কলকাঠি নাড়ছেন পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা

জুলাই যোদ্ধাকে বাদী সাজিয়ে বানোয়াট মামলা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭

জুলাই আন্দোলনে গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো এক যোদ্ধাকে বাদী দেখিয়ে অভিনব কায়দায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করার অংশ হিসেবে আহত যোদ্ধা সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ এমদাদকে বাদী হিসেবে উল্লেখ করে রহস্যজনক মামলা করেছে সংঘবদ্ধ চক্র। চক্রান্তে যুক্ত হয়েছেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপির) খুলশী থানা সদ্য বিদায়ী ওসি আবতাফ হোসেন। যিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সিএমপির এবাধিক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে সিএমপির ডিবি উত্তর জোনের পরিদর্শক পদে কর্মরত। প্রকৃত মামলাকে বিতর্কিত করা এবং হযরানির অসৎ উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী একাধিক শিল্পগোষ্ঠী পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সরকারি তালিকায় থাকা সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ এমদাদ।

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন এই জুলাই যোদ্ধা। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারান এমদাদ। গুরুতর আহত জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে প্রকাশিত তালিকায়— এ ক্যাটাগরিতে নাম রয়েছে ২০২ নম্বর ক্রমে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনে, চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে পুলিশের গুলিতে চোখ, মাথা ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়ে, আমি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসা এবং সরকারিভাবে গুরুতর আহত জুলাইযোদ্ধা হিসেবে আমার নাম তালিকাভুক্ত হয়। আহত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম শহরের সিএমপির খুলশী থানায় চলতি বছরের ১৭ জুন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ একটি মামলা করি। মামলা নং-১৩। যাতে ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট চট্টগ্রামে আমার গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা, আন্দোলনের বিস্তারিত, অভিযুক্তদের নাম-ঠিকানা সবই সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছি। মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ১৬৭ জনকে।

এছাড়া আন্দোলন দমনে অর্থ ও মদদদাতা হিসেবে এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুল আলম, হাসিনাকে বারবার মা ডাকা পিএইচপি গ্রুপ, জিপিএইচ গ্রুপসহ তথাকথিত শিল্পগোষ্ঠী সহ হামলার সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলার সহায়ক নথিপত্র হিসেবে আমি, চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি, হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন, মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়েছি। আমি সিএমপির খুলশী থানায় মামলা করার পর পুলিশ মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড, সিডিআরও বের করেছে। যেখানে উঠে এসেছে, আমি চট্টগ্রামেই ছিলাম।

এমএ হাশেম রাজু নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে পরিচয় দেন 'মানবাধিকারকর্মী' হিসেবে এবং দাবি করেন আমি সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ এমদাদের 'পক্ষ হয়ে' এমএ হাশেম রাজু মামলা করেছেন। মূলত বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা বানোয়াট এবং জুলাই যোদ্ধাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার চক্রান্ত। আমাকে ঘিরে নানা চক্রান্ত চলছে। এই রাজু সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য।

তিনি জানান, আমি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় মামলার করার তিন মাস আগে, ঢাকা শাহবাগ আমলি আদালতে এমএ হাশেম রাজু নামের এক ব্যক্তি একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তার নাম বাদী হিসেবে উল্রেখ করা হয়েছে। অথচ এ মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। প্রতারক রাজু নিজেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন নামে একটি সংগঠনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। তার দায়ের করা মামলার আসামি সংখ্যা ২০১।

দৃষ্টি শক্তি হারানো এমদাদ আরও বলেন, এমএ হাশেম রাজুর এই প্রতারণার পেছনে ভয়াবহ গল্প রয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এমএ হাশেম রাজু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিজেকে মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দিয়ে আমার চোখের চিকিৎসায় সহায়তা ও বিদেশে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহারের কথা বলে আমার কাছ থেকে বেশ কিছু সাদা কাগজ ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন রাজু। সেসব স্বাক্ষর ব্যবহার করে নিজেই বাদি সেজে ঢাকার আদালতে মামলা করেন রাজু। এমনকি মামলায় আমার যে ঠিকানাটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও সঠিক নয়।

তিনি বলেন, আমাকে কোনো ধরনের উন্নত চিকিৎসা বা সরকারি পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেননি প্রতারক রাজু। বরং আমাকে না জানিয়ে রাজু আমার পক্ষ হয়ে একটি মামলা করেছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাজু আমার নাম ভাঙিয়ে মামলা করে মামলাবাণিজ্যে চালাচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসা সহাযতা ও ক্ষতিপূরণ এনে দেবেন বলে, কিছু কাগজে সই দিতে হবে। তখন ভাবিইনি, এই সাদা স্ট্যাম্পে সই দিয়ে কী বিপদ ডেকে আনছি।

তিনি জানান, খুলশি থানায় মামলা করার পর থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আমাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমার মামলার জুলাই আন্দোলনে অর্থ যোগানদাতার আসামির তালিকায় থাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধারদের মালিকানাধীন কয়েকটি গণমাধ্যম আমাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এসব গণমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দাবি করে, জুলাইযোদ্ধা এমদাদ একইদিন দুই শহরে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দেখিয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছেন। ঢাকার মামলা ও গণমাধ্যমে আমার নামে প্রকাশিত বিভ্রান্তিমূলক প্রতিবেদন উদ্দেশ্যমূলকভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা। আমার আত্মত্যাগ এবং আন্দোলনে ভূমিকা হেয় করার জন্যই প্রতারক রাজু এই মামলার নাটক সাজিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত