন দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতির রিপোর্ট পেশ করছিল।
ইতোমধ্যে চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। রাতের বেলায় আমাদের আবার গণভবনে ডাকা হয়। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের ডিজি, লে. জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। ডিজিএফআই প্রধান ও এসবিপ্রধান মনিরুল বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। ওই বৈঠকে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। এরপর আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যাই। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের ডিজি, লে. জেনারেল মুজিব, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এসবিপ্রধান মনিরুল, ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোয় ফোর্স মোতায়েন করে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মিটিং শেষে রাত সাড়ে ১২টায় আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে চলে আসি।
৫ আগস্ট সকালে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আমার দপ্তরে যাই। ইতোমধ্যে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী এবং বিভিন্ন পথ দিয়ে স্রোতের মতো ছাত্র-জনতা ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে ১টার দিকে জানতে পারি যে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, তা আমরা জানতাম না। এরপর বিকালে আর্মি হেলিকপ্টার এসে আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রথমে তেজগাঁও বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে এবং সেখান থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে নিয়ে যায়। হেলিকপ্টারে আমার সঙ্গে এসবিপ্রধান মনিরুল, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি আমেনা ছিলেন। পরের শিফটে অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয়, অ্যাডিশনাল আইজিপি লুৎফুল কবিরসহ অন্যদের সেখানে আনা হয়।
৬ আগস্ট আইজিপি হিসেবে আমার নিয়োগ চুক্তিটি বাতিল করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালীন ৩ সেপ্টেম্বর আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলন চলাকালে ২৭ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিএমপি কমিশনার ও আমিসহ আন্দোলনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নারায়ণগঞ্জে যাই। যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করি। সে সময় ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন। ওই ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলেন, গুলি করি একজন মরে, একজন আহত হয়, সে-ই যায়, বাকিরা যায় না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকারের আদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে তাদের আহত ও নিহত করায় আমি পুলিশপ্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করে
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য আমি অপরাধবোধ এবং বিবেকের তাড়নায় অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্রাইব্যুনালে এসে স্বজন হারানোদের কান্না, আহাজারি শুনে, চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেওয়াসংক্রান্ত ডাক্তার এবং ভিক্টিমদের বক্তব্য, ভিডিওতে নৃশংসতাগুলো দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আরো যৌক্তিক মনে হয়েছে। বিশেষ করে হত্যা করার পর লাশগুলো একত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।
আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরিজীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষপর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যার দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেক পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী (সাক্ষী এ পর্যায়ে আবেগপ্রবণ ও অশ্রুসজল হয়ে পড়েন)। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরো হায়াত দান করেন, বাকি জীবনটা কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।
চিফ প্রসিকিউটরের ব্রিফিং
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে তিনি তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তার পূর্বাবর ঘটনাগুলোরও তিনি বর্ণনা করেছেন।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পর্ষদের গুম, খুন, ক্রসফায়ার এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে মারাত্মক দমন-পীড়নের পুরো বিবরণ তুলে ধরেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানো হয়। এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সংঘটিত হয়। তার দোষ আমি স্বীকার করছি।’
এ সময় তিনি গণহত্যার শিকার প্রত্যেক পরিবার ও আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি কীভাবে সংঘঠিত হয়েছিল, সে কথাও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দেন। এ মামলার রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই আইজিপি।
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃসংশতার জন্য তিনি অপরাধবোধ এবং বিবেকের তাড়নায় নিজ থেকে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান। গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আসামি হিসেবে তিনিও রয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলার তিনি ৩৬তম সাক্ষীর জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়েছিল। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন-অর রশীদ হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলন দমনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের কথা সদর দপ্তরে উপস্থিত অতিরিক্ত আইজিপি প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে জানালে তিনি ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে ওই নির্দেশনা পৌঁছে দেন।
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের গ্রেপ্তার করার প্রস্তাব দেয় ডিজিএফআই। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজি হই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ডিবি ও ডিজিএফআই তাদের আটক করে।
জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় কোর কমিটির বৈঠক বসত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী।
আমি জানতে পারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীরা সরকারের পক্ষে কাজ করেন। যেসব পুলিশ অফিসার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন, তাদের বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পূর্ণাঙ্গ জবানবন্দি
