জুলাই বিপ্লবে ঢাকার রণক্ষেত্র-২

ছাত্র-জনতার দখলে ছিল মিরপুর

আল-আমিন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ০৬

‘মিরপুর গোলচত্বরে যখন অনেক ছাত্র-কিশোরের লাশ পড়ে থাকতে দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারিনি। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে রাস্তায় নেমে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হই।’ আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন মনিপুর স্কুলের পাশের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সোহরাব হোসেন। গত বছর জুলাই আন্দোলনের সময় মিরপুরে স্বৈরাচার হাসিনা ও তার পেটোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ছাত্র-জনতা।

প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল মিরপুর গোলচত্বর থেকে পল্লবী, রূপনগর, দারুস সালাম ও কাফরুল এলাকায়। বিশেষ করে মিরপুর গোলচত্বর এলাকা ছিল ছাত্র-জনতার দখলে। ১৪ জুলাইয়ের পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন ছাত্র-জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের সংঘর্ষ হতো।

বিজ্ঞাপন

ওই এলাকার বাসিন্দারা এখনো কল্পনায় শুনতে পান মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের শব্দ। চোখ বুঝলেই দেখতে পান রক্ত ও লাশের ছবি। শুনতে পান স্বজনদের আহাজারি ও কান্না। যেন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র পার করে এসেছে তারা।

আন্দোলনের সময় মিরপুরে গর্জে উঠেছিল ছাত্র-জনতা। স্লোগানে স্লোগানে কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বৈরাচারের ভিত। শুধু সোহরাব হোসেন নয় ওই এলাকার সবাই এখনো সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারেননি। পুলিশের গুলি ও বুলেটের কাছে ছাত্র-জনতার মাথা নত না করেনি। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মিরপুর হয়ে উঠেছিল এক প্রতিরোধের নাম।

ছাত্র-জনতাকে দেখে গৃহিণীরা রাজপথে সহযোগিতা করেছিলেন খাবার দিয়ে। এ সময় ছাত্র-জনতার ওপর অস্ত্র হাতে হামলা চালায় ইলিয়াস মোল্লার সন্ত্রাসী বাহিনী। ইলিয়াসের বাহিনীকে সর্বত্র সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় কাউন্সিলরা। তারা পুলিশের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়ছিল। ওই এলাকার পোশাকশ্রমিকরাও রাস্তায় নেমেছিলেন ছাত্র-জনতাকে সমর্থন করে। গুলির প্রতিবাদে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিক্ষোভকারীদের দমনে মোহাম্মদপুরের পর র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয় মিরপুর এলাকায়। মিরপুরের আকাশে তারা ১৮ জুলাইয়ের পর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে দেখেন। র‌্যাবের এই হেলিকপ্টার গুলি মূলত ছাত্র-জনতাকে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা ভয় না করে তারা সড়কে অবস্থান নেন। সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ছাত্র-জনতার সাহস আর প্রত্যয়ের ইতিহাসও গাঁথা আছে মিরপুরের সড়কে সড়কে।

এক বছর হয়ে আসলেও সেই দিনগুলো এখনো মিরপুরের মানুষের চোখে তাজা স্মৃতি। এই প্রতিরোধে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়েছে অনেক পরিবার। ছররা গুলিতে অনেকেই অন্ধ হয়ে গেছেন। অনেকে হাত ও পা হারিয়েছেন। এখনো অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

মনিপুর স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সোহান জানান, জুলাই আন্দোলনে আমাদের ভাইয়েরা যখন রক্তাক্ত হয়েছিল তখন কেউ বসে থাকতে পারেনি। আমাদের অনেক সহপাঠী ক্লাস থেকে যোগ দিয়েছিল আন্দোলনে। যুবলীগের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করেছিল।

মনিপুরের প্রাইভেট স্কুল তরী একাডেমির শিক্ষক আব্দুল ওহাব জানান, জুলাইয়ের অধ্যায় একটি রক্তাক্ত অধ্যায়। কত রক্তে মিরপুরের সড়ক লাল হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। তিনি দাবি করেন, যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর গিয়ে দিয়ে দেখা যায়, ওই সড়কের বিভিন্ন দেয়ালে রয়েছে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি। মেট্রোস্টেশনের পিলারে রয়েছে জুলাই বিপ্লবের প্রতিচ্ছবি। ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা এসব চিত্র কর্ম করেছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ বক্সে চিত্রাঙ্কন করেছে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, আগামী ৫ আগস্ট মিরপুরের বিভিন্ন স্কুলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত