জুলাই বিপ্লবে ফেনীতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন সাইদুল ইসলাম শাহী। সন্ত্রাসীদের তিনটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় শহীদ সাইদুলের শরীর। অন্য একটি গুলি এসে লাগে কানের নিচে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল দিনগুলোতেও পেশাগত দায়িত্ব জারি রাখেন সাংবাদিক হাসান মেহেদী। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেখানে হঠাৎ পুলিশের ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার শরীর।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণের পাশাপাশি হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। প্রাণহানি ঘটেছে বহু ছাত্র-জনতার।
জুলাই বিপ্লব
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের যুবক জুয়েল রানা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন দিশাহারা। শোকে মুহ্যমান অসহায় বাবা-মা ও স্ত্রী।
অভাবের সংসার। তাই নাটোর থেকে ঢাকায় এসে জামায়াতকর্মী রমজান আলী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নেন। এরপর করেন বিয়ে। কিছুদিন পর ঘরে আসে একটি কন্যা সন্তান। তখন খরচ বেড়ে যায়।
জুলাই বিপ্লব
পরিবারের হাল ধরতে ঢাকায় চাকরি নিয়েছিলেন ইসমামুল হক। তার আয় দিয়ে ভালোই চলছিল সবকিছু। কিছু টাকা জমিয়ে চিন্তা করেছিলেন বিদেশে যাবেন। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখল না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলি ওলটপালট করে দিল সব।
জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৮ জুলাই পায়ে ও বুকে গুলি লাগে মুত্তাকিন বিল্লাহর। তবু তিনি ঘরে বসে থাকেননি। মাকে চিন্তা না করতে বলে তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফের আন্দোলনে যান পরদিনও।
উত্তাল জুলাই বিপ্লবে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হোসেন। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে শহীদ হন গত বছরের ১৯ জুলাই। তবে লাশের কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি। ওই ঘটনায় মামলা হলেও বিচার হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবারের।
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের হকতুল্লাহ গ্রামের দুলাল সরদার। একটি রেন্ট-এ কার কোম্পানির গাড়ি চালাতেন তিনি। তিনি চাকরির বেতন দিয়ে নিজের এবং বাবা-মার খরচের জোগানও দিতেন। ১৮ জুলাই যখন আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত বছরের জুলাই মাস অগ্নিগর্ভ ছিল পুরো দেশ। শেষের কয়েকদিন খবরের শিরোনামই হতো নিহতের সংখ্যা নিয়ে। হতাহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে, যাদের পৃথিবী চেনার আগেই দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় করে দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন শাহরিয়ার সোহান। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে আহত হন তিনি। এর ৩৯ দিন পর ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে শহীদ হন। সোহানের চলে যাওয়ার পর দিশাহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
সচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। করতেন রাজধানীর উত্তরায় ফুটপাতে পোশাকের ব্যবসা। নিজের উপার্জনের টাকায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এক গুলিতেই তার সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
জুলাই বিপ্লব
মাথায় লাল-সবুজের পতাকা বাঁধা ১৬ বছরের কিশোর রিকশার পাদানিতে ঝুলছে। রিকশাচালক এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত শহীদ গোলাম নাফিজের এ দৃশ্যটি কাঁদিয়েছে গোটা জাতিকে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গত বছরের ১৮ জুলাই রাজপথে নেমে পায়ে কয়েকটি রাবার বুলেট লাগে তার।
ষাটোর্ধ্ব জামায়াত নেতা মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত গত বছরের ৫ আগস্ট লাখো ছাত্র-জনতার সঙ্গে অন্দোলনে যুক্ত হয়ে হেঁটে যান গাজীপুরের টঙ্গী থেকে রাজধানীর মহাখালী। এরই মধ্যে শুনতে পান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়েছে। কল করে পরিবার ও নেতাকর্মীদের কাছে বিজয়ের বার্তা দিয়ে শুকরিয়ার নামাজ আদায় করতে বলেন।
কাউসার আহমাদের বয়স ২০। শরীয়তপুরের একটি মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি মুয়াজ্জিনের চাকরি করতেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট ‘লংমার্চ টু ঢাকা’য় অংশ নিতে ফজরের নামাজ পড়ে কাউকে না জানিয়ে হেঁটে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদের শাহাদতবরণ পুরো দেশকে জাগিয়ে তুলেছিল। রংপুরে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসেন লাখ লাখ তরুণ-যুবক।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার যুবক জুয়েল রানা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চাকরি করতেন একটি গার্মেন্টে। তার দেওয়া টাকায় ভালোই চলছিল সংসার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হঠাৎ উলটপালট হয়ে গেল সব।