জবানবন্দিতে দেওয়া রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পুরো বক্তব্য এখানে তুলো ধরা হলো। তিনি বলেন, ‘আমি সাবেক আইজিপি। বর্তমানে অবসরে। এ মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে আছি। আমি ১৯৮৬ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিই। আইজিপি হওয়ার আগে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডির প্রধান, র্যাবের মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।’
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমাকে এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক হলে গত ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের কাছে পাঠালে আমি সেদিনই তার কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিই। এই সেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। জবানবন্দির প্রতি পৃষ্ঠায় আমার স্বাক্ষর আছে। এগুলো আমার স্বাক্ষর। পরবর্তীকালে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর আমি দোষ স্বীকার করে পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার করে অ্যাপ্রুভার হওয়ার আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন মঞ্জুর করে। আমি আজ পুর্ণাঙ্গ সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে সাক্ষ্য দিচ্ছি।’
সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি আমার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আমাকে প্রথমে দেড় বছর এবং পরে আরো এক বছর আইজিপি হিসেবে এক্সটেনশন দেওয়া হয়। আইজিপি পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক গ্রুপিং ছিল। ওই গ্রুপিং যাতে প্রকাশ না হয় এবং পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে আমাকে এক্সটেনশন দেওয়া হয়।’
চৌধুরী মামুন বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রাজনৈতিক মেরূকরণ হয় এবং গোপালগঞ্জকেন্দ্রিক বলয় তৈরি হয়। পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়। এসব কারণে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষে পুলিশকে কন্ট্রোল করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
৫০ শতাংশ ব্যালট ভরে পুলিশের পদোন্নতি
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলাম। তখন আইজিপি ছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। আমি জানতে পারি, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট ভর্তি করে রাখার পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে মোতাবেক ডিসি, এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এসব অফিসার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তা বাস্তবায়ন করেন। যেসব পুলিশ অফিসার ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেন, তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপিএম, পিপিএম পদক দেওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়।
পুলিশে ছিল দুটি গ্রুপ, ব্যাহত হয় চেইন অব কমান্ড
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব আরো বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু পুলিশ অফিসার প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় প্রায়ই রাতের বেলায় বৈঠক বসত এবং তা গভীর রাত পর্যন্ত চলত। যেসব পুলিশ অফিসার ওই সব বৈঠকে অংশ নিতেন, তাদের মধ্যে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির অ্যাডিশনাল কমিশনার হারুন অর রশিদ, এসবির অ্যাডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, অ্যাডিশনাল এসপি কাফি, ওসি মাজহার, ওসি ফরমান, ওসি অপূর্ব হাসানসহ বেশ কয়েকজন অফিসার ছিলেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারণে ওই সব পুলিশ অফিসার চেইন অব কমান্ড মানতেন না। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন।
প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মূলত দুটি গ্রুপ ছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, আরেকটি প্রপের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম। তারা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।
অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ার
চৌধুরী আল-মামুন বলেন, ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় জানতে পারি—হেডকোয়ার্টার পরিচালিত উত্তরায় র্যাব-১-এর কম্পাউন্ডের ভেতরে টিএফআই সেল (টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন সেল) নামে একটি বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাব ইউনিটের অধীন আরো অনেক বন্দিশালা ছিল। এসব বন্দিশালায় রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের আটক রেখে নির্যাতন করা হতো, যা একটি কালচারে পরিণত হয়েছিল। অপহরণ, গোপন বন্দিশালায় আটক, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার মতো কাজগুলো র্যাবের এডিজি (অপস/অপারেশন) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র্যাব ইন্টেলিজেন্স) পরিচালকরা সমন্বয় করতেন।
র্যাবের দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে আনা, আটক রাখা কিংবা হত্যা করার নির্দেশনাগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসত বলে শুনেছি। এই নির্দেশনাগুলো তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের মাধ্যমে আসত বলে জানতে পারি। এই নির্দেশনাগুলো চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে সরাসরি এডিজি (অপস) ও র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের (র্যাব ইন্ট) পরিচালকদের কাছে পাঠানো হতো।
আমি র্যাবের ডিজি হিসেবে যোগদানের সময় আমার পূর্ববর্তী মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ আমাকে জানান, টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমান বন্দি আছেন। আমি যোগদানের পর র্যাব ইন্টেলিজেন্সের ডাইরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেমও আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। র্যাবের এডিজি (অপস) ও র্যাব ইন্ট সাধারণত সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে নিয়োগ করা হতো। টিএফআই সেলে ব্যারিস্টার আরমানের বন্দি থাকার বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের কাছে একাধিকবার উপস্থাপন করি এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাই। তিনি আমাকে পরে জানাবেন বলে অবহিত করেন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
আমি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে আসার সময় পরবর্তী মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনকে ব্যারিস্টার আরমানের বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি। র্যাব অফিসারদের মধ্যে অ্যাডিশনাল এসপি আলেপ উদ্দিন ও এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী নামে দুজন অফিসারকে আমি চিনতাম যারা বন্দিদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার মতো কাজে বিশেষ পারদর্শী ছিল। আলেপ উদ্দিন প্রথমে নারায়ণগঞ্জে ছিল, পরে র্যাবের এডিজির (অপস) প্রস্তাবমতে তাকে র্যাব ইন্টেলিজেন্সে পদায়ন করা হয়।
আমি র্যাব ডিজির দায়িত্ব পালনকালে র্যাবের ডাইরেক্টর (ইন্ট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম ও লে. কর্নেল মশিউর রহমান। এছাড়া এডিজি (অপস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কর্নেল তোফায়েল, কর্নেল আজাদ ও কর্নেল কামরুল। আমার দায়িত্ব পালনকালে যদিও আমি র্যাব কর্তৃক মানুষকে বিনা বিচারে আটক, নির্যাতন ও কাউকে কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার মতো বিষয়গুলো জানতাম। কিন্তু আমি কোনো তদন্ত করিনি বা এগুলোর ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিইনি। এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আসত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড মানা হতো না। র্যাবের এসব কার্যক্রমের ফলে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট র্যাবের ওপর এবং আমিসহ সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর স্যাংশন আরোপ করে।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করা হয়। এরপর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতি রাতেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির সরকারি বাসায় কোর কমিটির মিটিং হতো। সেখানে আমাদের আন্দোলন দমনসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো। কোর কমিটিতে আমিসহ সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) টিপু সুলতান, অতিরিক্ত সচিব রেজা মোস্তফা, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ, র্যাব ডিজি ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিজি বিজিবি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনটিএমসির প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিজিএফআই প্রধান ও এনএসআই প্রধান উপস্থিত থাকতেন।
কোর কমিটির একটি বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটক করার সিদ্ধান্ত হয়। ডিজিএফআই এ প্রস্তাব দেয়। আমি বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমি রাজি হই। ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিজিএফআই এবং ডিবি তাদের আটক করে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসে। তাদের ডিবি হেফাজতে এনে আন্দোলনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাদের আত্মীয়স্বজনকেও ডিবিতে নিয়ে এসে উক্ত রূপ চাপ প্রদান করা হয়।
সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে টেলিভিশনে বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হারুনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘জিন’ বলে ডাকতেন। কারণ তিনি সরকারের নির্দেশনা পালনে পারদর্শী ছিলেন।
আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার
আন্দোলনের একপর্যায়ে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নজরদারি, তাদের অবস্থান নির্ণয় ও গুলি করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়। হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন-অর রশিদ। পরবর্তী সময়ে আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করে এবং আন্দোলনপ্রবণ এলাকাগুলো ভাগ করে ব্লকরেইড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাকে ফোন করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনে সরাসরি লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে উপস্থিত ছিলাম এবং আমার সামনে অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় জোয়ারদার উপস্থিত ছিলেন। আমি প্রলয় জোয়ারদারকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানালে সে আমার রুম থেকে বের হয়ে ডিএমপি কমিশনারসহ সারা দেশে এ নির্দেশনা পৌঁছে দেয়। এ নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই এবং ওই দিন থেকেই লেথাল উইপন ব্যবহার শুরু হয়।
সরকারকে উৎসাহিত করে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী ও ব্যবসায়ীরা
নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান তার অধীন কর্মকর্তাদের লেথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। লেথাল উইপন ব্যবহারের বিষয়ে অতিউৎসাহী ছিলেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যে কোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীকে মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচিত করতেন।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে দেশে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন—মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপুতিরা চাকরি পাবে না, তবে কি রাজাকারের সন্তান ও নাতিপুতিরা চাকরি পাবে? এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং সমগ্র দেশে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের ও নানক মন্তব্য করেন যে, আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগ ও যুবলীগই যথেষ্ট। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ড্রোন, হেলিকপ্টার ও লেথাল উইপন ব্যবহার করে আন্দোলনরত অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে আহত ও নিহত করা হয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনী ছাড়াও আন্দোলন দমনে সরকারকে উৎসাহিত করে আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী ও ব্যবসায়ীরা।
৪ আগস্ট গণভবনে যা ঘটে
৪ আগস্ট বেলা ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা সমন্বয় কমিটির একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অন্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন—আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তিন বাহিনীর প্রধান, এসবির প্রধান, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এনএসআইয়ের প্রধানসহ মোট ২৭ জন। আমি নিজেও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে আন্দোলন দমন এবং নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পরিস্থিতির রিপোর্ট পেশ করছিল।
