সচিবালয়ে আগুন: সন্দেহভাজনকে খুঁজছে গোয়েন্দারা

ওয়াসিম সিদ্দিকী
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪২

সচিবালয়ে আগুন লাগার আগে রাত ১টায় ৭ নম্বরে ভবনের ভেতর থেকে যে লোক বেরিয়ে যায় তাকেই সন্দেহভাজন মনে করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে লোকটিকে চিহ্নিত করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল রোববার আগুনের যাবতীয় আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। আজ সোমবার কমিটি তদন্ত কাজের প্রতিবেদন জমা দেবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঘটনাস্থল ৭ নম্বর ভবন থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ হওয়ায় আজ থেকে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের পরিবর্তে সাংবাদিকদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে পাস ইস্যু করা হবে। আলাতম সংগ্রহ, তদন্ত কার্যক্রম ও সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিয়ে ব্রিফিং করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

তিন দিন ধরে আলামত সংগ্রহ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, গত বুধবার গভীর রাতে লাগা আগুনে ৭ নম্বর ভবনটি পুড়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট। টানা তিন দিন আলামত সংগ্রহের পর গতকাল বিকাল ৪টায় তাদের কার্যক্রম শেষ করে। তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার বিষয়ে ওই কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি তিন দিন ধরে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আজ এ কমিটির প্রতিবেদন পেশ করার কথা রয়েছে।

তদন্তের স্বার্থে কাউকে অ্যালাউ করিনি

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, সেটির প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন রোববার। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাউকে অ্যালাউ করিনি। এ কারণে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেননি। সোমবার থেকে অস্থায়ী পাস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজ দপ্তরে এক সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রোববার বিকাল ৪টায় সিআইডির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। এখন আমরা তদন্ত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।

এদিকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের তত্ত্বাবধানে ক্রাইম সিন ইউনিটের আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরের আগে আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ করে সিআইডি। পুড়ে যাওয়া ৭ নম্বর ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের প্রতিটি স্থান থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সচিবালয়ের চারপাশের সিসিটিভির ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার ও শনিবার দিনভর আলামত সংগ্রহ করে সিআইডি।

প্রয়োজনে বিদেশি এক্সপার্টদের সাহায্য

জানা গেছে, সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের তিনটি টিমের সংগ্রহ করা আলামতের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির কাছে গত রাতে প্রাথমিকভাবে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। কয়েকটি আলামতের রিপোর্ট পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। সেগুলো হাতে পাওয়ার পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঘটনার দিন রাত ১টায় পুড়ে যাওয়া ভবনের পেছনের দিক দিয়ে একজন বের হচ্ছেন। ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সব ধরনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে বিদেশি এক্সপার্টদের সাহায্যও নেওয়া হতে পারে বলে উচ্চপর্যায়ের সূত্র আভাস দিয়েছে। একাধিক জায়গা থেকে শর্টসার্কিট কীভাবে হলো বিষয়টিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি আজ সোমবার সরকারপ্রধানের কাছে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তদন্ত কমিটি ঘটনার নির্ভুল তদন্তের স্বার্থে কিছু আলামত বিদেশে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠাবেন বলেও জানান তিনি। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে স্থাপিত অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান আজাদ মজুমদার।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত