
বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে

কৌশল পাল্টে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বিতর্কিত ও উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকন। পূজা উদযাপন পরিষদ ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের মতো প্রধান ধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি রামসেনা, শিবসেনার মতো নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দখল করে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এ কাজে সহযোগিতা করছে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা, যাদের অনেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন ইসকনের গোপন বৈঠকে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ড অংশ এখন এ সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত বৈঠক, যেখানে দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত ইসকন নেতারা অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এসব বৈঠকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে দেশজুড়ে অন্তত ১৩টি সংগঠনের নামে এক হাজারেরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসকনের কর্মীরা গেরুয়া পোশাক ত্যাগ করে সাধারণ ভক্তের বেশে অংশ নিচ্ছেন উৎসব-আয়োজনে, যাতে স্থানীয়ভাবে সন্দেহের মধ্যে পড়তে না হয়।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কোনো সময় যে কোনো ইস্যুতে সংখ্যালঘু ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে দেশে ফের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার মতো শক্ত অবস্থান ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে তাদের। এই অপচেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।
গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে ইসকন সদস্যরা এসব সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের পাশাপাশি ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের নামে উগ্রবাদী এজেন্ডা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পটভূমি হতে পারে।
একই সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ফেব্রুয়ারির শিব চতুর্দশী মেলায় ইসকনের প্রথম এ নতুন কৌশল ধরা পড়ে। রামসেনাসহ তিনটি সংগঠনের ব্যানারে একই ধরনের টি-শার্ট পরা শতাধিক তরুণের আচরণে ইসকনের ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ করেন গোয়েন্দারা। এরই মাঝে জন্মাষ্টমীর র্যালিতে হঠাৎ করে চিন্ময়ের মুক্তি চাই লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করে রাম সেনার সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে কয়েকজনকে আটক করা হলেও স্থানীয় ইসকন নেতাদের প্রভাবে তারা মুক্তি পেয়ে যায়।
সূত্র জানায়, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর যে কটি সংগঠন ও সংস্থার কাঁধে ভর করে ফেরার অপচেষ্টা করে ফ্যাসিবাদী শক্তি, তার অন্যতম ইসকন। এক মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬টি মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি, যেখানে অংশ নেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসব সমাবেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বায়বীয় অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে ইসকনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ঋষিকেশ গৌরাঙ্গ দাশের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। পরবর্তী সময়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নগুলো লিখে পাঠানোর পরও মেলেনি জবাব।
জানা গেছে, অবাস্তব কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে সরকারকে বেকায়দায়ও ফেলে ইসকনের তখনকার নেতা চন্দন ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। সনাতনী জাগরণী জোট নামের তথাকথিত একটি সংগঠনের ব্যানারে ওইসব কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও এর নেপথ্যে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করে ইসকন। ভারতীয় মিডিয়ায় ইসকনের সে শো-ডাউনগুলো ফলাও করে প্রকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে হাসিনার পতনকে মৌলবাদের উত্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
তবে ইসকন নামধারী গেরুয়া সন্ত্রাসীরা নিজেদের মুখোশ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা প্রতিস্থাপন করায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয় চিন্ময় দাশের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের ওপর চড়াও হয় ইসকনের সন্ত্রাসীরা। পুলিশ প্রতিরোধ করতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করে ইসকনের সন্ত্রাসীরা। এতে তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়নি, তারপরও সামাজিক প্রতিরোধে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে তারা।
এ অবস্থায় ইসকন সরাসরি কার্যক্রম না চালিয়ে নিজেদের সদস্যদের বিভিন্ন নামসর্বস্ব সংগঠনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রামসেনা, হিন্দুস্তান পরিবার, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, হিন্দু ছাত্র পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, বিশ্ব সনাতন মোর্চা, সনাতনী জাগরণ জোট ইত্যাদি। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা, যাদের অনেকেই আবার ইসকনের ঘনিষ্ঠ বা প্রত্যক্ষ সদস্য।
পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছেন প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের চিন্ময়পন্থি নেতারা। এদের নেতৃত্বে রয়েছেনÑ উজ্জ্বল মল্লিক, জুয়েল আইস, অজয় দত্ত, রুবেল দেব, অরূপ দাস রুবেল, পিংকু ভট্টাচার্য, পলাশ কুমার সেন, শুভ দাশগুপ্ত, কাঞ্চন নাথ, সেন পলাশ, তূর্জ রুদ্রসহ আরো কয়েকজন। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমন্বয় করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর, জহরলাল হাজারী, রুমকি সেনগুপ্ত ও নীলু নাগ। আওয়ামী লীগের পলাতক শিক্ষামন্ত্রী স্বঘোষিত ইসকন সদস্য মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশের অধিকাংশ জেলায় এসব সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ এক বছর আগেও এসব সংগঠনের নাম শোনেননি খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ইসকনের প্রথম সারির নেতাদের বাইরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের ওইসব নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৌশলে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রভাব বিস্তার করছে তারা।
জন্মাষ্টমী পরিষদে প্রভাবশালী আওয়ামী নেতাদের আধিপত্য
এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চট্টগ্রামের জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ। সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। কমিটির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে একদিন গোপন বৈঠক করেন প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ডে। ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এমন বৈঠকের একাধিক ভিডিও ও ছবি আমার দেশ-এর হাতে এসেছে।
এসব সংগঠনের নেতা অনেকের বিরুদ্ধেই ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জন্মাষ্টমী পরিষদের একাধিক নেতা নিয়মিতভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামে সফর করে আরএসএস ও বিজেপির আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এ কমিটির পূর্ণ তালিকা হাতে এসেছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন চন্দন কুমার, যিনি ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে আলিফ হত্যাকাণ্ডের সময় ইসকন সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দেন। তার আগে জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরেুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নেও সরাসরি অংশ নেন। ওই সময়কার একাধিক ছবি ও ভিডিও আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ইসকনের সক্রিয় নেতা হিসেবেও পরিচিত।
পরিষদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব পার্থ, এক সময় ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। ইসকনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি হঠাৎ করে বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী বনে যান ।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আর কে দাশ স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক শুকলাল দাশের ভাই। শুকলাল দাশ অতীতে জিয়া জাদুঘরের নাম পরিবর্তন ও নামফলক ভাঙার ঘটনায় আলোচনায় এসেছিলেন। কমিটির সহ–সভাপতি কাজল দাশ, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। অর্থ সম্পাদক রতন আচার্য আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইসকনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য। সহ-সভাপতি নিখিল নাথ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সহ-সভাপতি পদে আছেন। আইন সম্পাদক অশোক দত্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। এভাবে বর্তমান কমিটির অধিকাংশই একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ইসকনের সদস্য। স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে, ইসকনের প্রভাবেই তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ পেয়েছিলেন।
সীতাকুণ্ডের স্রাইন কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদেও ইসকনের প্রভাব
হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম সীতাকুণ্ডের স্রাইন কমিটির নিয়ন্ত্রণও এখন ইসকন-সংশ্লিষ্টদের হাতে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিয়ম ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এ কমিটির সভাপতি হন। বর্তমানে এর নেতৃত্বে রয়েছেন অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য, যিনি ইসকনের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও চিন্ময় দাশের প্রধান আইনজীবী। সহ-সভাপতি তাপস রক্ষিত কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতা, যুগ্ম সম্পাদক প্রণব কুমার দে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর, আর সমীর দাশগুপ্ত রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, যিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখারও সভাপতি। তিনি যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের নেতা। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্যও চিন্ময় দাশের আইনি টিমের সদস্য।
ভারতের উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ
সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ধর্মীয় সংগঠনের অধিকাংশই আগে ছিল নামসর্বস্ব; গত এক বছরে এগুলো হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তথাকথিত ক্লিন ইমেজধারী হিন্দু নেতাদের নেতৃত্বে এসব সংগঠন মূলত চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অনেকের সঙ্গে ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
পরিষদের উপদেষ্টা মিলন শর্মা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ব্যবসায়িক অংশীদার বলে জানা গেছে। হাসিনা আমলে তিনি পুলিশে নিয়োগ ও বদলিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। এছাড়া সদস্য মুনমুন দত্ত মুন্না ও বেল্টন কান্তি নাথ উভয়ই আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা।
৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় সহস্রাধিক কমিটি গঠন
গত এক বছরে ভারত, আওয়ামী লীগ ও ইসকনের অভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে অন্তত ১৩টি নামসর্বস্ব সংগঠন সক্রিয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলেও বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় এসব সংগঠনের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এসব কমিটির প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্যই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সক্রিয় নেতাকর্মী। এতে স্পষ্ট, এই ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
রাঙামাটি জেলা জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি; তিনি একাধিকবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সফর করেছেন এবং সেখানে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেও তার যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি বাবুল ঘোষ বাবুন আনোয়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আর উত্তর জেলার সভাপতি অশোক নাথ হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এসব সংগঠন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের আড়ালে ভারতের উগ্রবাদী নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য ধর্মীয় আবেগ উসকে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা এবং বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
প্রশাসনের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সিএমপি জনসংযোগ কর্মকর্তা অনিন্দিতা বড়ুয়া বলেন, ‘এসব ধর্মীয় সংগঠনের কমিটিতে কারা রয়েছেন, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কেউ যদি ধর্মীয় আবরণের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে।’

কৌশল পাল্টে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বিতর্কিত ও উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকন। পূজা উদযাপন পরিষদ ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের মতো প্রধান ধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি রামসেনা, শিবসেনার মতো নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দখল করে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এ কাজে সহযোগিতা করছে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা, যাদের অনেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন ইসকনের গোপন বৈঠকে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ড অংশ এখন এ সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত বৈঠক, যেখানে দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত ইসকন নেতারা অংশ নিচ্ছেন। বিশেষ করে ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এসব বৈঠকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে দেশজুড়ে অন্তত ১৩টি সংগঠনের নামে এক হাজারেরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে। ইসকনের কর্মীরা গেরুয়া পোশাক ত্যাগ করে সাধারণ ভক্তের বেশে অংশ নিচ্ছেন উৎসব-আয়োজনে, যাতে স্থানীয়ভাবে সন্দেহের মধ্যে পড়তে না হয়।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে কোনো সময় যে কোনো ইস্যুতে সংখ্যালঘু ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে দেশে ফের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার মতো শক্ত অবস্থান ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে তাদের। এই অপচেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।
গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে ইসকন সদস্যরা এসব সংগঠনের ছত্রছায়ায় নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের পাশাপাশি ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের নামে উগ্রবাদী এজেন্ডা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পটভূমি হতে পারে।
একই সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত ফেব্রুয়ারির শিব চতুর্দশী মেলায় ইসকনের প্রথম এ নতুন কৌশল ধরা পড়ে। রামসেনাসহ তিনটি সংগঠনের ব্যানারে একই ধরনের টি-শার্ট পরা শতাধিক তরুণের আচরণে ইসকনের ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ করেন গোয়েন্দারা। এরই মাঝে জন্মাষ্টমীর র্যালিতে হঠাৎ করে চিন্ময়ের মুক্তি চাই লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করে রাম সেনার সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে কয়েকজনকে আটক করা হলেও স্থানীয় ইসকন নেতাদের প্রভাবে তারা মুক্তি পেয়ে যায়।
সূত্র জানায়, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর যে কটি সংগঠন ও সংস্থার কাঁধে ভর করে ফেরার অপচেষ্টা করে ফ্যাসিবাদী শক্তি, তার অন্যতম ইসকন। এক মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৬টি মহাসমাবেশ করে সংগঠনটি, যেখানে অংশ নেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসব সমাবেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ নানা বায়বীয় অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে ইসকনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ঋষিকেশ গৌরাঙ্গ দাশের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। পরবর্তী সময়ে তার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নগুলো লিখে পাঠানোর পরও মেলেনি জবাব।
জানা গেছে, অবাস্তব কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে সরকারকে বেকায়দায়ও ফেলে ইসকনের তখনকার নেতা চন্দন ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ। সনাতনী জাগরণী জোট নামের তথাকথিত একটি সংগঠনের ব্যানারে ওইসব কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও এর নেপথ্যে সর্বশক্তি নিয়ে কাজ করে ইসকন। ভারতীয় মিডিয়ায় ইসকনের সে শো-ডাউনগুলো ফলাও করে প্রকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে হাসিনার পতনকে মৌলবাদের উত্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
তবে ইসকন নামধারী গেরুয়া সন্ত্রাসীরা নিজেদের মুখোশ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা প্রতিস্থাপন করায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয় চিন্ময় দাশের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের ওপর চড়াও হয় ইসকনের সন্ত্রাসীরা। পুলিশ প্রতিরোধ করতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করে ইসকনের সন্ত্রাসীরা। এতে তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়নি, তারপরও সামাজিক প্রতিরোধে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে তারা।
এ অবস্থায় ইসকন সরাসরি কার্যক্রম না চালিয়ে নিজেদের সদস্যদের বিভিন্ন নামসর্বস্ব সংগঠনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে রামসেনা, হিন্দুস্তান পরিবার, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, হিন্দু ছাত্র পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, বিশ্ব সনাতন মোর্চা, সনাতনী জাগরণ জোট ইত্যাদি। এসব সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা, যাদের অনেকেই আবার ইসকনের ঘনিষ্ঠ বা প্রত্যক্ষ সদস্য।
পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছেন প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের চিন্ময়পন্থি নেতারা। এদের নেতৃত্বে রয়েছেনÑ উজ্জ্বল মল্লিক, জুয়েল আইস, অজয় দত্ত, রুবেল দেব, অরূপ দাস রুবেল, পিংকু ভট্টাচার্য, পলাশ কুমার সেন, শুভ দাশগুপ্ত, কাঞ্চন নাথ, সেন পলাশ, তূর্জ রুদ্রসহ আরো কয়েকজন। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমন্বয় করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর, জহরলাল হাজারী, রুমকি সেনগুপ্ত ও নীলু নাগ। আওয়ামী লীগের পলাতক শিক্ষামন্ত্রী স্বঘোষিত ইসকন সদস্য মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশের অধিকাংশ জেলায় এসব সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ এক বছর আগেও এসব সংগঠনের নাম শোনেননি খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ইসকনের প্রথম সারির নেতাদের বাইরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের ওইসব নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৌশলে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রভাব বিস্তার করছে তারা।
জন্মাষ্টমী পরিষদে প্রভাবশালী আওয়ামী নেতাদের আধিপত্য
এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চট্টগ্রামের জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ। সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। কমিটির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে একদিন গোপন বৈঠক করেন প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ডে। ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এমন বৈঠকের একাধিক ভিডিও ও ছবি আমার দেশ-এর হাতে এসেছে।
এসব সংগঠনের নেতা অনেকের বিরুদ্ধেই ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জন্মাষ্টমী পরিষদের একাধিক নেতা নিয়মিতভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামে সফর করে আরএসএস ও বিজেপির আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে এ কমিটির পূর্ণ তালিকা হাতে এসেছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন চন্দন কুমার, যিনি ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে আলিফ হত্যাকাণ্ডের সময় ইসকন সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দেন। তার আগে জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরেুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নেও সরাসরি অংশ নেন। ওই সময়কার একাধিক ছবি ও ভিডিও আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ইসকনের সক্রিয় নেতা হিসেবেও পরিচিত।
পরিষদের কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব পার্থ, এক সময় ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। ইসকনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি হঠাৎ করে বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী বনে যান ।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আর কে দাশ স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক শুকলাল দাশের ভাই। শুকলাল দাশ অতীতে জিয়া জাদুঘরের নাম পরিবর্তন ও নামফলক ভাঙার ঘটনায় আলোচনায় এসেছিলেন। কমিটির সহ–সভাপতি কাজল দাশ, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। অর্থ সম্পাদক রতন আচার্য আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইসকনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য। সহ-সভাপতি নিখিল নাথ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সহ-সভাপতি পদে আছেন। আইন সম্পাদক অশোক দত্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। এভাবে বর্তমান কমিটির অধিকাংশই একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ইসকনের সদস্য। স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন রয়েছে, ইসকনের প্রভাবেই তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ পেয়েছিলেন।
সীতাকুণ্ডের স্রাইন কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদেও ইসকনের প্রভাব
হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম সীতাকুণ্ডের স্রাইন কমিটির নিয়ন্ত্রণও এখন ইসকন-সংশ্লিষ্টদের হাতে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিয়ম ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এ কমিটির সভাপতি হন। বর্তমানে এর নেতৃত্বে রয়েছেন অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য, যিনি ইসকনের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও চিন্ময় দাশের প্রধান আইনজীবী। সহ-সভাপতি তাপস রক্ষিত কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতা, যুগ্ম সম্পাদক প্রণব কুমার দে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর, আর সমীর দাশগুপ্ত রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, যিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখারও সভাপতি। তিনি যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের নেতা। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্যও চিন্ময় দাশের আইনি টিমের সদস্য।
ভারতের উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ
সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ধর্মীয় সংগঠনের অধিকাংশই আগে ছিল নামসর্বস্ব; গত এক বছরে এগুলো হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তথাকথিত ক্লিন ইমেজধারী হিন্দু নেতাদের নেতৃত্বে এসব সংগঠন মূলত চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অনেকের সঙ্গে ভারতের উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
পরিষদের উপদেষ্টা মিলন শর্মা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ব্যবসায়িক অংশীদার বলে জানা গেছে। হাসিনা আমলে তিনি পুলিশে নিয়োগ ও বদলিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। এছাড়া সদস্য মুনমুন দত্ত মুন্না ও বেল্টন কান্তি নাথ উভয়ই আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা।
৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় সহস্রাধিক কমিটি গঠন
গত এক বছরে ভারত, আওয়ামী লীগ ও ইসকনের অভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়নে অন্তত ১৩টি নামসর্বস্ব সংগঠন সক্রিয় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলেও বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় এসব সংগঠনের কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এসব কমিটির প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্যই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের সক্রিয় নেতাকর্মী। এতে স্পষ্ট, এই ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
রাঙামাটি জেলা জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি; তিনি একাধিকবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সফর করেছেন এবং সেখানে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেও তার যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি বাবুল ঘোষ বাবুন আনোয়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আর উত্তর জেলার সভাপতি অশোক নাথ হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এসব সংগঠন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের আড়ালে ভারতের উগ্রবাদী নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে, যার উদ্দেশ্য ধর্মীয় আবেগ উসকে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা এবং বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
প্রশাসনের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সিএমপি জনসংযোগ কর্মকর্তা অনিন্দিতা বড়ুয়া বলেন, ‘এসব ধর্মীয় সংগঠনের কমিটিতে কারা রয়েছেন, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কেউ যদি ধর্মীয় আবরণের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে।’

শ্রমিক ভিসায় গিয়ে রাশিয়া সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এবং পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ হওয়া অন্তত ১৫টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে আমার দেশ। তারা জানে না তাদের ছেলে-স্বামী কিংবা বাবার সর্বশেষ অবস্থা। জানা গেছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশ বিশেষ করে রাশিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম
২ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদীয় আসন বিন্যাস ইস্যুতে আদালত থেকে দেওয়া রায়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে আদালত থেকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করছে ইসি। কারণ তারা মনে করছে, তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে মামলা থাকল
২ ঘণ্টা আগে
দেশে থাকা সন্ত্রাসী, টোকাই, তরুণদের অর্থ দিয়ে এ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে তারা ছকও কষে ফেলেছেন। তবে এখানেও আওয়ামী লীগ দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ বলছে, ১৩ তারিখেই তারা ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। অন্যপক্ষ চায় গণতান্ত্রিক উপায়ে ধীরে ধীরে কাজ করতে। মানুষ যখন আওয়ামী লীগের
২ ঘণ্টা আগে
‘আমার পুতেরে (ছেলেরে) কেন পুড়াইয়া মারল, কী দোষ ছিল তার? আমার পুতেরে তোমরা আইন্যা দেও?’ এমন বুকফাটা আর্তচিৎকারে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বাসচালক জুলহাস মিয়ার মা সাজেদা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে আর্তনাদ করে তিনি বলেন, জুলহাস তাকে মানুষে
৩ ঘণ্টা আগে