ইতোমধ্যে চারদিকে পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। রাতের বেলায় আমাদের আবার গণভবনে ডাকা হয়। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের ডিজি, লে. জেনারেল মুজিব উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। ডিজিএফআই প্রধান ও এসবিপ্রধান মনিরুল বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। ওই বৈঠকে ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে। এরপর আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুমে যাই। সেখানে আমি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, র্যাবের ডিজি, লে. জেনারেল মুজিব, ডিজিএফআইয়ের প্রধান, এসবিপ্রধান মনিরুল, ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোয় ফোর্স মোতায়েন করে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মিটিং শেষে রাত সাড়ে ১২টায় আমরা আর্মির অপারেশন কন্ট্রোল রুম থেকে চলে আসি।
৫ আগস্ট সকালে আমি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আমার দপ্তরে যাই। ইতোমধ্যে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী এবং বিভিন্ন পথ দিয়ে স্রোতের মতো ছাত্র-জনতা ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে। দুপুর ১২টা থেকে ১টার দিকে জানতে পারি যে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, তা আমরা জানতাম না। এরপর বিকালে আর্মি হেলিকপ্টার এসে আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রথমে তেজগাঁও বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে এবং সেখান থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে নিয়ে যায়। হেলিকপ্টারে আমার সঙ্গে এসবিপ্রধান মনিরুল, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি আমেনা ছিলেন। পরের শিফটে অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয়, অ্যাডিশনাল আইজিপি লুৎফুল কবিরসহ অন্যদের সেখানে আনা হয়।
৬ আগস্ট আইজিপি হিসেবে আমার নিয়োগ চুক্তিটি বাতিল করা হয়। ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালীন ৩ সেপ্টেম্বর আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলন চলাকালে ২৭ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিএমপি কমিশনার ও আমিসহ আন্দোলনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নারায়ণগঞ্জে যাই। যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আমরা কিছুক্ষণ অবস্থান করি। সে সময় ওয়ারী জোনের ডিসি ইকবাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইলে একটি ভিডিও প্রদর্শন করেন। ওই ভিডিও দেখিয়ে ইকবাল বলেন, গুলি করি একজন মরে, একজন আহত হয়, সে-ই যায়, বাকিরা যায় না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকারের আদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে তাদের আহত ও নিহত করায় আমি পুলিশপ্রধান হিসেবে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করে
জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য আমি অপরাধবোধ এবং বিবেকের তাড়নায় অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ট্রাইব্যুনালে এসে স্বজন হারানোদের কান্না, আহাজারি শুনে, চিকিৎসা প্রদানে বাধা দেওয়াসংক্রান্ত ডাক্তার এবং ভিক্টিমদের বক্তব্য, ভিডিওতে নৃশংসতাগুলো দেখে অ্যাপ্রুভার হওয়ার সিদ্ধান্ত আরো যৌক্তিক মনে হয়েছে। বিশেষ করে হত্যা করার পর লাশগুলো একত্র করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার বীভৎসতা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।
আমি সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সব সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরিজীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি সব সময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষপর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সংঘটিত হয়েছে, যার দায় আমি স্বীকার করছি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেক পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী (সাক্ষী এ পর্যায়ে আবেগপ্রবণ ও অশ্রুসজল হয়ে পড়েন)। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন। আমার এই সত্য ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরো হায়াত দান করেন, বাকি জীবনটা কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।
চিফ প্রসিকিউটরের ব্রিফিং
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে তিনি তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল এবং তার পূর্বাবর ঘটনাগুলোরও তিনি বর্ণনা করেছেন।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পর্ষদের গুম, খুন, ক্রসফায়ার এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে মারাত্মক দমন-পীড়নের পুরো বিবরণ তুলে ধরেন।

নাজমুল হুদা খান এ ব্যাপারে জানান, ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লাসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী এ চুরির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, আমি প্রায়ই অজ্ঞাত ফোনে প্রাণনাশের হুমকি পাই। আমি গরিব মানুষ, এই চাকরিতেই সংসার চলে। তাই ভয়ে চুপ থাকি।
২৭ মিনিট আগে
বাংলাদেশের শিপিং খাতে এক অদৃশ্য নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে, যা ব্যবসার আড়ালে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড। সংস্থাটি ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ শিপিং কোম্পানি জেডআইএম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমি
৯ ঘণ্টা আগে
দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস সড়ক ও সেতুর টোল এক সময় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের অবৈধ আয়ের লোভনীয় খাত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আধুনিক টোল ব্যবস্থাপনার নামে তারা সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লুটে নেন দীর্ঘ সময় ধরে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে তাদের সেই লুটপাট অব্যাহত আছে।
১ দিন আগে
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কর্মরত থাকা অবস্থায় এতসংখ্যক সেনা অফিসারকে সিভিল আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হলো।
১ দিন আগে