সংসারের চাকায় গতি আনতে বিদেশ গিয়েছিলেন মাষহারুল ইসলাম মাসরুর। সেখানে মন টেকাতে না পেরে দুই বছরের মাথায় ফেরেন গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটোয়ারী হাটের বোয়ালীয়া এলাকায়।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন সরওয়ার জাহান মাসুদ। সেখানেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন।
জুলাই বিপ্লব
জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় সৈনিক অমিত হাসান। গত বছরের ৫ আগস্ট এক দফার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এই জুলাই-যোদ্ধা। তার শরীরে এখনো রয়েছে ৩৮টি স্প্লিন্টার, যার মধ্যে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট সকালের নাশতা খেতে বের হন রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলের কর্মী সাগর হাওলাদার। পরে তিনি ছাত্র-জনতার মিছিলে যুক্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি মিছিলের সামনের দিকে চলে যান।
জীবিকার উদ্দেশ্যে প্রতিদিনের মতো অটোরিকশা (টমটম) নিয়ে সড়কে বের হন রাব্বি হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্টের সেই বিকালে হঠাৎ শুনতে পায় স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছে।
বিবৃতিতে শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জুলাই বিপ্লবের ফলে জন্ম নেয়া এই অন্তর্বর্তী সরকারের ফরজ কাজ জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার করা। তাই তারা জোর দাবি জানান, ‘বিচার আমরা এই সরকারের আমলেই চাই।’ বর্তমান সরকারের শহিদদের রক্তের ঋণ শোধ করার ন্যূনতম দায়বোধ থাকলে কাল বিলম্ব না করে এখনি জুলাই-আগস্ট
জুলাই বিপ্লবের উত্তাল সময়ে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন জাকির হোসেন। ২১ জুলাই বিকেলে কাজে যাওয়ার সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন তিনি।
আওয়ামী ক্যাডারদের ছোড়া ৩টি গুলি লাগে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শহীদ মাহবুবুল হাসান মাসুমের মাথায়। একটি সামনের দিকে, বাকি দুটি পেছনে। পরবর্তী সময়ে ৭ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয় ১৭ বছর বয়সি জুলকার নাইন। সে ছিল ঘরের বড় ছেলে। তাকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা হালিমা খাতুন। এখনো খুঁজে ফিরছেন সন্তানকে। অন্যদিকে বাবা আব্দুল হাই শোকে হয়ে পড়েছেন নির্বাক।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় থাকতেন বিপ্লব শেখ। তিনি স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। গত বছরের উত্তাল জুলাইয়ে সড়কে বহু লাশ ও তাজা রক্ত দেখেন তিনি। দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে গিয়ে জনগণের অকাতরে প্রাণ দেওয়ার ঘটনা তাকে বিপ্লবী করে তোলে
জুলাই বিপ্লব
রকি জুলাই বিপ্লবে সব সময় মিছিলের সম্মুখভাগে থাকতেন। গত বছরের ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হন। দুচোখসহ ৬৫টি ছররা গুলির আঘাতে জর্জরিত সারা শরীর। অপারেশন করেও ডান চোখের গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। ডান চোখ তাই নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখের আলোও নিভু নিভু করছে। শরীরেও গুলি আছে এখনো।
গণঅভ্যুত্থানের সময় সিলেটের গোলাপগঞ্জে আন্দোলনে নেমে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন জকিগঞ্জের কামিল আহমদ। পেশায় তিনি গাড়ি চালক। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে কাজকর্ম করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। গুলির ক্ষত আর যন্ত্রণা নিয়ে ওই যুবক বিছানায় পড়ে থাকলেও কেউ খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গাজীপুরের রাজপথও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। গত বছরের ৪ আগস্ট ছিল আরো বিভীষিকাময়। ছাত্র-জনতার মিছিল দমাতে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। রাস্তাজুড়ে ছিল লাশের সারি।
জারিন রশ্মির বয়স মাত্র ১১, মেজো ছেলে আফনান আল জামানের বয়স আট বছর ও ছোট্ট গালিব আবরাবের বয়স মাত্র ১৩ মাস। এতটুকু বয়সেই বাবাহারা এই তিন শিশু। রোজ রাতে বাবার সঙ্গে ঘুমানোর বায়না ধরে জারিন ও গালিব।
আতর, তসবিহ ও টুপি বিক্রি করতেন আরিফুল ইসলাম রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায়। তার আয়েই চলত আট সদস্যের পরিবার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে গত ১৮ জুলাই ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে নামেন তিনি।
শিক্ষার্থী সিহানের ছিল আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরিবারের অসচ্ছলতা দূর করা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় দশম শ্রেণি পড়ুয়া এই কিশোর।
সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার তিন মাস আগেই ঘাতকের গুলিতে শহীদ হন মাদারীপুরের মনিরুজ্জামান মনির। এর পরের গল্পটা আরো করুণ। স্বামীর মৃত্যুর পর অপবাদ দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয় সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ছামিরা ইসলামকে।