সর্বাত্মক অসহযোগ ও এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা

আবু সুফিয়ান
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩৫
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩৬

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত বছরের ৩ আগস্ট বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। একই দিনে অন্তত ৩৩টি জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা।

কর্মসূচির মূল দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও সরকারের পতন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘এক দফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, যেখানে বলা হয়, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, যেখানে আর কখনো স্বৈরতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।’

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ৩ আগস্ট থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে কর বা খাজনা না দেওয়া, অফিসে না যাওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, ব্যাংক লেনদেন সীমিত রাখা এবং রেমিট্যান্স বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশপাশের সড়কগুলোয় মানুষের ঢল নামে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে স্লোগানে মুখরিত করেন পুরো এলাকা। তাদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল—‘পদত্যাগ পদত্যাগ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’। সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগ, টিএসসি, মিরপুর, বনশ্রীসহ অন্যান্য এলাকায়।

মিছিলগুলো অধিকাংশ এলাকায় শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে শাহবাগ থানার সামনে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে উত্তেজনা দেখা দেয়। গাজীপুর ও চট্টগ্রামে সহিংসতায় দু’জন শহীদ হন। কুমিল্লায় ছাত্রদের ওপর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হন। সাত জেলায় আহত হন কয়েকশ’ মানুষ।

আন্দোলনকারীদের গণভবনে আমন্ত্রণ

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের প্রতি আবার আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। আমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’

তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। রংপুরে নিহত ছাত্র আবু সাঈদের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। যারা নির্দোষ তাদের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

২ আগস্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ কর্মসূচি রক্তক্ষয়ী রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। চট্টগ্রামে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে মো. শহীদ (৩৬) নামে এক ব্যক্তি শহীদ হন। গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর আলম মারা যান। কুমিল্লায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হন, তাদের মধ্যে একজনের চোখে গুরুতর আঘাত লাগে।

ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে ছয়জন আহত হন, বগুড়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। সিলেট, টাঙ্গাইল ও নওগাঁয় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক আহত হয়।

রংপুরে ছাত্র নিহতের ঘটনায় দুই পুলিশ বরখাস্ত

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ছিল জনতার সমাবেশে উত্তাল। সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে শুরু হয়ে বিকেলেই এটি বিশাল গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। হাজারো মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে ‘আমরা সবাই জনতা’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে’ স্লোগানে মুখরিত করে চত্বর। শিক্ষার্থী থেকে অভিভাবক, বিভিন্ন পেশার মানুষ একযোগে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

একই দিনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের নিহতের ঘটনায় দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্তে তাদের অপেশাদারি আচরণ প্রমাণিত হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত